মধ্যবিত্ত জীবনে নিত্যদিনের একঘেয়ে গল্পের সাথে একটু রোমান্স যোগ করতে চাই আমরা সবাই। ছাত্র হই বা হই চাকুরীজীবী- বছরে একটা অন্তত ট্যুর, প্রকৃতির মাঝে একটু অবকাশের সুযোগ প্রয়োজন আমাদের প্রত্যেকের। কিন্তু বেড়াতে গেলেই লাগে টাকা। হিসেব করে, একেবারে বাজেট মিলিয়ে কোথাও ঘুরতে যাওয়া খুবই কঠিন। আবার নূন্যতম সেই বাজেট গোছানোও একটা কাজ। কিন্তু সে যাই হোক, বেড়ানো তো আর বাদ দেয়া যাবে না! আসুন জেনে নিই, বেড়ানোর খাতে টাকা জমাবেন কীভাবে।
বাজেট তৈরি: বেড়ানোর বাজেট তৈরি সবচেয়ে জরুরি। আগে আপনাকে জানতে হবে খরচ কত। তারপর সেই হিসেবে জমাতে পারবেন। বাজেট তৈরিতে খেয়াল রাখুন-
কোথায় বেড়াবেন: প্রথমেই ঠিক করে নিন কোথায় বেড়াবেন। দেশে হলে খরচ একরকম। আবার দেশের বাইরে হলে আরেকরকম। জায়গার উপর নির্ভর করে অনেক কিছু। তাই আগে ঠিক করে নিন কোথায় বেড়াবেন।
কী কী করবেন: যেখানে আপনি বেড়াতে চান সেখানে আপনার সখের অনেক কিছু করার সুযোগ থাকতে পারে। যেমন কোন সমুদ্রসৈকতে গেলেন। সুযোগ আছে স্নোরকেলিংয়ের, স্কুভা ডাইভিংয়ের, প্যারাগ্লাইডিংয়ের। সব ধরনের আনন্দ উপভোগ করা বাজেটে সম্ভব নাও হতে পারে। ঠিক করে নিন, কী কী করবেন আর কী বাদ রাখবেন।
কীভাবে যাবেন: কলকাতায় প্লেনেও যাওয়া যায় আবার ট্রেনেও যাওয়া যায়। ঠিক করে ফেলুন আপনি কীভাবে যাবেন। কোনটায় খরচ কম হবে। যেখানে বেড়াবেন সেই জায়গার পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সম্পর্কে জেনে নিন।
খরচ কমান: বেড়ানোর জন্য আলাদা করে অর্থ উপার্জন তো সবসময় সম্ভব নয়। যা অর্থ উপার্জন করি তার থেকেই বাঁচিয়ে একটা ফান্ড করা যায়। সেক্ষেত্রে যা করতে পারেন-
যাতায়াত খরচ বাঁচান: আপনি হয়ত অফিসে রিক্সায় যাতায়াত করেন। সম্ভব হলে হেঁটে যাতায়াত করুন। কোন দাওয়াতে বা বাইরে কোথাও বেড়াতে গেলে চেষ্টা করুন সিএনজি এড়িয়ে চলতে। যে টাকা খরচ করবেন ভেবেছিলেন বা রোজ খরচ করতেন তা জমিয়ে ফেলুন একটা খামে।
বিল বাঁচান: বাসায় বিদ্যুৎ বিল বাঁচাতে পারেন আরেকটু সাবধান হলেই। অনলাইনে সংবাদপত্র পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলে দৈনন্দিন খবরের কাগজ পড়ার খরচ বাঁচাতে পারেন। আবার অনেকে বাসায় একটি টেলিভিশন আর একটি কম্পিউটার মনিটরে ডিশ সংযোগ নেন। একটি কমিয়ে ফেলতে পারেন।
খাওয়ার খরচ বাঁচান: অফিসে প্রায়ই বাইরে খাওয়া হয় কি? খরচ বাঁচান ঘরের খাবার খেয়ে। টিফিন বাটি আনতে শুরু করুন। অনেকেই লজ্জায় বাসা থেকে খাবার আনেন না। অথচ এই অভ্যাসটি আপনার স্বাস্থ্যকর খাওয়া এবং টাকা বাঁচানো উভয় ক্ষেত্রে দরকার।
সিগারেট ত্যাগ করুন: এ বছর একটি সুন্দর রোমাঞ্চকর ভ্রমণের জন্য না হয় ছেড়ে দিলেন ধূমপানের মত অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসটি। কি, মানতে পারছেন না? আপনার প্যাশন যদি হয় পাহাড়ে-পর্বতে ট্রাকিং করা, আকাশে উড়ে বেড়ানো সমুদ্রের উপর দিয়ে অথবা সেই ঝরনাটি আবিষ্কার করা যার কাছে কেউ যায়নি এখনো, তাহলে ধূমপান কেন আরও কোন বদভ্যাস থাকলে সেটি ছাড়াও কোন ব্যাপার নয়।
ইন্টারনেট ব্যবহার: আপনি কি বাসায় ব্রডব্যান্ড ব্যবহার করেন আবার একই সাথে মোবাইলেও ইন্টারনেট প্যাকেজ কেনেন? কোনটি আপনাকে বেশিক্ষণ সংযুক্ত রাখে বা কোনটি আসলে আপনার মূল প্রয়োজনটি মেটায়, সেটা রেখে অন্যটি বাদ দিন।
আলাদা সেভিংস একাউন্ট: আপনার বেড়ানোর একাউন্টটি আলাদা করে ফেলাই ভাল। মাস শেষে বেতন থেকে হয়ত কিছু টাকা আপনি সঞ্চয়ের চেষ্টা করেন। সেটা আলাদাই রাখুন। ব্যাংক একাউন্ট না হলেও অন্তত আলাদা মাটির ব্যাংক বা খাম রাখুন।
বিশেষ কোন কাজ: বেড়ানোর টাকা তুলতে খুচরা দুই একটা কাজ করতে পারেন। যেমন, আপনি যদি ছাত্র হন তাহলে আরেকটা টিউশনি করতে পারেন (যদি সুযোগ থাকে)। যদি চাকরিজীবী হন তাহলে অনলাইনে ছোটখাট একটা কাজ খুঁজে নিতে পারেন যা আপনার কাজের সাথে মিলিয়ে করা সম্ভব।
• শুধু খরচ কমালেই হবে না। সেই পরিমাণ টাকা জমিয়ে রাখতে হবে। আপনি বিভিন্ন দিক থেকে ব্যয় কমালেন কিন্তু কোন না কোনভাবে আসলে ব্যয় হয়েই গেল তাহলে তো লাভ নেই। তাই যখন যে খরচকে ‘না’ বলছেন সাথে সাথে সেটি ঢুকিয়ে ফেলুন সঞ্চয়ের খামে। আপনার স্বপ্নের খাম এটি। আর স্বপ্ন কিন্তু হেলাফেলা বা খামখেয়ালির বিষয় নয়।
বিবার্তা/জিয়া