খুলনা সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের অধীনে বন বিভাগের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে হাড়বাড়িয়া ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র। খুলনা থেকে এই ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রটির দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। সুন্দরবনের পরিবেশকে ঠিকঠাক রেখে পর্যটকদের বন ভ্রমণের জন্য নানান সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি বন্যপ্রাণী দেখারও ব্যবস্থা রয়েছে এখানে।
শুধু জঙ্গলের মধ্যে লাল ইটে বাঁধানো হাঁটা পথটি বেমানান মনে হতে পারে কারও কারও কাছে। সুন্দরবনে যারা একদিনের ভ্রমণ করতে চান তাদের জন্য আদর্শ এ জায়গাটি। হাড়বাড়িয়া ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রটি সুন্দরবনের গহীনে মনোরম একটি জায়গা। হাড়বাড়িয়া টহল ফাঁড়ির পাশেই এর অবস্থান।
ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রের সামনের খালটি কুমিরের অভয়ারণ্য। প্রায়ই লোনা জলের কুমিরের দেখা মেলে এখানে। তবে শীতেই কুমিরেরর দেখা মেলে বেশি। রোদ পোহাতে এ সময় এরা নদীর চরে ঘাপটি মেরে শুয়ে থাকে। হাড়বাড়িয়াতে মাঝেমধ্যে আরও দেখা মেলে সুন্দরবনের বিরল মায়া হরিণের। এখানকার খাড়িগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছরাঙাসহ নানান জাতের পাখি।
হাড়বাড়িয়া খালের পাড়ে কাঠের তৈরি জেটি বেয়ে উপরে উঠলে হাতের বাঁ দিকেই ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রের সোনালি নামফলক। একটু সামনে এগোলেই বন কার্যালয়। এরপরে ছোট্ট একটি খালের উপরে ঝুলন্ত সেতু। সামনের দিকে জঙ্গলের গভীরতা ক্রমশ বেশি। ঝুলন্ত সেতুটি পেরিয়ে সামান্য সামনে বিশাল এক পুকুর। পুকুরের মাঝে গোলপাতার ছাউনি সমেত একটি বিশ্রামাগার। ঘরটির চারপাশে বসার জন্য বেঞ্চি পাতা।
পুকুরের পাড় থেকে কাঠের তৈরি সেতু গিয়ে পৌঁছেছে ঘরটিতে। বন বিভাগের অপারেশনাল দক্ষতা বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭-৯৮ সালে বীর শ্রেষ্ঠ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্মরণে খনন করা হয় পুকুরটি।পুকুরটিকে হাতের বাঁয়ে রেখে সামনে চলে গেছে ইট বিছানো পথ। অল্প দূরত্বের এ পথটির শেষ হয়েছে কাঠের তৈরি হাঁটা পথে। ঠিক এ জায়গাটিতেই রয়েছে তিনতলাবিশিষ্ট একটি জঙ্গল পর্যবেক্ষণ টাওয়ার।
কাঠের তৈরি এ টাওয়ারের উপর থেকে জঙ্গলের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এখান থেকে প্রায় এক কিলোমিটারের কাঠের তৈরি হাঁটা পথটি গিয়ে শেষ হয়েছে গভীর জঙ্গলে। এ জায়গাটিতে বাঘের আনাগোনা বেশি। প্রায়ই বাঘের দেখা মেলে এখানে। এছাড়া অন্যান্য বন্য প্রাণীও রয়েছে এখানে।
কীভাবে যাবেন
মংলা বন্দর থেকে সকালে হাড়বাড়িয়া গিয়ে সন্ধ্যার মধ্যেই আবার ফিরে আসা যায়। খুলনা কিংবা বাগেরহাট থেকে বাসে আসতে পারেন মংলা। মংলা থেকে ইঞ্জিন বোটে হাড়বাড়িয়া যেতে সময় লাগবে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। এখান থেকে ৫-৩০ জন চলাচলের উপযোগী ইঞ্জিন নৌকা পাওয়া যায়। সারাদিনের জন্য ভাড়া ১৫০০-৩৫০০ টাকা। নৌকাগুলো ছাড়ে মংলা ফেরি ঘাট থেকে।
কোথায় থাকবেন
মংলায় থাকার জন্য ভালো ব্যবস্থা হলো বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের মোটেল পশুর (০৪৬৬২-৭৫১০০)। এ মোটেলে নন-এসি দ্বৈত কক্ষের ভাড়া ৯০০ টাকা এবং এসি দ্বৈত কক্ষের ভাড়া ১৬০০ টাকা। এখানকার ৫০ আসনের রয়েল বেঙ্গল রেস্তোরাঁয় পাওয়া যাবে ভালো মানের খাবার।
সাবধানতা
হাড়বাড়িয়া যেতে হবে পশুর নদী হয়ে। এটি বেশ বড় নদী। তাই ভালো দেখে ইঞ্জিন নৌকা নিন। আগেই জেনে নিন নৌকায় পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট আছে কি না। এছাড়া আগেই বলা হয়েছে হাড়বাড়িয়া ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রটি বাঘের অভয়ারণ্য। তাই কাঠের তৈরি হাঁটা পথের বাইরে কোনোভাবেই জঙ্গলে ঢুকবেন না। জঙ্গলে প্রবেশের আগে বন কার্যালয় থেকে অস্ত্রধারী বনরক্ষী নিয়ে নিন।
বিবার্তা/জাকিয়া/যুথি