তুলসির ভেষজ গুণ অসামান্য। সেই সঙ্গে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে এর আধ্যাত্মিক গুরুত্বও অপরিসীম।
হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, প্রতিটি গৃহে তুলসি গাছ থাকা প্রয়োজন। এই গাছ গৃহকে রোগশূন্য রাখে। এমনকি একথাও বলা হয়, তুলসীকে স্বয়ং যমও সমঝে চলেন। তুলসি সাধারণত বৈষ্ণব বিশ্বাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। সেখানে তুলসির মহিমা বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু হিন্দু পরম্পরায় বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে তুলসিকে ঘিরে। জেনে নিন সেগুলো-
১. তুলসি গাছের প্রতি কোনো রকম অশ্রদ্ধা প্রদর্শন হিন্দুমতে পাপ বলে গণ্য হয়।
২. তুলসি পাতা চিবোনোর ব্যাপারে কড়া নিষেধ রয়েছে হিন্দু ধর্মে। তুলসি পাতা সেবন করতে হলে তা পানিসহ গিলে ফেলাই বাঞ্ছনীয়। এই বিশ্বাসের পেছনে কিছু বৈজ্ঞানিক যুক্তিও আছে। যেমন- তুলসি পাতায় থাকা বেশ কিছু ধাতু দাঁত ও মাড়ির ক্ষতি করতে পারে।
৩. তুলসি পাতা শিবলিঙ্গে প্রদানের ব্যাপারে কড়া নিষেধ রয়েছে হিন্দু পরম্পরায়। পুরাণ অনুসারে, তুলসি ছিলেন মহাপরাক্রমশালী অসুর জলন্ধরের পত্নী। দেববরে অজেয় হয়ে জলন্ধর বিরাট প্রতিপত্তি লাভ করেন। এমতাবস্থায় শিব ও বিষ্ণু ছলনার আশ্রয় নিয়ে জলন্ধরকে হত্যা করেন। ক্ষুব্ধ তুলসিকে সন্তুষ্ট করতে বিষ্ণু তাঁকে বর দেন। তিনি বিষ্ণুপদে স্থায়ী স্থান লাভ করেন। কন্তু শিবকে ক্ষমা করেননি তুলসি। তিনি শিবকে অভিশাপ দেন। সেই থেকেই শিবপূজায় তুলসি পাতা নিষিদ্ধ হয়।
৪. হিন্দু পরম্পরা অনুযায়ী, রবিবার, একাদশী তিথিতে এবং চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণের সময়ে তুলসি পাতা ছেঁড়া নিষিদ্ধ।
৫. ঘরের ভেতরে তুলসি গাছ স্থাপন নিষিদ্ধ। এখানেও পৌরাণিক কাহিনি বিদ্যমান। স্বামী জলন্ধরের মৃত্যুর পর তুলসিকে বিষ্ণু বরদান করলে, বিষ্ণুর সঙ্গে তুলসির সখ্য গড়ে ওঠে। বিষ্ণু তাঁকে চিরসখী হিসেবে মর্যাদা দেন। তুলসি বিষ্ণুকে অনরোধ করেন, তাঁকে গৃহে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু বিষ্ণু জানান, তাঁর গৃহে লক্ষ্মী রয়েছেন, সেখানে তুলসি থাকতে পারেন না। ফলে তুলসির স্থান হয় গৃহের অঙ্গনে।
৬. শিবের মতো গণেশের পূজাতেও তুলসি নিষিদ্ধ। এর পেছনেও কাজ করছে পৌরাণিক বিশ্বাস। কথিত আছে, একদা তরুণ গণপতিকে অরণ্যে ধ্যানস্থ দেখে তাঁর প্রেমে পড়েন তুলসি। কিন্তু গণেশ জানান, তিনি ব্রহ্মচারী। প্রেম বা বিবাহ তাঁর পক্ষে অসম্ভব। তুলসি তাঁকে অভিশাপ দেন এই বলে যে, গণেশের ব্রহ্মচর্য স্থায়ী হবে না। গণেশ ও পাল্টা অভশাপ দেন তুলসিকে। সেই অভিশাপেই জলন্ধর অসুরের সঙ্গে বিবাহ হয় তুলসির। তুলসি গণেশের কাছে ক্ষমা চান। গণেশ জানান, তুলসি দেবত্বপ্রাপ্তা হবেন। কিন্তু তাঁর পূজায় কখনওই তুলসি ব্যবহৃত হবেন না।
বিবার্তা/নিশি