বাজলো তোমার আলোর বেণু...। শুভ মহালয়া আজ। পিতৃপক্ষের শেষে দেবীপক্ষের শুরু। মহালয়া দুর্গা দেবীর আগমনী বার্তা। মা আজ পা রেখেছেন মর্ত্যলোকে। বছর ঘুরে আবারও উমা দেবী আসছেন তার বাপের বাড়ি।
হিমালয়ের কৈলাশে তার স্বামী শিবার বাস। সেখান থেকেই সুদূর পথ পাড়ি দিয়ে আসেন সমতল ভূমির এই বাংলায়। সঙ্গে নিয়ে আসেন গণেশ, কার্ত্তিক, লক্ষ্মী আর সরস্বতীকে। প্রতিবছর শরৎকালে দেবী দুর্গার এই আগমন হয় নিজ ভূমিতে।
হিন্দু শাস্ত্রমতে দেবী দুর্গার আবাহনই মহালয়া হিসেবে পরিচিত। আজ মন্দিরে মন্দিরে চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে দেবীকে আহ্বান করা হবে। এভাবেই মর্ত্যলোকে আবাহন ঘটবে দেবী দুর্গার। মন্দিরে মন্দিরে উচ্চারিত হবে ‘যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেন সংস্থিতা, নমস্ত্যৈ নমস্ত্যৈ নমস্ত্যৈ নমঃ নমঃ’।
ষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও মূলত আজ থেকেই পূজারীরা দুর্গা মায়ের আগমন ধ্বনি শুনতে পান। শাস্ত্রীয় বিধান মতে, মহালয়ার দু’টি পর্ব রয়েছে, একটি পিতৃপক্ষ, অন্যটি দেবীপক্ষ। অমাবস্যা তিথিতে পিতৃপক্ষের শেষ হয়, আর প্রতিপদ তিথিতে শুরু হয় দেবীপক্ষের। আজ মহালয়া দিয়ে আরম্ভ হচ্ছে সেই দেবীপক্ষ।
এদিন গঙ্গাতীরে প্রার্থনা করে ভক্তরা মৃত আত্মীয়স্বজন ও পূর্বপুরুষদের আত্মার মঙ্গল কামনা করেন। মহালয়া দুর্গোৎসবের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পৃথিবীর অধীশ্বর রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। বসন্তকালে তিনি এই পূজা আয়োজন করায় দেবীর এ পূজাকে বাসন্তী পূজাও বলা হয়।
শ্রীরামচন্দ্র শরৎকালে সীতাকে উদ্ধার করতে যাওয়ার আগে অকালে দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন। তাই এ পূজাকে অকালবোধনও বলা হয়। ধর্মমতে, মহালয়ার দিনে দেব-দেবীকুল দুর্গাপূজার জন্য নিজেদের জাগ্রত করেন। আজ থেকে ঢাকের কাঠি, ঘণ্টা-কাঁসার আওয়াজ, মঙ্গল শাঁখ ও উলু ধ্বনিতে কেঁপে উঠবে প্রতিটি মন্দির। দেবী দুর্গাকে সবাই মা দুর্গা, পার্বতী, মহামায়া, কৈলাশি, দুর্গতিনাশিনী, পরমা প্রকৃতি, নারায়ণী, মাহেশ্বরী ইত্যাদি নানা নামে অভিহিত করেন।
মায়ের আগমনে চারদিকে আনন্দ আয়োজন সম্পন্ন করার তাড়া এখন সবার। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। খুশির আনন্দ ছুঁয়ে যাচ্ছে ঘরে ঘরে, সব বয়সী মানুষের মনে।
বিবার্তা/জিয়া