সাবধান আজ প্রেমের প্রস্তাব পেতে পারো (অন্য গল্প)

সাবধান আজ প্রেমের প্রস্তাব পেতে পারো (অন্য গল্প)
প্রকাশ : ২২ ডিসেম্বর ২০১৫, ১২:৩৪:২১
সাবধান আজ প্রেমের প্রস্তাব পেতে পারো (অন্য গল্প)
বিবার্তা ডেস্ক :
প্রিন্ট অ-অ+

কম্পিউটারের যেমন সাইন আপ হতে একটু সময় লাগে, ঠিক তেমনি অফিসে এসে আমারও সাইন আপ হতে কিছুটা সময় লাগে! কি রকম?

এই যেমন কম্পিউটারের সংযোগ দিতে হয়, স্টার্ট বাটন প্রেস করতে হয়, পাসওয়ার্ড দিতে হয়, তারপরে সে ব্যাবহার উপযোগী অবস্থায় আসে।

ঠিক তেমনি, অফিসে কাজ শুরুর আগে আমারও কয়েকটা ব্যাপার আছে নিজেকে কাজের উপযোগী করে প্রস্তুত করতে।

এই যেমন মেইল চেক করা, পারসোনাল আর অফিসিয়াল। পেপার দেখা (পড়া নয় অবশ্যই, ওটা আধ শোয়া হয়ে বা গা এলিয়ে দিয়ে পড়াতেই বেশী উপভোগ্য)।

সহকর্মীদের সাথে একটুখানি আড্ডা দেয়া ও কিছু গল্প করা। আর সব শেষে যেটা দরকার। কম্পিউটারের পাসওয়ার্ডের মত, সেটা হল এক মগ ব্ল্যাক কফি। ওটাই সাইন আপের আসল পাসওয়ার্ড!

তো সব প্রাথমিক পর্যায় শেষ করে, আরাম করে চেয়ারে পিঠটা এলিয়ে দিয়ে ব্ল্যাক কফির ধোঁয়া ওঠা মাদকতা উপভোগ করছি...... এমন সময় বউয়ের ফোন।

না অবাক হইনি। দুজনের যে যখনই অফিসে পৌছাই, গিয়ে একটা ফোন দেয়ার অলিখিত আর নিয়মিত রীতি আছে আমাদের। মান-অভিমান হলে অবশ্য ভিন্ন কথা। সে যাই হোক, ফোন দিয়ে আমাকে সাবধানে থাকতে বলল!! কেন?

খুবই অবাক হয়ে জানতে চাইলাম কেন কি হয়েছে?

তিনি যা বললেন, তা শুনে আমি অট্টহাসিতে ফেটে পরলাম! সাথে সাথে অন্যান্য সহকর্মীদেরও ডেকে জানিয়ে দিলাম ঘটনাটা। কি ঘটনা?

তিনি অফিসে গিয়ে পেপারের রাশিফলে দেখতে পেয়েছেন

আজ ফেসবুকে আমার প্রেমের শুভ সুচনা হতে পারে!

উহ কি আনন্দ, কি উচ্ছ্বাস আর কি যে সুখের বেদনা! কিভাবে বোঝাই?

সাথে সাথে বৌকে গান শোনালাম

মনের অনুরাগে বাজে এ কোন রাগিণী? কাছে এসেও, কেন আসতে পারোনি, আমি আজও বুঝিনি”

বৌ গেল ক্ষেপে! খুব খুশি না, নতুন প্রেমের সম্ভাবনায়! রেগে-মেগে তুমি গিয়ে তুইয়ে ঠেকলো।

‘তুই আজকে তোর ফেসবুক চালু করবিনা, মনে থাকে যেন। কাজে মন দে’ আল্লাহ হাফিজ।

আহ, ব্ল্যাক কফির মাঝে যেন এক চামচ মধু পরশ পরলো! যতোটা তাড়িয়ে তাড়িয়ে কফি উপভোগ করি তার চেয়ে দ্বিগুণ সময় নিয়ে কফির স্বাদ, মাদকতা আর শীতের উষ্ণতা উপভোগ করলাম।

তবে এবার ফেসবুকে যাই? আমি রোমাঞ্চিত! ভীষণ ভীষণ রোমাঞ্চিত। নতুন প্রেমের সমূহ সম্ভাবনায়! মন খুশিতে নাচিরে আজি, নাচিরে আজি, নাচিরে!! এমনই অবস্থা।

এখন ফেসবুক খুলবো... আচ্ছা তার আগে একবার বৌকে ফোন দিয়ে নিশ্চিত হই তিনি কি করেন? ফোন দিলাম। নাহ মুড ভালো। খবর নিয়ে, দুরুদুরু বুকে আর অনেকটা খুশিতে ফোন রেখে দিলাম।

ইউজার নেইম আর পাসওয়ার্ড দিয়েই রেখেছিলাম, শুধু এনটার প্রেস করলেই ফেসবুক ওপেন হবে। প্রেস করলাম। ফেসবুক ওপেন হচ্ছে, আমার টেনশন বাড়ছে, ক্ষীণ একটু আনন্দও! আর বেশ কিছুটা উত্তেজনা!

কে হবে সেই সুন্দরী, যে দেবে আমায় প্রেমের প্রস্তাব? আমি রাখবো না ফিরিয়ে দেব? রাখলে কোন পর্যায়ে রাখবো, কি বলবো আর কতটা এগোবো! আর ফিরিয়ে দিতে চাইলে সেটা কিভাবে? এই অভিজ্ঞতা তো নাই। ইস কিজে করি?

আবার আচ্ছা, প্রেমের প্রস্তাব কি একটাই পাবো না একাধিক? সেকি বিবাহিত হবে না অবিবাহিত? আমার ফ্রেন্ড লিস্টের সুন্দরীরা তো সবই বিবাহিত! তবে তাদের মধ্যে থেকে কি কেউ? কিন্তু কেন, তাদের দেখেতো মনে হয়না যে তাদের কেউ আমার প্রেমে-ট্রেমে পরেছে!

এইসব উত্তেজনাকর মুহূর্ত আর সুখ-দুঃখের সাতকাহন ভাবতে-ভাবতে ফেসবুক ওপেন হল। উপরের ডান দিকে কয়েকটি লাল মার্ক। কয়েকটি নোটিফিকেশন আর দুই-একটি ইনবক্স মার্ক! উহ, তবে কি এসে গেছে; প্রেমের প্রস্তাব?

আচ্ছা আগে নোটিফিকেশন দেখি। ইনবক্স পরে। ওটা থাকুক আনন্দের মেঘ হয়ে যেন একটু পরে সুখের বৃষ্টি ঝরে। যেন ভিজে যাই নতুন প্রেমের আহ্বানে, আর ভেসে যাই ভালোবাসার জোয়ারে!

নোটিফিকেশন দেখে, আবার লগ আউট করলাম। নাহ এখনই ইনবক্স দেখে সারাদিনের কাজের বারোটা বাজাতে চাইনা। আর অজানা আনন্দটুকু থাক আগামীর সুখ হয়ে! তাই একটু পরে।

কিন্তু না, কাজে তো মন বসেনা। কি বোর্ডে আঙুল দিলেই, সে আঙুল অজান্তেই কি বোর্ডের F বাটনে চলে যায়! “কাজেতে মন বসেনা, ফেসবুকে সুখ অজানা, সে কথা কইতে পারিনা” কি করি এখন?

কাজ আগে না আগে নতুন প্রেমের আহ্বান! কোনটা? ভাবছি আর ভাবছি। নাহ আগে প্রেমটাই দেখি। তাই আবারো ফেসবুক ওপেন করলাম।

ইনবক্স চেক করলাম। নাহ খুবই হতাশ হলাম। কোন প্রেমের প্রস্তাব নেই! ভালো মনটা বিষাদে ছেয়ে গেল! বড়ই হতাশ হয়ে আবারো লগ আউট করলাম। কিন্তু কাজে মন বসেনা আর। একটু পরে-পরে ফিরে যাই ফেসবুকে। কে কখন ইনবক্স করে কে জানে?

শেষে আবার উত্তর না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে গিয়ে অন্য কোথাও নাও ভেড়াবে! তাই আজ নাহয় ফেসবুক ওপেনই থাকুক! সকল সুন্দরীদের জন্য উন্মুক্ত! কার কখন আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিতে ইচ্ছা হয় কে জানে? ফ্রেন্ড লিস্টের সকল সুন্দরীদের প্রোফাইল নিয়ে বিশ্লেষণে বিশ্লেষণে বিশেষজ্ঞ হয়ে যাওয়া! প্রত্যেকের দুঃখ-সুখের স্ট্যাটাস পরে মনে-মনে কতশত কল্পনার রঙিন ঘুড়ি ওড়ানো!

হতাশা হতাশা আর হতাশা সঙ্গী করে, সকাল-মধ্য দুপুর-দুপুর-শেষ দুপুর-বিকেল গড়িয়ে প্রায় সন্ধা। অফিস থেকে বাসায় ফেরার সময় হয়ে এলো। কিন্তু প্রেমের প্রস্তাব আর এলোনা! কত শত বার যে এক একজনের প্রোফাইলে ঢোকা হয়েছে সেই হিসেব কম্পিউটারও হয়তো জানেনা! আর কত রকমের হিসেব মেলানো!

তবে কি চলে যাবো বাসায়? নাহ আজ নাহয় একটু পরেই যাই? দেখিনা সন্ধার পরে হয়তো আসতে পারে প্রেমের প্রস্তাব! সারাদিন ভেবেছে, চিন্তা করেছে, কথা সাজিয়েছে, কিভাবে বলবে সেই চর্চা করেছে, মনে-মনে ভঁয় পেয়েছে, আরও কত কি যে করেছে কে জানে?

তাই হয়তো সন্ধার পরে দিতে পারে, নামাজ পরে বুকে ফুঁ-টু দিয়ে! তবে একটু অপেক্ষা করি! বাসায় জানিয়ে দেয়া হল, আজ ফিরতে দেরি হবে। অফিসে অনেক কাজ। কখন বের হব জানিনা!

আবারো অপেক্ষা আর অপেক্ষা। ফেসবুক খুলে ইনবক্সের দিকে চাতক পাখির মত তাকিয়ে থাকা আর ফ্রেন্ডলিস্টের সুন্দরীদের প্রোফাইল ঘেঁটে ঘেঁটে সব মুখস্ত করে ফেলা। সেই সাথে এটা ওটা ভাবা। কে হতে পারে, কে? কে?

অবশেষে এই শীতের রাত ৯ টায় অফিস থেকে বের হওয়া। সাথে সঙ্গী একরাশ হতাশা আর আশা ভঙ্গের বুক ভাঙা বেদনা। শেষমেশ সেই ঘরেই ফেরা। আরাম-আহ্বান-আদর-উষ্ণতা খুঁজে পাওয়া সেই ঘরে গিয়ে আর নিজের গড়া শান্তির আবাসে ফিরেই।

ওসব রাশি, ভাইবার, স্কাইপি, হোয়াটস অ্যাপ, ফেসবুক, নোটিফিকেশন, লাইক, কমেন্ট আর ইনবক্স? সব মিথ্যে মরীচিকা। ক্ষীণ উত্তেজনা আর অযথা ধুসরতায় মন রাঙানো।

শেষ উপলব্ধি এই যে... পরেতে নয়, ঘরেতেই আসল সুখ। আপনি-আমি দেখতে পাইনা তাই। বুঝতে পারছিনা তাই। কারণ ঘরের প্রতি আমাদের আবেগ আর উপলব্ধিটা কমে গেছে আজকাল।  কেউ কিছু বুঝলেন?  ধন্যবাদ।

সজল জাহিদের ব্লগ থেকে..
 

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com