অন্তঃসত্ত্বার সমতুল শব্দ অন্তরাপত্যা

অন্তঃসত্ত্বার সমতুল শব্দ অন্তরাপত্যা
প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৪:১৩:৪৫
অন্তঃসত্ত্বার সমতুল শব্দ অন্তরাপত্যা
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+
বহুব্রীহি সমাসের সূত্র মতে, অন্তঃসত্ত্ব যার তিনিই অন্তঃসত্ত্ব। সহজ কথায়, যার মধ্যে বল আছে তিনিই অন্তঃসত্ত্ব। কিন্তু অন্তঃসত্ত্বা মানে যে স্ত্রীর গর্ভে ভ্রুণ আছে (অক্ষণে আপনার সহধর্মিনী অন্তঃসত্ত্বা হইয়াছে- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর)। তিনি সসত্ত্বা বা গর্ভিনী নামেও পরিচিত।
 
বাংলা ভাষায় অন্তঃসত্ত্বার প্রতিশব্দ হিসেবে ‘সন্তানসম্ভবা’ শব্দটি বেশ চালু হয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন ‘সন্তানসম্ভাবনা’ থেকেই ব্যাকরণহীন কায়দায় ‘সন্তানসম্ভবা’ শব্দটি চালু হয়েছে। এখন যার লাগাম ধরা আর সম্ভব নয়।
 
অন্তর (ভিতর) + সত্ত্ব (প্রাণী)= অন্তঃসত্ত্বা। বহুব্রীহি সমাসে ‘যার গর্ভে জীব আছে’ মানে অন্তঃসত্ত্বা। অন্তঃসত্ত্বা শব্দের আরেকটি অর্থ হচ্ছে ভল্লাতক বা ভেলাগাছ। অন্তরাপত্যা শব্দের অর্থও গর্ভবতী। ফারসিতে অন্তঃসত্ত্বার সমতুল শব্দ যন বরদার। আর বাংলায় অন্তঃসত্ত্বার সমতুল আরেকটি শব্দ হচ্ছে অন্তরাপত্যা (সনকা অন্তরাপত্যা তাহা সাধু জানে সত্য- কেতকাদাস)। 
 
আবার অন্ন শব্দ অদ্ ধাতু থেকে নিষ্পন্ন, এটার অর্থ খাদ্য। ধারণা করা হয়, ভাত বাঙালির প্রধান খাদ্য হবার কারণে শব্দটির অর্থ সংকুচিত হয়ে নতুন অর্থ দাঁড়িয়েছে ‘ভাত’। অন্নপথ্য, পলান্ন ইত্যাদি শব্দ তার প্রমাণ। 
 
অন্ন শব্দের মূল অর্থ হল ‘যা দ্বারা বাঁচে’। আবু ইসহাক তাঁর ‘সমকালীন বাংলা ভাষায় অভিধানে নানা প্রকার অন্নের কথা লিখেছেন। এগুলো হল অনূঢ়ান্ন, অব্যুঢ়ান্ন, আমান্ন, উচ্ছিষ্টান্ন, উদরান্ন, কদন্ন, কৃতান্ন, খেচরান্ন, গণান্ন, ঘৃতান্ন, নবান্ন, পরমান্ন, পরান্ন, পর্যুষিতান্ন, পলান্ন, পায়সান্ন, ভিক্ষান্ন, ভৃষ্টান্ন, ভোজ্যান্ন, মিষ্টান্ন, শাকান্ন, শূদ্রান্ন, শেষান্ন, ষষ্ঠিকান্ন, সিদ্ধান্ন ও হবিষ্যান্ন।
 
এক সময় অন্ন বলতে যে কোন খাবার বোঝাতো। কিন্তু শব্দার্থের সংকোচের কারণে এখন অন্ন বলতে শুধু ভাতকেই নির্দেশ করে (খেয়ো না একদন্ন হালালী অন্ন খাও- কাজী নজরুল ইসলাম; অন্নের তরে ঘুঁটে বেচা আমার সম্বল- ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর; অন্ন ত্যাগ করিয়া, গণ্ডুষ করিয়া উঠিয়া দ্বার খুলিয়া দিল- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়; অন্ন ছচি করিলেক চঞ্চল বালকে- জয়নন্দ, বাঙ্গালির ঘরে অন্ন না থাকতে পারে কিন্তু সোনার পাথরবাটির অভাব নেই- জ্যোতিভূষণ চাকী)। 
 
শাস্ত্রে অন্নের অর্থে বলা হয়েছে ‘যা কিছু, উদর পূর্ত্তি করে, তা-ই অন্ন’। সংস্কৃত এক শ্লোকে বলা হয়েছে:
‘পরান্নং প্রাপ্যে মূঢ়, মা প্রাণেষু দয়াং কুরু।
পরান্নং দুর্লভং লোকে, প্রাণাঃ জন্মণি জন্মণি।’
 
অর্থ্যাৎ পরের অন্ন এই পৃথিবীতে পাওয়া যায় না। অতএব, হে মূর্খ! যত পারো খাও! আর প্রাণ? সে তো জন্মজন্মান্তরেও পাওয়া যায়।’
 
ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর লিখেছেন ‘অন্ন দিয়া অন্নপূর্ণা বাঁচাইলে প্রাণ। বাঁচাও শিবের ক্রোধ নাহি পরিত্রাণ’। তিনি শব্দটি ভাত (অন্নদা সকলে অন্ন দেন) ও শস্য অর্থে ব্যবহার করেছেন (সহরের যত অন্ন কটাক্ষে হরিল, হাটঘাট বাজারে অন্ন নাই)। বোঝা যাচ্ছে, এক সময় শহর অর্থে ‘সহর’ বানানটিও বাংলা ভাষায় প্রচলিত ছিল।
 
অন্ন শব্দের অর্থ সংকুচিত হয়ে যাবার কারণে মিষ্টান্ন দিয়েও এখন মিষ্টিভাত বা মিষ্টিযুক্ত ভাত বোঝায় না।
 
জিয়াউদ্দিন সাইমুমের ব্লগ থেকে
 
বিবার্তা/জিয়া
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com