টাকা ব্যাংকে রাখলে লাভ হয়। এটা আপনারা শুনেছেন। অনেকে হয়তোবা রেখে লাভও পেয়েছেন। কেউ কেউ হয়তো আবারও রাখার কথা ভাবছেন। তবে আমার কথা যদি শোনেন, তবে বলবো, ‘টাকা ব্যাংকে রাখার চেয়ে বালিশের তলে রাখেন, কিংবা তোশকে ভরে সেলাই করে, ’বনের রাজা ওসমানের’ ‘মতো’।
ব্যাপারটা তাহলে খুলেই বলি।
ধরি আপনার হাতে এখন এক লক্ষ টাকা আছে। আপনি ব্যাংকে রাখবেন। ১মাসের জন্য। ০৩ জানুয়ারি, ২০১৬, রবিবার রিকশা ভাড়া দিয়ে ব্যাংকে গেলেন। নতুন বছরের প্রথম দিনে একটা ভাল কাজ করবেন, নিজের জন্য, পরিবারের জন্য। শুনলেন, সুদের হার ৬%(এটাই এ মুহূর্তে ভালো রেইট, অনেক ব্যাংক এর চেয়েও কম দেয়।
যাই হোক, অন্তত: ৫০০ টাকা তো পাওয়া যাবে, এই ভেবে আপনি করলেন এফডিআর। ব্যাংক আপনার মূল্যবান ঘন্টাখানেক সময় খেয়ে আপনাকে ধরালো একটা সই করা কাগজ। ব্যাংকাররা যেটাকে বলে এফডিআর রিসিট।
০২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ আপনি যাবেন ব্যাংকে। এফডিআর ভাঙাতে। ব্যাংক আপনাকে কত টাকা দেবে জানেন? ****** টাকা। আপনি তো রেগেমেগে আগুন। ক্ষোভে ’মাননীয় স্পিকার’ হয়ে যাবেন ম্যানেজার সাহেবের রুমে। ‘এর মানে কি’?
ম্যানেজার সাহেব আবার নিপাট ভদ্রলোক, অমায়িক ব্যবহার। উনি বেয়ারা ডেকে আপনার জন্য কফি অর্ডার করবেন, তারপর আপনাকে বুঝিয়ে দেবেন হিসাব:
১০০,০০০ টাকায় ৬% হারে আপনি সুদ পেয়েছেন ৫০০ টাকা।
৫০০ টাকা সুদের উৎসে কর ১৫% হারে ৭৫ টাকা। (ধরে নিচ্ছি আপনার টিআইএন নাই, থাকলে উৎসে কর হতো ১০% হারে ৫০ টাকা।)
আর আপনার হিসাবে আবগারী শুল্ক কাটা হবে ৫০০ টাকা।
অর্থাৎ আপনি পাবেন (১০০,০০০+৫০০-৭৫-৫০০)=৯৯৯২৫টাকা। ম্যানেজার ভদ্রলোক অতি বিনয়ের সাথে আপনাকে জানাবেন যে, আপনাকে ব্যাংক ঠিকমতোই সুদ দিয়েছে। সরকারের নির্ধারিত চার্জ না নিয়ে ওনার কোন উপায় নেই। আপনি ব্যাপারটা নিশ্চয়ই বুঝবেন। না বুঝে উপায় থাকবে না আপনার।
অর্থাৎ আপনার লস হবে নগদ ৭৫ টাকা, যাওয়া আসার রিকশা ভাড়া, আপনার মূল্যবান কিছু কর্মঘন্টা।
রাজ্জাকের ব্লগ থেকে..