যারা পাবলিক মেসে থাকে তাদের জীবন কাটে যন্ত্রণাতে না পারে কাউরে কইতে না পারে সইতে। তারপরেও তারা চলে ভিন্দাস, পুরাই ভিন্দাস !
ব্যাচেলররা যখন বাসা খোঁজে তখন তাদের লাইফের সবচেয়ে খারাপ সময় যায়। কোথাও টু লেট দেখে ফোন করলে বাড়িওয়ালা ঝাড়ি মারে ব্যাচেলর দিবে না, আর ব্যাচেলর দিলেও দুনিয়ার সব শর্ত জুড়ে দেওয়া থাকে। ছাদে যাওয়া যাবে না, বারান্দায় যাওয়া যাবে না, জোরে গান বাজানো যাবে না ব্লা ব্লা ব্লা। প্রতিটি বাড়ির মালিক মনে করেন, তার মেয়ে যেন পীর সাহেবের মেয়ে। কিন্তু ভালো করে খোঁজ নিলে দেখা যায় ভিতরে ভিতরে প্রেম তো করে না, সাথে রুম ডেটও দেয়। ব্যাচেলররা ভাড়া দিতে দেরি করলে বাড়ি ওয়ালার যে কি বাংলা গালি শুনতে হয় তা কল্পনার বাইরে। এখন আর গালি ব্যাচেলরদের গায়ে লাগে না, বাড়িওয়ালা যখন তাদের গালি দেয় তখন তারাও মনে মনে বাড়িওয়ালার বউরে গালি দেয়।
তারপর আরেক সমস্যা হইল খালা (বুয়া)। খালারা এমন ভাব ধরে যেন ব্যাচেলররা এতিমখানায় থাকে আর তিনি প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন। খালা থাকলে গ্যাস নাই, গ্যাস থাকলে খালা নাই, আর গ্যাস খালা দুইটা থাকলেও মাঝে মাঝে বাজার নাই। তাছাড়া মাঝে মাঝে খালারা যে কি পরিমাণ চুরি করে ধারণার বাইরে। ব্যাচেলররা তা নিয়ে অভিযোগ করলে খালা উল্টা পোলাপাইনরে শাসায় যে আর চাকরি করবে না। আবার কোনো কোনো মাসে দেখা যায় মাসের ১০ দিনও তারা ছুটিতে থাকেন। তখন তাদেরকে জিগাইলে তারা অজুহাত দেন আজ তার মাইয়ার বিয়া, পরের দিন পোলার নাতি হইছে, তার পরের দিন পোলারে মুসলমানি করাইছে।
মেসে জাতীয় খাবার হইল ডিম আর আলু ভর্তা। আমার মনে হয় আল্লাহ যদি মুরগীর দোয়া কবুল করতো তাইলে ব্যাচেলররা নিমেষেই ধ্বংস হইয়া যাইত। মুরগীরও দোষ নাই। বেচারা ডিম পাইড়া কুলায় না তার আগেই ব্যাচেলররা গিলে ফেলে।
প্রতিটি মেসে একজন করে লাভ গুরু থাকে যার কাজ হইল মাইয়া পটানো। কোন জরুরি কাজে তাকে পাওয়া যায় না, কিন্তু পার্কে গেলে তারে সবার আগে দেখা যায়। সারাদিন ফোন কানের কাছে থাকবো আর শুধু কইব লাভ ইউ উম্মা, টুম্মা। সে যখন ডেটিং এ যায় তখন তার বন্ধুদের মধ্যে কারো কাছ থেকে সুন্দর প্যান্ট, কারো কাছ থেকে সুন্দর শার্ট, কারো সুন্দর কনভার্টস, কারো সুন্দর ঘড়ি, আবার মাঝে মাঝে কারো সুন্দর শর্ট প্যান্টও ধার কইরা নিয়া যায়। যেন ডেটিং এ যাইতাছে নবাবজাদা।
মেস লাইফে সবচেয়ে খারাপ সময় যায় মাসের লাস্ট ৫ দিন। কারো কাছেই টাকা থাকে না। মিল বন্ধ হয়ে যায়। তখন তারা নিকট আত্মীয়দের সাথে খাতির মিলায় আর দাওয়াত খুইজা লয়। আর তাদের সবচেয়ে মন খারাপ হয় যখন তাদের পাশের বাসার ছাদে বিয়া হয় কিন্তু তাদের মিল চলে না টাকার জন্য। তারা তখন জোরে জোরে গান ছাইড়া নিজেরাই নাচানাচি করে আর পিনিক লয়।
ব্যাচেলররা অনেক দুষ্টু, অনেক ফাজিল, অনেক দুষ্টামি করে, কিন্তু তাদের একটা পারসোনালিটি আছে। তারা দাওয়াত ছাড়া কোথাও যায় না। তারা না খায়া থাকবো কিন্তু কোনদিন কাউরে তাদের সম্বন্ধে কথা বলতে দিবো না। তারা অন্যের প্রয়োজনে ঝাঁপাইয়া পড়ব কিন্তু তাদের প্রয়োজনে কেউ না আগাইলে তারা সে ব্যাপারে মাথা ঘামায় না। তারা মেসে থাকতে পারে কিন্তু আল্লাহ তাদের টাকাপয়সা কম দেন নাই। তাই যতই দুষ্টামি করুক না কেন দিন শেষে তারা ভদ্র ঘরের সন্তান।
নাফি ভাই আপনার ব্যাচেলর জীবন ৮ বছর, আর আমার ব্যাচেলর জীবন ১৩ বছর। চলেন ২ ভাই মিলে ব্যাচেলর দের জন্য ফোরাম খুলি যেন কোন বাড়িওয়ালা ব্যাচেলরদের দেখলে ভয়ে না পালায় বরং ঘরজামাই বানাইয়া রাখে !!!
---গোলাম রাব্বানী