বাজারে আড্ডা মারতে মারতে কখন যে রাত দশটা বেজে গেল টেরই পেল না রাজন। যখন খেয়াল হল তখন সে চিন্তায় পড়ে গেল। বাড়ি যাবে কিভাবে। প্রথম সে বাজার ঘুরে ঘুরে পরিচিত কাউকে খুজতে লাগলো। না কাউকে পেল না। বাজার থেকে বাড়ি প্রায় তিন মাইলের পথ। তিন মাইল সমস্যা নয় । সমস্যা হল কিছুদূর যাওয়ার পর থেকেই মাঠের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। তাও আবার ফাঁকা মাঠের মাঝ খানে স্মশান।
যাই হোক কি আর করা আল্লাহর নাম নিয়ে বাড়ির পথে হাটতে শুরু করলো রাজন। বাজারের রাস্তা থেকে মাঠের মধ্যে দিয়ে আঁকা বাঁকা পথ ধরে হাটছে রাজন। কোনো লোকজন নেই। গ্রামের মানুষ এমনিতে সকাল সকাল খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। এখনতো রাত দশটার বেশি বাজে, তাই রাস্তাঘাট একদম ফাঁকা।
রাজন স্মশান পযর্ন্ত এসেছে কোনো ভয় হয়নি কোনো সমস্যাও হয়নি। যেই স্মশান পাড় হয়ে হাটতে শুরু করেছে ওমনি একটি শব্দ ভেসে এল, তোর হাতের ব্যাগে রাখা মাছগুলি আমাকে দিয়ে যা। রাজন মাথাতুলে তাকিয়ে দেখল সামনে মস্ত এক দানব আকৃতি ভূত। আকাশে মাথা ঠেকিয়ে দুই পা ফাঁক করে দাড়িয়ে আছে। রাজনের শরীর সিউরে উঠলো। তবুও সে স্থির দাড়িয়ে গেল আর নিজের ডান পায়ের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে তার চার পাশের মাঠিতে বৃত্ত তৈরী করে ঠাঁই দাড়িয়ে রইলো।
সে দাদুর কাছে শুনেছিল বৃত্তের মধ্যে দাড়িয়ে থাকলে নাকি ভূত সেখানে প্রবেশ করতে পারে না । আজ সেই কথা কাজে লাগালো। সে আরো শুনেছিল পড়নের কাপড় উল্টো করে পড়লে নাকি ভুতেরা কাছে আসে না। সে পড়নের লুঙ্গিটা খুলে উল্টো করে পড়লো। ভুত বলল মাছগুলো আমায় দে। রাজন বলল টাকা দিয়ে মাছ কিনেছি তোকে দেব কেন?
ভুত বলল আজ তোকে দেখে নেব। হয় তোকে শায়েস্তা করবো, নয়তো আজ তোর কাছে মাথা নত করবো। রাজন বলল যাই করিস না কেন আমি মাছ তোকে দেব না। তোকে মাছ দিয়ে গেলে মা আমাকে মেরে ফেলবে। ভূত দেখলো ভয় দেখিয়ে রাজনকে শায়েস্তা করা যাবে না। তাছাড়া সে বৃত্তের মধ্যে দাড়িয়ে আছে। সেখানে সে রাজনের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। তাই সে রাজনের সাথে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলতে শুরু করলো। ভুত বলল, যা তুই বাড়ি চলে যা। আমি তোর সাথে ঠাট্টা করেছিলাম। যা বাড়ি চলে যা। রাজন বলল আগে তুই সরে যা। তারপর আমি যাব। ভূত দুই পা আরো ফাঁক করে বলল যা তোকে আরো জায়গা করে দিলাম। রাজন বলল তোর মতলব আমি বুঝি। যেই তোর গায়ের নিচ দিয়ে আমি যাব, অমনি দুই পা দিয়ে আমাকে পিষে মারবি। এরকম কথা কাটা কাটির মধ্যে দিয়ে রাত ভোর হয়ে এল।
দূরে কৃষকদের গরু মহিষ মাঠে নিয়ে আসার হুট হাট শব্দ ভেসে এল। ভূত বুঝতে পারলো কিছুক্ষণের মধ্যে মানুষ মাঠে কাজ করার জন্য চলে আসবে। তাই সে রাজনকে বলল, দেখ তুই বড় চালাক আর সাহসী মানব। আজ তোর কাছে হেরে গেলাম আর কোনো দিন তোর সামনে পড়বো না, এবার আমার একটা উপকার কর। তোর পা দুটি একটু ফাক করে দাড়া। রাজন ভাবলো দেখিনা কি হয়! সে পা দুটি ফাঁক করে দাড়ালো, আর ভূতটা মস্ত বড় আকৃতি থেকে বিড়ালে রূপ নিল। বিড়ালে রূপ নিয়েই চোখের পলকে রাজনের দু পায়ের ফাঁক দিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেল। যেতে যেতে বলে গেল, তোর মায়ে মানুষকে লাউ এর পাতা বিলিয়ে ছিল বলেই আজ আমার হাত থেকে বেঁচে গেলি। মোবারক হুসেনের ব্লগ থেকে
বিবার্তা/এমহোসেন