মুক্তি পাবে কী দক্ষিণা মানুষগুলো?

মুক্তি পাবে কী দক্ষিণা মানুষগুলো?
প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০১৬, ২২:০২:২৭
মুক্তি পাবে কী দক্ষিণা মানুষগুলো?
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+
নদী পথে শান্তির নীড়। দক্ষিণাঞ্চলের ২০ জেলার লাখ লাখ মানুষের প্রধান যাতায়াত ব্যবস্থা মানেই ঢাকা নদী বন্দর বা সদর ঘাট হয়ে চলাচলকারী লঞ্চ। আর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ভোলা, মনপুরা, হাতিয়ার একমাত্র (ফেরিছাড়া) যান লঞ্চ। পাশাপাশি মুন্সীগঞ্জ সদর, মিরকাদিম, পঞ্চবটি, গজারিয়া, নারায়ণগঞ্জ পাগলার বাসিন্দাদেরও একটা অংশ প্রতিদিন লঞ্চে করে যাতায়াত করছে। কিন্তু দক্ষিণা লাখো মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে সদঘাটের ইজারাদার।
 
 ভ্রমণকারীদের লাগেজ, বস্তা, আসবাবপত্র, মোটরসাইকেলসহ যাবতীয় পণ্য আটকে নির্ধারিত হারের চেয়ে ১০/১৫ গুণ অতিরিক্ত টোল জোর করে আদায় করছে ইজারাদারদের লালবাহিনী নামক ঘাট শ্রমিকরা। এ নিয়ে গণমাধ্যমে লেখালেখি হচ্ছে। নৌ-পরিবহন মন্ত্রীও একাধিকবার গর্ব করে বলেছেন, ''দেখতে হলে ফিটফাট, চলে আসুন সদরঘাট''। আসলেই কী ঘাট ফিটফাট।
 
 সত্যিকার অর্থে সদরঘাট ঘুরে আসলেই ফিটফাটের ভেতরে থাকা অন্য এক সদরঘাটের চিত্র চোখে ধরা পড়বে। সরকার নির্ধারিত ২৫ টাকার মোটর সাইকেলের টোল ২০০/৩০০ টাকার কম দিতে গেলে যাত্রীরা নাজেহাল হন কুলি ও ইজারাদারের নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে। এসব অপকর্মে সহায়তা করছে খোদ বিআইডব্লিউটিএ, থানা পুলিশ, নৌ-পুলিশও। কত যাত্রী প্রতিদিন ওই ঘাটে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তার হিসেব নেই। 
 
কিন্তু বিআইডব্লিউটিএ নির্ধারিত টোলের তালিকায় বলা হয়েছে-একটি ফ্রিজের জন্য ৫০ টাকা, স্টিল বা কাঠের খাট ১০০ টাকা, টেলিভিশন ২০ টাকা, ১০ কেজি ওজনের ব্যাগ বহনের জন্য ১০ টাকা, ৪০ কেজির ব্যাগে ৩০ টাকা, মোটরসাইকেল ২৫ টাকা, বাইসাইকেল ২০ টাকা, কাপড়ের গাইট ৫০ টাকা, হার্ডওয়্যার ৪০ টাকা, সিলিংফ্যান ২০ টাকা। 
 
আর পণ্য মালিক ইচ্ছে করলে কুলি ছাড়া নিজেই তা বহন করতে পারবেন। কিন্তু সরকারি এই মূল্য তালিকাকে তোয়াক্কা না করে ১০/১৫ গুণ আদায় করছে ইজারাদারের লোকজন। একইভাবে কুলিরাও জোর করে মালামাল তুলে ইচ্ছেমতো আদায় করছে। আর বিদেশ ফেরত যাত্রীর লাগেজ দেখলে তো কথাই নেই।
 
গণমাধ্যমে এসেছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সদরঘাটের ইজারা ছিল ৩ কোটি ২ লাখ টাকা। কিন্তু ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৮ কোটি ৬০ লাখ টাকায় ইজারা পায় আলমগীর এন্টারপ্রাইজ। শর্ত ছিল-ঘাটের মালামাল, পার্কিং এলাকা ও পাশ্ববর্তী তিনটি নৌকাঘাট-ওয়াইজঘাট, সিমসন ঘাট, কার্গোগেটে শুধু বাণিজ্যিক মালামাল ওঠানামার লেবার হ্যান্ডেলিং এবং পার্কিং ইয়ার্ডে চার্জ (যাত্রী সাধারণের লাগেজ ও ব্যাগেজ ব্যতিত) বিআইডব্লিউটিএ নির্ধারিত হারে আদায় করবেন। কিন্তু হচ্ছে তার উল্টোটা।
 
কে এই আলমগীর: আলমগীরের গ্রামের বাড়ি বরিশালের মুলাদী। দীর্ঘ সময় ধরে তারা বসবাস করছেন কেরাণীগঞ্জের খেজুরবাগ এলাকায়। এরপর সেখানে আলমগীরের বড় ভাই হাজী ফারুক জড়িয়ে পড়েন বিএনপির রাজনীতিতে। যিনি বর্তমানে শুভ্যাঢা ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি। আলমগীর নিজে এক সময় কাজ করতেন মাদারীপুরের প্রভাবশালী এমপির জাহাজে। গত বিএনপি জোট সরকারের আমলে আলমগীর হোসেন সদরঘাট এলাকায় বড় ভাইয়ের প্রভাবে চাঁদাবাজি করেন। 
 
কিন্তু ক্ষমতার পটপরিবর্তনে রাতারাতি মাদারীপুরের ওই সংসদ সদস্যর নাম ভাঙ্গিয়ে তার রাম রাজত্ব পরিচালনা করছে। এ কারণে মিডিয়ায় বারবার অতিরিক্ত টোল আদায় ও জবরদস্তি নিয়ে সংবাদ আসলেও কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। 
 
সবশেষ গত বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) সদরঘাটের বাবা-মা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) নানা হয়রানির অভিযোগ পেয়ে এই ইজারা বাতিল করে। কিন্তু এখনো হাল ছাড়েনি ইজারাদার আলমগীর। বরং তার লোকেরা বিআইডব্লিউটিএ ম্যাজিস্ট্রেট এর ওপর হামলা করেছে। শোনা যাচ্ছে জুনে নাকি আবারও ইজারা দেয়া হবে। তাহলে হয়তো আবারো অন্য আলমগীর চলে আসবেন। তাতে কী মুক্তি পাবে দক্ষিণা মানুষগুলো?
 
বোবা কান্নার ব্লগ থেকে
http://www.somewhereinblog.net/blog/dumbcry/30105257
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com