দীনহীন তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষে পড়িতো। তাহার একখানি "কাব্যগ্রন্থ" প্রকাশিত হইবে অমর একুশে গ্রন্থমেলায়, গ্রন্থটির নাম "জলছবি"। এই লইয়া সহপাঠিদের মধ্যে বেশ সাড়া লক্ষ্য করা যাইতেছিলো । প্রতিটি শুভ উদ্যোগের পশ্চাতেই দুই-চারিজন কুচক্রী থাকে। এই দুই-চারিজন কুচক্রী ব্যতিত আর সবাই তাহাকে অনুপ্রাণিত করিতেছিলো। এক দ্বিপ্রহরে শ্রেণিকক্ষের বাহিরের বারান্দায় দাঁড়াইয়াছিলো দীনহীন।
একমনে পদ্মপুকুর দেখিতেছিলো সে, যেইখানে প্রস্ফুটিত হইয়াছিলো অজস্র পদ্ম; এক ঝাঁক পাতিহাস পাড় ধরিয়া ঘুরিতেছিলো। ‘হাই কবি, কেমন আছো? মেয়েলি একখানি কন্ঠস্বর শুনিয়া দীনহীন পশ্চাতে ফিরিলো, দেখিলো, সহপাঠিনী পুষ্প ও কলি হাসোজ্জ্বল বদনে দাঁড়াইয়ো আছে। পুষ্পের হস্তে ছোট্ট একখানি পুষ্প। ‘হ্যাঁ, আমি ভালো। তোমরা? কলি বলিলো, ‘আমরাও ভালো ।’ পুষ্প বলিলো, "তোমাকে পুষ্প দিতে এলাম ।
দীনহীন জিজ্ঞাসা করিলো, ‘কীসের পুষ্প?’ কলি হাসিতে হাসিতে বলিলো, ‘ভালোবাসার পুষ্প।’ পুষ্পও হাসিতে লাগিলো। কিছু কিছু স্ত্রীলোকের হাসিতে মুক্তা ঝরে, যাহা দেখিলে চক্ষে কেমন যেন ঘোর লাগে-পুষ্পের হাসিও ঠিক তেমন। তাহার হাসিতে অদ্ভুত এক মাদকতা আছে। অন্তরে-বাহিরে কেমন যেন শিহরণ সৃষ্টি হইয়া যায়। হাসি থামাইয়া পুষ্প তাহার হস্তের পুষ্পটি দীনহীনের হস্তে দিলো, অতঃপর বলিলো, ‘অভিনন্দন! তোমার প্রকাশিতব্য বইটি তোমার জন্যে অপার সাফল্য বয়ে আনুক। ভালো থেকো।’
দীনহীন আবেগাপ্লুত হইলো বটে, তথাপি আপনাকে সংবরণ করিয়া বলিলো, "তোমাকে অশেষ ধন্যবাদ, তুমিও ভালো থেকো ।" ৩ অগ্রহায়ন ১৪২২ বঙ্গাব্দ, ভালুকা, ময়মনসিংহ। সন্ধ্যা
রূপক বিধৌত’র ব্লগ থেকে
বিবার্তা/মহসিন