বাৎসরিক ছুটিতে দেশে গিয়েছিলাম বরাবরের মতই। তবে আমার সব ভাই-বোন তথা বেশির ভাগ আত্মীয়-স্বজনের বসবাস বৃহত্তর ঢাকায় হওয়াতে এর বাহিরে তেমন যেতে পারিনি। বলা যায় সময়ও পাইনি। শুধু একবার গিয়েছিলাম গ্রামের বাড়ি বিক্রমপুরে। (মুন্সীগঞ্জ না বিক্রমপুরের পরিচয়ই আমি সাধারণতঃ দিয়ে থাকি)।
যতবারই যাই, সেই চিরচেনা ঢাকাকে আবার চিনতে হয় নূতন করে। কতসব পথ, সুউচ্চ ইমারত, ঝলমলে মার্কেট, আর বিচিত্র নামের সব ফাস্টফুডের দোকান। দেখি আর গ্রামের সহজ মানুষদের মত পথের দিকে তাকিয়ে থাকি। কোনোটাকে চিনি, কোনোটা চেনাচেনা আবার কোনোটা একবারেই অচেনা। আধা সমাপ্ত ফ্লাইওভার দিয়ে পুরো ঢাকা ঘেরা। স্বভাবতঃই পথগুলিতে অসহ্য রকম যানজট। কাউকে সময় দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে পৌছানে অসম্ভব কল্পনা। ভাবছিলাম ১/২ ঘন্টা পিছিয়ে দিলে হয়তো সঠিক সময়ে পৌছানো যাবে!
আর বৃষ্টির পর পথের দুপাশের অবস্থা দেখেতো ফুটবল নিয়ে নেমে যেতে ইচ্ছে করছিলো, বয়সটা বাধা দিলো। তবে এটা ঠিক যে কাজ শেষ হলে এই সমস্যা কমে যাবে বেশির ভাগই। ঢাকা সত্যিই তিলোত্তমা হয়ে উঠবে। (পাতালরেলের পথে কোলকাতায় যতদুর মনে পরে ধর্মতলাসহ অনেকস্থানে এমন দৃশ্যই দেখেছিলাম)। আর আবর্জনার ভাগাড় বললেও আগের থেকে কাজ কিছু হচ্ছে এটা অস্বীকার করবো না। পথে পথে ডাস্টবিনগুলি দেখে মনে পড়ে গেল ৭১য়ের পূর্বে প্রতিটি বিল্ডিংয়ের সামনে দুটো করে পাকা ডাস্টবিন ছিল। যাতে নির্দিষ্ট সময়ে ময়লা ফেললে সকালে স্যুইপাররা ড্রামে করে নিয়ে যেতো। কিন্তু তা আমাদের মানসিকতাকে বদলাতে পারে নি। আজ এতো বছর পর সব বদলালেও এটা বদলাতে পারে নি। ফলাফল কিছু এলাকা বাদে পুরোটাই...।
সঙ্গতঃ কারণে একটি কথা না বললেই নয়, দেশের উন্নতির সাথে সাথে উন্নতি হয়েছে অপরাধেরও। গুম+মুক্তিপন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফট কোড হ্যাকড করে বিলিয়ন ডলার লুট, ফ্লাইওভারের নকশায় গলদ। আর আশংকাজনকভাবে শিশুহত্যার হার। এবার আসি পরিচিতজনদের কথায়। কেন যেন মনে হলো আমরা যা বিশ্বাস করি তা আর মনে আনি না, অথচ বিশ্বাস এবং তা প্রকাশই তো স্বাভাবিক, তাই না। অথচ কেন যেন মনে হলো যা বিশ্বাস করি তা প্রকাশ না করে, করি ঠিক তার উল্টোটা।
সত্য প্রকাশে বা মনের বিশ্বাসকে অকপটে প্রকাশ করার যে পরিণাম কি হতে পারে, তা আমাদের কারোরই অজানা নয়। এইযে আজ আমরা এদল, সেদল নিয়ে হৈচৈ করছি, প্রয়োজনে জান নিতে বা দিতেও প্রস্তুত, তাদের যদি প্রশ্ন করি দয়া করে দেশের গণতন্ত্রের চেয়ে দলের ইতিহাস এবং গণতন্ত্রকে উন্নত করছেন না কেন? তাহলেই হৈহৈ রৈরৈ পরে যাবে। তাহলে আমরা পরবর্তি প্রজন্মের কাছে হিংসা, ঘৃনা, প্রতিহিংসা আর জিঘাংসাই রেখে যাবো, যা দিয়ে তারা আমাদেরই মত পিছিয়ে থাকবে আর এর থেকে সৃষ্ট ঘৃনার দায় থেকে কি আমাদের আত্মাও মুক্তি পাবে? কে যায় অত ভাবতে?
এবার বন্ধুদের কথায় আসি। দেখা হয়েছে মুষ্টিমেয় কয়েকজনের সাথে। কেউ ব্যস্ত সাংসারিক ঝামেলায়, কেউ বা শ্রেফ এড়িয়ে গেছে। অনেকে গেছে হারিয়ে। যাদের সাথে দেখা হলো একেবারে ফরম্যালি, হাসি-ঠাট্টা সব মেপে মেপে। কিন্তু কেউ পিছন থেকে এসে ধুম করে কিল দিয়ে বললো না, কোথায় কি করছিস? আধকাপ চা, আধা ডালপুড়ি বা পরোটা বা সিগারেটের শেষাংশ এগিয়ে বললো না, নে খা। খাইয়া আরাম কইরা বয়। কতদিন পর দেখা, শুনি সব। মন চাইলে। হ্যাঁ আমিও বদলেছি কিন্তু মনে নয়। সামাজিকতায় ও বয়সে। ভাবছি জগজিৎ সিংয়ের সেই গানটির আবেদন, ইয়ে দৌলত ভি লে লো, ইয়ে শহরত ভী লে লো, মাগার মুঝকো লৌটা দো ওয়ো কাগাজ কি কিস্তী, ওয়ো বারিষ কি পানি। (সচেতনহ্যাপির ব্লগ থেকে...)
বিবার্তা/এমহোসেন