আলো ঝল মলে এই ঢাকা শহরে তানিম আজ নতুন নয়। এর আগেও বেশ কয়েক বার এসেছে। দু তিন দিন ঘুরে ফিরে আবার চলে গেছে। ঢাকা শহর তানিমের একদম ভাল লাগে না। তারপরও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে তানিমকে এখন থেকে ঢাকা শহরেই থাকতে হবে। ঢাকা শহরে তানিমের অনেক আত্মীয় আছে, কিন্তু তানিম কারও কাছে যায়নি। যাবেই বা কি করে, ঢাকা শহরের এই আত্মীয়গুলো সব মূখেই।
সবাই যার যার মত করে আছে। আত্মীয় শব্দটা মনে হয় এই ঢাকা শহরের জন্য প্রযোজ্য নয়। তাই তো তানিম এসে উঠেছে তার বন্ধুর এক বড় ভাইয়ের কাছে। সুমন ভাই খুবই ভাল মানুষ। আপাতত তানিমের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা তিনিই সব কিছু করেছেন। সুমন ভাই তানিমকে কোনো চিন্তা না করে মন দিয়ে পড়ালেখা করতে বললেন। সুমন ভাই বড় একটা চাকুরি করছেন। একা একটা বাসা ভাড়া করে থাকেন। একটা রুম বড় আরেকটা ছোট, কিচেন আর বাথরুম। আমি ছোট রুমটাতে থাকি। এক জন বুয়া রান্না করে দিয়ে যায়।
সুমন ভাই একদিন রাতে আমাকে বললেন- তানিম আমি না একটা কাজ করে ফেলেছি। জানতে চাইলাম কি কাজ ভাইয়া? না মানে আমি কাউকে কিছু না জানিয়েই বিয়ে করে ফেলেছি। তোর ভাবি এখন থেকে এখানেই থাকবে। তুই চিন্তা করিস না তুইও আমাদের সাথেই থাকবি। তোর কাছে অনুরোধ তুই এই বিয়ের কথা কাউকে বলবি না। এমন কি তোর বন্ধু শামীম কেও না। আমি সুমন ভাইকে কথা দিলাম কাউকেই বলব না।
আজকালতো এমন হয়ই। ছেলে-মেয়ে দু জনে চুরি করে বিয়ে করে, পরে আবার মা-বাবা মেনেও নেয়। পুতুল ভাবি খুবই সুন্দরী। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে হোটেল ম্যানেজমেন্টে পড়ছেন। সুমন ভাই আর পুতুল ভাবির সাথে আমার দিনগুলো ভালই কেটে যাচ্ছিল। এর মধ্যে সুমন ভাই বিদেশ যাওয়ার জন্য ভাল একটা সুযোগ পেয়ে যান। ইংল্যান্ডের একটা সেবা দাতা প্রতিষ্ঠানে সুমন ভাইয়ের চাকুরি হয়ে যায়। দুই বছরের মাথায় আমি ম্যাচে চলে আসি। পুতুল ভাবিও চলে যায়। সুমন ভাই বিদেশ চলে যাওয়ার পরে আর তেমন যোগাযোগ হয়নি।
পুতুল ভাবির সাথেও যোগাযোগ হত না। এদিকে আমার পড়া লেখা প্রায় শেষের পথে। সে সময় সুমন ভাই দেশে আসে বিয়ে করতে। আমার বন্ধুর সাথেও আগের মত যোগাযোগ হত না। শামীম আমাকে সুমন ভাইয়ের বিয়েতে যাওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু আমি সময় করে উঠতে পারিনি।
বিয়ে করে সুমন ভাই বৌ বিদেশ নিয়ে গেছে শুনেছি। আমি যেহেতু জানি সুমন ভাই পুতুল ভাবিকে বিয়ে করেছে তাই ভেবেছিলাম পুতুল ভাবিকে হয়তো এখন আয়োজন করে ঘরে তুলে নিয়েছে। বৌ যেহেতু আমার চেনা তাই অতটা আগ্রহ ছিল না আমার সুমন ভাইয়ের বিয়ে নিয়ে। আমি এর মাঝে একটা বৃত্তি পেয়ে গেলাম ইংল্যান্ডে দুই বছরের। তারপর একদিন চলে গেলাম ইংল্যান্ডে। সুমন ভাইয়ের ফোন নাম্বার আর ঠিকানা নিয়ে নিলাম যাওয়ার আগে। ইংল্যান্ডে ইতিমধ্যে তিন মাস পার করে ফেলেছি। এখনও একদিনও সুযোগ পাইনি সুমন ভাইয়ের সাথে দেখা করার জন্য। একদিন ফোন দিলাম সুমন ভাইকে। সুমন ভাই আমার ফোন পেয়ে খুবই উচ্ছসিত হলেন। যেতে বললেন একদিন। কোনো এক ছুটির দিনে হাজির হলাম সুমন ভাইয়ের বাসায়। পুতুল ভাবিকে দেখার জন্যও মনটা তর সইছিল না।
আমাকে দেখে সুমন ভাই বুকে জড়িয়ে ধরলেন। সুমন ভাইয়ের পেছনে একজন অচেনা নারীকে দেখলাম। সুমন ভাই ঘাড় ঘুরিয়ে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন, এই তোর ভাবি লিজা। আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম। এই মেয়ে যদি সুমন ভাইয়ের বৌ হয় তাহলে পুতুল ভাবি কই। আমি লিজা ভাবির সামনে সুমন ভাইয়ের কাছে কিছু জানতে চাইলাম না।
দুপুরে খেয়েই বেরিয়ে পড়লাম। সুমন ভাই আমাকে এগিয়ে দিতে এল। এক সময় সুমন ভাই আমাকে বললেন, তানিম আমি তোর মুখ দেখেই বুঝেছি তুই লিজাকে দেখে অবাক হয়েছিস। তোকে একটা সত্যি কথা বলি শোন, আমি আর পুতুল লিভ টুগেদার করতাম। সুমন ভাইয়ের এ কথা শুনে আমি আরেকবার আকাশ থেকে পড়লাম। একটা মানুষ লিভটুগেদার করেছে সেটা কত অবলিলায় আমাকে বলে ফেলল!! হয়তো পাশ্চাত্য কালচারে থেকে সুমন ভাই খুব ফ্রি মাইন্ডের হয়ে গেছে। দেশ থেকে এই সুদূর প্রবাসে এসে দেখে গেলাম একটা লিভটুগেদার করা ছেলে অনেক সুখে আছে। দেশে ফিরে গিয়ে কি দেখতে পাব একটা লিভটুগেদার করা মেয়েও অনেক সুখে আছে? মোস্তফা সোহেলের ব্লগ থেকে
বিবার্তা/এমহোসেন