আমরা দক্ষিণ এশিয়ার একটি দরিদ্র দেশে বাস করি। দরিদ্র হবার কারণে আমাদের সমস্যাও অনেক। কিন্তু চাইলেও এ সব সমস্যার সমাধান আমরা রাতারাতি করতে পারবো না এবং পারছিও না।
আবার নাগরিক জীবনে আমাদের অধিকার কতটুকু, সেটা আমরা যেমন জানি না, আমাদের সরকার বাহাদুরও জানে বলে মনে হয় না। জানলেও করার কিছু নেই!
যানজটের কারণে দৈনিক আমাদের কত শ্রমঘণ্টা নষ্ট হয়, তা নিয়ে টাক্কু বা আধা টাক্কু গবেষকরা গবেষণায় মাতুক। কিন্তু ম্যাংগো-পাবলিককে অফিস বা কর্মস্থলে যেতে হবে আবার বাসায় ফিরতে হবে নাড়ির টানে।
আমি ছা-পোষা মানুষ। নগরীর কোনাপাড়ায় থাকি। ওখানে কোনোদিনই কারেন্ট যায় না। তবে মাঝে মাঝে কারেন্ট বেড়াতে আসে! অন্যদিকে পরিবহন মালিকরা এলাকাটির গুরুত্বহীনতা বিবেচনা করে ওই রুটে কোনো বাস-সার্ভিস রাখেনি। যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত আসতে লেগুনা সার্ভিসই ভরসা। তবে মূল ভরসা দুটো শ্রীচরণ।
কিন্তু কাওরান বাজার বিবার্তা অফিসে আসতে ‘মহামান্য যানজট’ আমাকে ভীষণ ভোগায়। যাত্রাবাড়ী এসে অনেকটা বাদুড়ঝোলা হয়ে কাওরান বাজারের মিডিয়া পাড়ায় আমাকে আসতে হয়।
যানজট নিয়ে অনেকে অনেক কিছু বলেন। আমি বলি না। আমি দেখতে পেয়েছি, যানজটের কারণে রাজধানী ঢাকায় এক্সিডেন্টের হার কমে গেছে। অন্তত প্রাণঘাতী এক্সিডেন্ট কমে গেছে!!
অবশ্য যানজট সমস্যার সমাধানও আমি পেয়ে গেছি। আর তা হচ্ছে '১১ নম্বর বাস'। দুই পা-কেই আমি ১১ নম্বর বাস বলি।
এতো বড় সমস্যার সমাধান পেতে আমাকে কোনো কনসালটেন্ট ফি গুণতে হয়নি। টেন্ডারও ডাকতে হয়নি। আমার বিশ্বাস, সরকার ঢাকাবাসীকে পায়ে হাঁটতে উৎসাহিত করলে পরিবেশ দূষণ কমবে। আর রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ যানজট দেখলে আমরা বুঝতে পারবো, কোনো যোগ্য তালেবর মন্ত্রী বোধ হয় কোথাও যাচ্ছেন অথবা প্রধানমন্ত্রী এই মাত্র অফিস সেরে বাসায় ফিরছেন।
একটু নিঃশ্বাস ফেলে আমরা আবার যে যার পথে হাঁটবো। রাস্তা তো আমাদের নয়- ওটা মন্ত্রীর, প্রধানমন্ত্রীর, রাষ্ট্রপতির; এমনকি পুলিশের আইজিপির। আমরা হলাম কুনু ব্যাং ঠুটো জগন্নাথ। গামছা হারিয়ে বাবা আদমের মতো নেংটো হয়ে 'ইয়া নফসি ইয়া নফসি' করছি।
আচ্ছা 'ইয়া নফসি ইয়া নফসি' করা ছাড়া আমাদের কি কোনো উপায় আছে? পাবলিক না হয় আমার মতই ১১ নম্বর বাসে চড়বে।
যানজট আমাকে এখন আর ভাবায় না। ১১ নম্বর বাস আছে না!
জিয়াউদ্দিন সাইমুমের ব্লগ থেকে
বিবার্তা/জিয়া