কমলডাঙার কমলবাড়ির কমলকান্তির কনিষ্ঠা কন্যা কাকলী কাকাকে কহিল, কাকা কাক কেন কা-কা করে? কাকা কহিলেন, কা-কা করাই কাকের কাজ।
বড় হয়ে জানলাম সংস্কৃত ‘কৈ’ বা ‘কা’ শব্দের সঙ্গে ‘কন্’ প্রত্যয় যোগে তৈরি হয়েছে কাক শব্দটি। এটার অর্থ ‘যে কৈ কৈ বা কা কা করে’।
অবশ্য কাকের বনেদী সংস্কৃত নাম হচ্ছে বায়স। প্রকৃতির সম্মার্জনী বা প্রকৃতির ঝাড়ুদার হিসেবে পরিচিত কাকের বায়স নামটি রামায়ণ ও মহাভারতে বার বার এসেছে। বায়স মানে ‘যার বয়স বোঝা যায় না’।
কাকের বেলায় ব্যাপারটি সত্য। কারণ একটু বড় হবার পরই কাকের বাহ্যিক চেহারা দেখে বোঝার কোনো উপায় থাকে না যে বাড়ির পাশে বাংলালিঙ্কের টাওয়ারটিতে বসে থাকা কাকটির এখন যৌবন নাকি বার্ধক্য চলছে।
প্রকৃতিতে কাকের মতো এতো পরকীয়াবিরোধী পাখি আর নেই!! কোনো কারণে সঙ্গীটি মারা গেলে কাক আর দ্বিতীয় সঙ্গী কোনোদিনই বেছে নেয় না। আবার একবার সন্তান জন্ম দেয়ার পর কাক দ্বিতীয় বার সন্তান জন্ম দেয় না। এ কারণে কাকের উপাধি হচ্ছে ‘সকৃৎপ্রজা’ (সকৃৎ=এক, প্রজা =সন্তান)। মাত্র এক সন্তান জন্মদানকারী নারীকেও আমরা তাই বলি ‘কাকবন্ধ্যা’ বা ‘সকৃৎগর্ভা’ বা ‘সকৃৎপ্রজা’।
হিন্দুপুরাণ মতে, মহর্ষি কশ্যপ ও তার স্ত্রী তাম্রার সন্তান কাকী থেকেই পৃথিবীতে সব কাকের জন্ম।
অবশ্য পুরাণে যে ভুষুণ্ডকাকের কথা বলা হয়েছে, ওটা ত্রিকালযজ্ঞ। এখনও মরেনি। পৃথিবীকে পাঁচবার জলমগ্ন হতে দেখেছে এই কাক। বারো বার দেখেছে সমুদ্রমন্থন। পরশুরাম ও রামের ছয় বার জন্মগ্রহণের সাক্ষী এই কাক। অতএব জয়তু ‘ভুষুণ্ডকাক’।
পুনশ্চ: বাংলা ভাষার প্রবাদ-তোরঙ্গটি খুলুন। ওখানে পাবেন হাজারো কাক-বন্দনা । কাকের মাংস কাক খায় না-------। কাকতাড়ুয়ার কথা নাই বা বললাম!!!
জিয়াউদ্দিন সাইমুমের ব্লগ থেকে
বিবার্তা/জিয়া