অসুস্থ অবস্থায় রোজা ও রোজায় ওষুধ

অসুস্থ অবস্থায় রোজা ও রোজায় ওষুধ
প্রকাশ : ১৮ জুন ২০১৬, ১১:৩৪:৩২
অসুস্থ অবস্থায় রোজা ও রোজায় ওষুধ
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+
স্বাস্থ্যবান মানুষের জন্য রোজার ব্যাপারে আমাদের প্রশ্ন না থাকলেও অসুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে প্রশ্ন থাকে। অসুস্থ ব্যক্তি রোজা রাখতে পারবে কি না, পারলে তার ইফতার-সেহরি কেমন হবে, ওষুধ খাওয়ার নিয়ম কি হবে এই ধরনের নানাবিধ প্রশ্ন। 
 
যেমন একটি সাধারণ প্রশ্ন হল, অন্যান্য সময় যে ওষুধগুলো সকালে ও দুপুরে খাওয়া হতো সেগুলো কখন খাবে? একই সাথে রাতের ওষুধগুলো তখন কিভাবে খাওয়া যেতে পারে? এর একটি সহজ উত্তর হল, রোজার সময় রাতের অনুমোদিত খাওয়ার সময়টি দিনের মত ধরে নিলেই হয়। সেক্ষেত্রে সকালের ওষুধ ইফতারের পর পর, দুপুরেরটা মধ্যরাতে এবং রাতেরটা সেহরির সময় খেয়ে নিতে হবে। 
 
তবে রাতের সময়কাল যেহেতু কম, সেহেতু ওষুধ সেবনের আগে ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক ওষুধের সময়সীমা পরিবর্তন করে সেই অনুযায়ী ওষুধ খাওয়া দরকার। এছাড়া কিছু রোগ আছে, যাতে রোজা রাখলে রোগী বেশী অসুস্থ হয়ে পড়বে, সেক্ষেত্রে রোজা রাখার জন্য ইসলামও বাধ্য করেনি। 
অসুস্থ অবস্থায় রোজা ও রোজায় ওষুধ
এ ক্ষেত্রে রুগী সুস্থ হওয়ার পর যে কয়টি রোজা রাখতে পারেনি, সে কয়টি কাযা করে নিবে। আর যদি রুগীর সুস্থ হওয়ার কোন রকম সম্ভাবনা না থাকে অথবা রোগী এ অবস্থায় মারা যায়, তবে এক রোজার পরিবর্তে একজন মিসকিনকে দুই বেলা খাইয়ে দিবে।  
 
রমজান মাসে রোজা রাখার শর্ত হল মুখে কোন খাবার খাওয়া যাবে না। সে হিসেবে মুখে খাওয়ার ওষুধগুলো দিনের বেলা খাওয়ার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু যে ওষুধ চামড়ার নিচে দিতে হয়, যেমন: ইনসুলিন, তার ব্যপারে শরীয়তের নির্দেশনা কি? তেমনি শ্বাসনালীতে যে ওষুধ ব্যবহার করা হয়, যেমন: ইনহেলার, চামড়ার ওপরে যে মলম ব্যবহার করা হয় ইত্যাদির ব্যাপারে ইসলামের বিধি-বিধান কি?  
 
এ প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে গিয়ে ইসলামের ফকিহরা গবেষণা করেছেন, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও বিজ্ঞানীদের সাথে আলোচনা করেছেন এবং রমজানে কতগুলো ঔষধের ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম নির্ধারণ করেছেন। নবম ফিকহ-মেডিকেল সেমিনার, ২০০৯, কাসাব্লাংকা, মরোক্কো-এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিচের ঔষধ বা ঔষধ গ্রহণের পদ্ধতিগুলো রোজা ভঙ্গের কারণ হয় না-
চোখের ও কানের ড্রপ।
 
∙ যে বস্তুগুলো ত্বক দিয়ে শরীরের শোষন হয় যেমন: ক্রিম, ওয়েনমেন্ট, ঔষধযুক্ত প্লাস্টার।
 
∙ যোনিপথে ব্যবহৃত পেসারি।
 
∙ রক্তনালীতে প্রদানকৃত খাদ্য উপাদান (যেগুলো শরীরে পুষ্টি স্বাভাবিক রাখার উদ্দেশ্যে দেয়া হয়) ব্যতিত যে ইনজেকশনগুলো ত্বকে, মাংসপেশিতে এবং রক্তনালীতে দেয়া হয় সেগুলো।
 
∙ অক্সিজেন এবং অজ্ঞান করার প্রয়োজনে ব্যবহৃত গ্যাস।
 
∙ এনজাইনার ব্যথা কমানোর জন্য জিহবার নীচের ব্যবহৃত নাইট্রোগ্লিসারিন ট্যাবলেট বা স্প্রে।
 
∙ মাউথওয়াশ, মুখের স্প্রে যদি না গলার ভিতর চলে যায়।
 
 
কমিটির অধিকাংশের মতানুসারে নিচের ঔষধ বা বিষয়গুলোও এর অন্তর্ভুক্ত:
∙ নাকের ড্রপ, স্প্রে, ইনহেলার।
 
∙ পায়খানার রাস্তায় ব্যবহৃত ইনজেকশন।
 
∙ পুরোপুরি অজ্ঞান করে করা সার্জারি (যদি রোগী রোজা রাখতে চান)।
 
লিভারের অসুখে রোজা: লিভারের রোগ বিভিন্ন ধরনের তাই রোজার হুকুমও রোগী ভেদে ভিন্ন হওয়া স্বাভাবিক। লিভারের রোগগুলোকে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি এ দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তন্মধ্যে একিউট ভাইরাল হেপাটাইটিস স্বল্পমেয়াদে জণ্ডিস হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। ভাইরাল হেপাটাইটিসের  রোগীর ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব ও শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয়। একেবারেই খেতে অক্ষম হলে রক্তনালীতে সেলাইন দেয়ারও প্রয়োজন হতে পারে। সে হিসেবে ভাইরাল হেপাটাইটিসে রোজা রাখা উচিৎ নয়।
 
অন্যদিকে, যে দীর্ঘমেয়াদি লিভার প্রদাহে আমাদের দেশের রোগীরা বেশি ভুগেন তার মধ্যে আছে সিরোসিস, যা দু ধরনের হতে পারে- কমপেনসেটেড ও ডিকমপেনসেটেড। কমপেনসেটেড সিরোসিস রোগীর খাওয়ার প্রতি অনীহা, পেটের পীঁড়া, আমাশয় বা ডায়রিয়া থাকতে পারে। এই সময় রোগীর উপসর্গের মাত্রা কম থাকলে এবং রোগী সাধ্যমত খেতে সক্ষম হলে রোজা রাখতে পারে। ডিকমপেনসেটেড সিরোসিস রোগী অনেক বেশি অসুস্থ থাকে, পেটে পানি চলে আসে, চোখ হলুদ হয়ে যায় এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যায়। সুতরাং এ সময় রোজা রাখা যাবে না। এছাড়া, লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর পক্ষে রোজা রাখা অসম্ভব ।
 
ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত রোগীর জন্য রোজা রাখার ব্যাপারে কোন বাধা তো নেই-ই, বরং রোজা তার লিভারের ফ্যাট কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
 
পেপটিক আলসার তথা পাকস্থলীর ঘা জাতীয় সমস্যায় রোজা আমাদের দেশের মানুষের সাধারণ সমস্যাগুলোর অন্যতম হল- বদহজম, বুকে জ্বালাপোড়া, মুখে তিতা পানি আসা। এই লক্ষণগুলোর অন্যতম প্রধান কারণ হল, নন-আলসার ডিসপেপসিয়া। এক্ষেত্রে পাকস্থলীতে ঘা থাকে না। 
 
কিন্তু রোগীর বুক জ্বালাপোড়া করে, পেটে গ্যাস হয়, মুখ দিয়ে তিতা পানি আসে। সাধারণত রেনিটিডিন বা ওমিপ্রাজল জাতীয় ঔষধ খেলে সমস্যা দূরীভূত হয়। সুতরাং এ সমস্যায় আক্রান্ত রোগীরা ইফতারের সময় এবং সেহরির আগে নিয়মিত ঔষধ সেবন করে নিশ্চিন্তে রোজা রাখতে পারেন। 
 
অন্যদিকে যাদের পেপটিক আলসার ধরা পড়েছে, তাদের যদি রক্তবমি হওয়ার বা আলকাতরার মত কালো পায়খানা হওয়ার ইতিহাস থাকে, তাদের উচিৎ হবে রমজান মাস আসার আগেই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া।
 
বিবার্তা/জিয়া
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com