বাংলাদেশের অনেক জায়গায় বিশেষ করে চাঁদপুর, দিনাজপুর ও চট্টগ্রামের বেশ কিছু স্থানে সৌদি আরবের সাথে মিলিয়ে রমজান মাস শুরু এবং ঈদ পালিত হয়ে থাকে। এতে কিছুটা ভুল-বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। আসুন দেখি কুরআন ও হাদীসে এই সম্পর্কে কী ব্যাখ্যা আছে। সহীহ মুসলিমে বলা হয়েছে, প্রত্যেক দেশের জন্য চাঁদ দেখা জরুরি, আর যখন মুসলিমগণ এক দেশে চাঁদ দেখবে সেটা থেকে দূর দেশের জন্য সে হুকুম সাব্যস্ত হবে না। ইবনে আব্বাস রা. থেকে এ হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে।
প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ডা. জাকির নায়েক একটি সাক্ষাৎকার নিচে দেয়া হল যাতে তিনি এ সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, এই ব্যাপারে আলিমদের মধ্যে মতভেদ আছে। একদল বলেন, সারা বিশ্বের মুসলমানদের মক্কার সময় অনুসরণ করা উচিত। অন্য দলের আলেমগণ বলেন, এই সময়টি বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় সময়ে হওয়া উচিৎ।
আল্লাহ কুরআনে ইরশাদ করেছেন, রমজান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোজা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর। সূরা বাকারা: ১৮৫
মুহাম্মাদ সা. বলেছেন, তোমরা যখন নতুন চাঁদ দেখ তখন রোজা রাখ এবং নতুন চাঁদ দেখলে রোজা ভেঙে ফেল। বুখারী: ১৯০৭ ও ১৯০৯
সুতরাং এই হাদীসটির ওপর ভিত্তি করে ইবনে তাইমিয়াহ রহ. বলেন, সারা বিশ্বের সব জায়গা থেকে একই দিনে রমজানের চাঁদ দেখা অসম্ভব। সুতুরাং মক্কার সময়টি সারা বিশ্বে একযোগে অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
কুরআনে বলা হয়েছে, পানাহার কর যতক্ষণ না কালরেখা থেকে ভোরের শুভ্ররেখা পরিষ্কার দেখা যায়। তারপর রোজা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত। বাকারা: ১৮৭
কিন্তু সূর্যোদয় সারা বিশ্বে একই সময়ে হয় না বরং একেক দেশে একেক সময়ে হয়। সুতরাং রোজা পালনে স্থানীয় সময় অনুসরণ করতে হবে।
ডা. জাকির নায়েক আরও বলেন, হাদীসে পরিষ্কার বলা হয়েছে ওই দিন রোজা শুরু হবে যেদিন সবাই রোজা রাখবে, রোজা ভাঙতে হবে ওই দিন যেদিন সবাই রোজা ভাঙে আর কুরবানি করতে হবে ওই দিন যেদিন সবাই কুরবানি করে। তিরমিযী: ৬৯৭
সুতরাং হাদীসটি দ্বারা বোঝা যায়, একই শহরের লোকদের একই সাথে রোজা এবং ঈদ পালন করা উচিৎ। কারণ এমন কোনো বড় শহর নেই যেখানে একই দিনে চাঁদ দেখতে পাওয়া যায় না। সুতরাং তাদের একসাথে রোজা পালন করা উচিৎ। এ ক্ষেত্রে যারা নিজের এলাকার চাঁদ না দেখে দূরের কোনো দেশের চাঁদ দেখার ওপর ভিত্তি করে রোজা ও ঈদ পালন করে তাদেরটা বৈধ হবে না।
বিবার্তা/জিয়া