রোজার সময় আমাদের দেহের বিপাকক্রিয়ায় কিছুটা পরিবর্তন আসে। স্বাভাবিক হজমপ্রক্রিয়ার জন্য অতিরিক্ত তেল, মসলাযুক্ত খাবার, চর্বিজাতীয় খাবার খাওয়া ঠিক নয়। বিরিয়ানি, তেহারি, নেহারি, খাসির রোস্ট-জাতীয় খাবার সেহরি বা রাতে না খাওয়াই ভালো।
ইফতার বা সেহরিতে ঘরে তৈরি খাবার খাওয়া সবচেয়ে উত্তম। দোকানের ভাজা খাবারে ব্যবহার করা তেলের মান বা বেসনের বিশুদ্ধতা নিয়ে আমরা নিশ্চিত নই। বাজারের বাহারি খাবার খেয়ে অনেকেরই বদহজম, পেটফাঁপা বা বুকজ্বালা হতে দেখা যায়।
আমাদের শরীরের জন্য কার্বোহাইড্রেট বা শর্করাজাতীয় খাবার, অর্থাৎ ভাত, রুটি; প্রোটিন বা আমিষজাতীয় খাবার মাছ, মাংস; ডালজাতীয় খাবার এবং ফ্যাট বা চর্বিজাতীয় খাবার, অর্থাৎ মাখন, ঘি ইত্যাদি দরকার। পরিমিত সুষম খাবার খেলে শরীর সুস্থ থাকে এবং দিনের কাজগুলো সঠিকভাবে করা যায়।
রোজার সময় পানির ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেহরি, ইফতার ও রাতের খাবারের পর দুই থেকে আড়াই লিটার পানি পান করা উচিত। পানি আমাদের শরীরের বিপাকক্রিয়া ও কিডনির যথাযথ কাজের জন্য প্রয়োজন। পানি কম খেলে দিনে মুখ ও জিহ্বা শুকনো থাকে, পানিস্বল্পতার জন্য শরীরে ক্লান্তি আসে। লেবুর শরবতও উপকারী।
ইফতার: খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করা যেতে পারে। ঠাণ্ডা পানি, লেবুর শরবত পান করলে সারা দিনের পিপাসা দূর হয়। বাজারের রঙিন পানীয় বা পাউডার দিয়ে শরবত না তৈরি করে বেলের শরবত তৈরি করা যেতে পারে। এটি শরীরের জন্য উপকারি। ভেজানো চিঁড়া ও সামান্য চিনি দিয়ে শরবত তৈরি করা যায়। দইয়ের শরবত বা ডাবের পানিসহযোগে ইফতার খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত। কলা, পেঁপে, আমড়া, জাম্বুরা, আপেলসহ যেকোনো ফল কিছু পরিমাণে খাওয়া ভালো।
শসা তো অবশ্যই ভালো। কয়েক ঘণ্টা ভেজানো ছোলা বা ডাবলি মুড়ি দিয়ে খেতেও ভালো লাগে। বাসায় বেসন দিয়ে পালংশাকের পাতা ও পুঁইশাক ভেজে খেতে পারেন। তবে ভাজা খাবার কম খাওয়া উচিত। চিঁড়া-দই-কলা অনেকেরই প্রিয় খাবার। এ ছাড়া ফিরনি, পায়েস ও সেমাই খেতে পারেন। ডায়াবেটিস থাকলে মিষ্টিজাতীয় খাবার খেতে অবশ্যই বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। দিনের শেষে একবারে খুব বেশি খাবার খেয়ে ইফতার করলে অস্বস্তি লাগে এবং রাতে খেতে ইচ্ছা করে না। পরিমিত পরিমাণে ইফতার করে রাতে সামান্য হলেও খাওয়া ভালো।
রাতের খাবার: পেট ভর্তি করে ইফতারি খেয়ে রাতের খাবার না খাওয়াটা ঠিক নয়। শরীরের স্বাভাবিক বিপাকক্রিয়ার জন্য রাতে অল্প পরিমাণে খাওয়া দরকার। আটার তৈরি দুটি রুটি বা কিছুটা ভাত, সামান্য রান্না করা সবজি এবং এক টুকরো মাছ বা মুরগির মাংস মোটামুটিভাবে আদর্শ খাবার। রুটির সঙ্গে ছোলার ডাল ভুনা বা ঘন করে রান্না করা মসুরের ডাল, শসা, গাজর ও টমেটোর সালাদ অনেকেই পছন্দ করেন। একটু নরম করে রান্না খিচুড়ি, ডিম ভাজা বা রান্না, সঙ্গে শসা-গাজরের সালাদও খেতে পারেন। দুধ-কলা ও রুটির সঙ্গে মুরগির এক টুকরো মাংস দিয়ে রাতের খাবার শেষ করতে পারেন। যাদের ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও উচ্চরক্তচাপ আছে, তারা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে খাবার খাবেন।
সেহরি: ফজরের নামাজের আগে, অর্থাৎ সেহরির সময় পরিমিত পরিমাণে ভাত বা রুটির সঙ্গে কিছুটা সবজি, একটু ডাল ও মাছ বা মাংস খাওয়া যেতে পারে। ডালে প্রচুর প্রোটিন আছে; ডালের সঙ্গে সবজি ও ভাত বা রুটি এবং কিছুটা ফল খেলে শরীরের চাহিদা মিটে যায়। মাছ-মাংস বাদ দিয়ে দুধ-রুটি ও ফল খেলেও চলবে। গুরুপাকজাতীয় খাবার হজমে ব্যাঘাত ঘটায়। এ জন্য সেহরিতে সহজে হজম হয়, এমন খাবার খাওয়াই সবচেয়ে ভালো। আমাদের দেহের কোষগুলোর কার্যাবলি ঠিকভাবে সচল রাখতে বেশি পরিমাণে পানি পান করতে হবে। ভোররাতে উঠে এক বা দুই গ্লাস পানি পানের পর এবং খাওয়া শেষে আবার দুই গ্লাস বা কিছু বেশি পানি পান করা দরকার।
মনে রাখা জরুরি: শারীরিক যেকোনো রোগ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে রোজা রাখতে হবে। যাদের নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়, তারা ইফতার, সেহরি ও রাতের খাবারের আগে বা পরে নিয়মমতো ওষুধ খাবে। ডায়াবেটিসে ইনসুলিন সঠিক পরিমাণে নেওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নির্দেশ মেনে চলা উচিত। দিনে বা বিকেলে অতিরিক্ত ব্যায়াম না করাই ভালো। ইফতারের পর হালকা ব্যায়াম করা বা কিছুটা হাঁটা যায়। খুব বেশি শারীরিক পরিশ্রম করা ঠিক নয়, তবে কিছুটা কায়িক পরিশ্রম করা ভালো।
বিবার্তা/জিয়া