সিঁদুর বা কুঙ্কুমচর্চা প্রাচীন ভারতে কেবল নারীদের জন্য নির্দিষ্ট ছিল না। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সে যুগে এই বিশেষ প্রসাধানটি সবাই ব্যবহার করতেন। কালক্রমে পুরষের প্রসাধন-তালিকা থেকে সিঁদুর বাদ পড়ে। তবে আজও বেশ কিছু পুরুষ কপালে সিঁদুরের তিলক পরেন। বিশেষ করে শাক্ত মতাবলম্বীদের মধ্যে সিঁদুরের তিলকসেবার রেওয়াজ পুরোপুরি রয়েছে।
পুরুষদের ক্ষেত্রে বিরল হয়ে পড়লেও অধিকাংশ বিবাহিতা হিন্দু নারী সিঁদুরবিহীন অবস্থার কথা ভাবতেই পারেন না। অনেকেই বলে থাকেন, সিঁদুর একান্তভাবে বন্ধনের চিহ্ন। বিবাহিতা নারীকে সিঁদুরচিহ্নিত করে সমাজকে জানিয়ে দেয়া হয়, এই নারী অন্যের সম্পত্তি ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে ব্যাপারটা মোটেই এতটা সহজ-সরল নয়।
হিন্দু নারীর সিঁদুর পরা নিয়ে সাংস্কৃতিক নৃতত্ত্ব ভিন্ন কথা বলে। বিশেষজ্ঞদের মতে, লাল রঙের সিঁদুর কপালে দেয়ার অর্থ জড়িয়ে রয়েছে আদিম উর্বরাশক্তির উপাসনার মধ্যে। হিন্দু ধর্মের উৎস এক টোটেমবাহী কৌম সমাজে। সেখানে গাছ, পাথর, মাটি ইত্যাদিকে প্রাকৃতিক শক্তির প্রতীক বলে মনে করা হত। আর তাদের কাছে লাল রং ছিল সৃষ্টির প্রতীক। নারীরা সন্তান জন্ম দেন, তাই তারাও সৃষ্টির প্রতীক। বিবাহিতা নারীদের কপালে সিঁদুর তাদের সন্তানধারণক্ষম হিসেবেই বর্ণনা করে। তার বেশি কিছু নয়।
তবে নৃতাত্ত্বিকদের এই বক্তব্যের সঙ্গে হিন্দু শাস্ত্রের কোনো মিল নেই। শাস্ত্র অনুযায়ী, লাল সিঁদুর শক্তির প্রতীক। মানব শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন দেবতা অবস্থান করেন। ললাটে অধিষ্ঠান করেন ব্রহ্মা। লাল সিঁদুর ব্রহ্মাকে তুষ্ট করার জন্য ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া, কপালের ঠিক মধ্যভাগে সূর্যালোক পড়ার ব্যাপারটাকে আটকাতেও সিঁদুর ব্যবহৃত হয় বলে ধারণা করা হয়।
কপালে সিঁদুর প্রয়োগেরও কিছু বিধি ও ফলনির্দেশ শাস্ত্র প্রদান করে। জানা যায়, তর্জনি দিয়ে সিঁদুর পরলে শান্তি পাওয়া যায়। মধ্যমা দিয়ে ধারণ করলে আয়ু বৃদ্ধি পায়।
প্রাচীনকালে হলুদ গুঁড়ো দিয়ে সিঁদুর তৈরি হত। তারপরে তাতে লাল কালি মিশিয়ে রাঙিয়ে তোলা হত। সূত্র: এবেলা
বিবার্তা/নিশি