ঈদ অর্থ খুশি। ঈদ অর্থ উৎসব। দুনিয়ার সব ধর্মের মানুষই উৎসব পালন করে। প্রাক-ইসলামী যুগেও উৎসব পালনের প্রথা ছিল। হাদিস শরিফে উল্লিখিত রয়েছে রসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় আগমন করলেন তখন মদিনাবাসীর দুটি দিবস ছিল। যে দিবসে তারা খেলাধুলা করত।
রসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, এই দুই দিনের কী তাত্পর্য আছে? তখন তারা উত্তর দিল— আমরা জাহেলি যুগে এই দুই দিনে খেলাধুলা করতাম। তখন রসুলে করিম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ দুই দিনের পরিবর্তে তোমাদের এরচেয়ে শ্রেষ্ঠ দুটি দিন দিয়েছেন। তা হলো ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর।’ (আবু দাউদ ৯৫৯)
অন্যান্য ধর্মের ধর্মীয় উৎসবের সঙ্গে ইসলামের উৎসবের পার্থক্য রয়েছে। ইসলামের উৎসবের সঙ্গে পবিত্রতার সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ঈদুল ফিতরের খুশি তাদের জন্য যারা পুরা রমজান মাসে রোজা রেখেছে, নামাজ পড়েছে, কোরআন তেলাওয়াতসহ অন্যান্য ইবাদত করেছে।
একমাত্র আল্লাহর ভয়ে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও রোজা ভাঙেনি। আর যারা রোজা রাখেনি, ইবাদত-বন্দেগি থেকে দূরে ছিল তাদের জন্য ঈদের খুশি নয়। রোজাদারের জন্য ঈদের আনন্দের বিষয়টি হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে।
সাহাবি হজরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, ‘শবেকদরে জিবরাইল (আ.) ফেরেশতাদের একটি জামাতসহ অবতরণ করেন। যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে, বসে আল্লাহর জিকির করতে থাকে বা ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকে তার জন্য রহমতের দোয়া করেন। অতঃপর যখন ঈদুল ফিতরের দিন আসে তখন আল্লাহতায়ালা ফেরেশতাদের সামনে বান্দাদের ইবাদত-বন্দেগি নিয়ে গর্ব করেন। কারণ, ফেরেশতারা মানুষকে দোষারোপ করেছিল (অর্থাৎ পৃথিবীতে মানুষ প্রেরণকালে আপত্তি জানিয়েছিল)।
অতঃপর আল্লাহতায়ালা জিজ্ঞাসা করেন, হে ফেরেশতারা! যে মজদুর নিজ দায়িত্ব পুরাপুরি পালন করে তার বদলা কি হতে পারে? ফেরেশতারা আরজ করেন, হে আমাদের রব! তার বদলা এই যে, তার পারিশ্রমিক তাকে পরিপূর্ণ দিয়ে দেওয়া হোক। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, হে ফেরেশতারা! আমার বান্দা-বান্দীরা আমার ফরজ হুকুম (রমজান মাসের রোজা) পালন করেছে। এরপর তারা ঈদগাহের দিকে যাচ্ছে। আমার ইজ্জতের কসম, আমার প্রতাপের কসম, আমার দানশীলতার কসম, আমার বড়ত্বের কসম, আমার সুউচ্চ মর্যাদার কসম! আমি তাদের দোয়া অবশ্যই কবুল করব। তারপর আল্লাহতায়ালা বান্দাদের প্রতি লক্ষ্য করে বলেন, যাও! আমি তোমাদের গুনাহসমূহ মাপ করে দিলাম এবং তোমাদের গুনাহগুলোকে নেকি দ্বারা পরিবর্তন করে দিলাম। অতঃপর তারা ঈদগাহ হতে নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসে।’ বায়হাকি।
রোজাদারের জন্যই যে কেবল পবিত্র ঈদ এসেছে। উপরোক্ত হাদিস সে সাক্ষ্য দেয়। মহান আল্লাহ আমাদের ঈদ পালনের তৌফিক দান করুন। আমিন।
বিবার্তা/জিয়া