রাসুল [সা.] হারিস ইবনে উমায়র আল-আযাদীকে [রা.] তার পত্র দিয়ে বসরার শাসনকত্যা শুরাহবিল ইবনে আমর-গাসসানীর নিকট পাঠান। তিনি ছিলেন রোম সাম্রাজ্যের অধীন। শুরাহবিল মুসলিম দূতকে শহিদ করে দেয়। দূত হত্যা সবযুগেই আন্তর্জাতিক আইনের বিরোধী। তাই রাসুলের [সা.] নিকট এই খবর পৌঁছতেই তিনি একটি সেনাবাহিনী বসরায় প্রেরণের সিদ্ধান্ত নেন।
৮ হিজরির জমাদিউল আওয়াল মাসে ৩ হাজার মুজাহিদ নিয়ে একটি সেনাবাহিনী রাসুলের [সা.] মুক্ত গোলাম জায়েদ ইবনে হারেসার [রা] নেতৃত্বে রোম অভিমুখে যাত্রা করে। রাসুল [সা.] তাদের হেদায়াত দান করেন- যদি জায়েদ শহিদ হয়, তবে জাফর ইবনে আবু তালেব [রা.] আমির হবে। যদি সেও শহিদ হয় তাহলে আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা [রা.] বাহিনীর আমির হবে। তাদের মোকাবেলা হতে যাচ্ছিল তৎকালীন এক সর্ববৃহৎ সাম্রাজ্যের সঙ্গে।
মুসলিম ফৌজ মা‘আন নামক স্থানে ছাউনি ফেলেছে জানতে পারলেন। রোমের সম্রাট হেরাক্লিয়াস বালকা নামক স্থানে এক লক্ষ রোমক সৈন্য নিয়ে অবস্থান করছেন এবং তার সঙ্গে বিরাট সংখ্যক আরব কবিলা, যেমন লাখম, জুখাম, বালকায়ন, বাহরা ও বিল্লী এসে মিলিত হয়েছে। মুসলমানরা এত বড় বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করার ব্যাপারে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করতে লাগলেন। এ সময় আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা [রা.] মুসলিম মুজাহিদদের উৎসাহিত করলেন এবং বললেন- কসম খোদার, সংখ্যাবলে লড়াই করি না। আমরা শত্রুর মোকাবেলা করি সেই দ্বীনের শক্তিতে যা দিয়ে আল্লাহ তায়ালা আমাদের সৌভাগ্যবান করেছেন।
মুসলমানরা মূতা নামক একটি গ্রামে মোর্চাবন্দি হলো। জায়েদ ইবনে হারেসা [রা.], যিনি রাসুলের [সা.] দেয়া পতাকা বহন করছিলেন, বল্লমের আঘাতে শহিদ হলেন। তারপর হজরত জাফর [রা.]-ও স্বহস্তে পতাকা নিয়ে যুদ্ধ করতে থাকলেন। একসময় তিনিও শাহাদাত বরণ করেন। তারপর আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা [রা.] শহিদ হলে সকলে মিলে যুদ্ধের অধিনায়কের দায়িত্বভার হজরত খালেদ বিন অলিদের [রা] ওপর চাপিয়ে দিলেন এবং তিনি পতাকা নিজ হাতে তুলে নিলেন। তিনি মুসলিম বাহিনীকে দক্ষিণ দিকে ঘুরিয়ে নিলেন আর শত্রু উত্তর দিকে চলে গেল।
হজরত খালিদ [রা.] তার লোকদেরকে একটা বেশ উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় আপন বাহিনীর পশ্চাতে মোতায়েন করেন। তারা প্রভাতে এমন বুলন্দ আওয়াজ তুলে যুদ্ধের ময়দানে এসে উপস্থিত হয় যে, শত্রু ভেবে বসে, বুঝি বা মদিনা থেকে নতুন কোন সাহায্যকারী বাহিনী এসে গেছে! ফলে রোমক ফৌজের অন্তরে মুসলমানদের ভীতিকর প্রভাব পড়ে এবং তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে থাকে, ৩ হাজার ফৌজই যখন আমাদের সামনে এই বিপদ হয়ে দেখা দিয়েছে এবং তুলকালাম কাণ্ড ঘটাচ্ছে, তখন তাদের আরও নতুন সাহায্যকারী সৈন্য, যারা সংখ্যা ও শক্তির পরিমাপ আমাদের জানা নেই, না জানি এ মুহূর্তে কী করে বসে। এই ভেবে রোমকদের মনোবল ভেঙে যায় এবং তারা যুদ্ধের ইচ্ছা ত্যাগ করে। আর এভাবেই আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের বিজয় দান করেন। (নবিয়ে রহমত)। মূল- সাইয়েদ আবুল হাসান আলি নদভি [রহ.]
অনুবাদ- মাওলানা মনযূরুল হক।
বিবার্তা/জিয়া