এটা সর্বজন বিদিত, শূকরের মাংস ভক্ষণ ইসলামে নিষিদ্ধ। নিম্নে বর্ণিত বিষয়গুলো এই নিষিদ্ধতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরবে।
কুরআনে শূকরের মাংস নিষিদ্ধতা: শূকরের মাংস খাওয়া নিষেধ অন্তত চারটি স্থানে উল্লেখ করা হয়েছে ২:১৭৩, ৫:৩, ৬:১৪৫, এবং ১৬:১১৫।
‘নিষিদ্ধ করা হলো তোমাদের জন্য (খাদ্য- হিসেবে) মৃত জন্তুর মাংস, প্রবাহিত রক্ত, শূকরের মাংস।’ কেন নিষেধ করা হয়েছে তার সন্তোষজনক উত্তরের জন্য কুরআনের উল্লেখিত আয়াত সমূহেই যথেষ্ট।’
বাইবেল শুকুরের মাংস ভক্ষণের নিষিদ্ধতা: একজন খ্রিস্টান তার ধর্মগ্রন্থসমূহের উল্লেখ দেখে সন্তুষ্ট হলে দেখতে পাবে, বাইবেল ‘লেভীটিকাস্থ গ্রন্থে শূকরের মাংস খেতে নিষেধ করেছে। বলা হয়েছে:
‘এবং শূকর যদিও তার খুর দ্বিখণ্ডিত এবং খুরযুক্ত পদ বিশিষ্ট। এমনকি সে চিবিয়ে খায়, জাবর কাটে না। (তবু) ওটা অপরিচ্ছন্ন (অপবিত্র) তোমার জন্য।’
একই গ্রন্থের ১১ অধ্যায় ৭ ও ৮ স্তবকে বলা হয়েছে: ‘ওগুলোর মাংস তুমি খাবে না এবং ওগুলোর মৃতদেহ তুমি স্পর্শও করবে না, ওগুলো ‘অপবিত্র’ তোমার জন্য।’
বাইবেলের পঞ্চম গ্রন্থ ‘ডিউট্যারনমি’ তেও শূকর মাংস ‘অপবিত্র’ বলা হয়েছে: ‘আর শূকর- কারণ তার খুর দ্বিখণ্ডিত, এমনকি চিবিয়ে খায়, জাবর কাটে না, ওটা অপবিত্র তোমার জন্য; তুমি ওগুলোর মাংস খাবে না, না ওগুলোর মৃতদেহ তুমি স্পর্শ করবে। (ডিউট্যারনমি: ১৪:৮) বাইবেলের ‘আইযায়াহ, গ্রন্থের ৬৫ অধ্যায় ২ থেকে ৫ স্তবকেও একই নিষিদ্ধতা রয়েছে।
শূকরের মাংস ভক্ষণ বেশ কিছু মারাত্মক রোগের কারণ: অন্যান্য অমুসলিম ও নাস্তিকরা হয়তো উপযুক্ত কারণ ও বিজ্ঞানের যুক্তি প্রমাণের মেনে নিতে পারে- শূকর মাংস ভক্ষণ কমপক্ষে সত্তরটি রোগের উদ্ভব ঘটাতে পারে। প্রথমত, আক্রান্ত হতে পারে বিভিন্ন প্রকার ক্রিমির দ্বারা। যেমন বৃত্তাকার ক্রিমি, ক্ষুদ্র কাঁটাযুক্ত ক্রিমি এবং বক্র ক্রিমি। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ও মারাত্মক হলো ‘টাইনিয়া সোলিয়াম’। সাধারণভাবে যেটাকে ‘ফিতা ক্রিমি’ বলা হয়। এটা পেটের মধ্যে বেড়ে ওঠে এবং অনেক লম্বা হয়। এর ডিম রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে এবং দেহের প্রায় সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গে ঢুকে পড়তে পারে। যদি এটা মস্তিস্কে ঢোকে, তাহলে কারণ ঘটাতে পারে স্মৃতি ভ্রষ্ট হয়ে যাবার। হৃদযন্ত্রের মধ্যে ঢুকলে বন্ধ করে দিতে পারে হৃদযন্ত্রক্রিয়া। চোখে ঢুকতে পারলে অন্ধত্বের কারণ, কলিজায় ঢুকতে পারলে সেখানে মারাত্মক ক্ষতের সৃষ্টি করে অর্থাৎ এটা শরীরের যে কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কর্মক্ষমতাকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
এছাড়া রয়েছে আরো ভয়ঙ্কর কৃমি যা ভালো করে রান্না করার পরও দেখা গেছে, এর ডিম্ব ধ্বংস হয় না।
শূকরের মাংসে চর্বি উৎপাদনের উপাদান প্রচুর: শুকর মাংসে পেশি তৈরির উপাদান অত্যন্ত নগন্য। পক্ষান্তরে চর্বি উৎপাদনের উপাদান প্রচুর। এ জাতীয় চর্বির বেশির ভাগ রক্তনালীতে জমা হয়, যা কারণ ঘটায় হাইপা টেনশন ও হার্ট অ্যাটাকের। অবাক হবার কিছু নেই যে ৫০ শতাংশ আমেরিকান হাইপারটেনশনের রোগী।
পৃথিবীর বুকে শূকর নোংরা ও পঙ্কিলতম প্রাণী: এ প্রাণীটি বসবাস করতে সাচ্ছন্দ বোধ করে নিজেদের বিষ্ঠা, মানুষের মল ও ময়লাপূর্ণ জায়গায়। পরিচ্ছন্ন জায়গায় রাখলেও এরা সুযোগ পেলেই ময়লা জায়গায় চলে যায়।
শূকর নির্লজ্জতায় জঘন্য পশু: ভূপৃষ্ঠের ওপরে শূকর নির্লজ্জতম প্রাণী। একমাত্র পশু যেটা তার স্ত্রী-সঙ্গীর সাথে সংগম করার জন্য অন্যান্য পুরুষ-সঙ্গী ডেকে নেয়। আমেরিকার ও ইউরোপের অধিকাংষ মানুষের প্রিয় খাদ্য শূকর মাংস। খাদ্যভ্যাস আচরণে প্রকাশ পায়, বিজ্ঞানের এ সূত্রের জীবন্ত নমুনা ওরাই। বিজ্ঞান বলে, মানুষ যা খায়, তার প্রভাব পড়ে তাদের চরিত্রে।
বিবার্তা/জিয়া