বিভিন্ন পুরাণে শনি দেবতা

বিভিন্ন পুরাণে শনি দেবতা
প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০১৬, ১৫:২২:৩৫
বিভিন্ন পুরাণে শনি দেবতা
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+
শনি গ্রহদেবতা হিসেবে সবিশেষ পরিচিত। জ্যোতিষশাস্ত্রে জন্মছকে এর অবস্থান বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়। শনি দ্বাদশে, জন্মরাশিতে ও দ্বিতীয়ে অবস্থানকালে সাড়ে সাত বছর মানুষকে প্রচণ্ড কষ্ট দেয়। জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় শনি গ্রহ রূপে গুণে অসামান্য। 
 
তার কারণ, এই গ্রহকে ঘিরে থাকা চাকতিগুলি; যাকে আমরা বলি ‘শনির বলয়’। তুষারকণা, খুচরো পাথর আর ধূলিকণায় সৃষ্ট মোট নয়টি পূর্ণ ও তিনটি অর্ধবলয় শনিকে সর্বদা ঘিরে থাকে। 
 
শনি দৈত্যাকার গ্রহ। এর গড় ব্যাস পৃথিবীর তুলনায় নয় গুণ বড়। এর অভ্যন্তরভাগে আছে লোহা, নিকেল এবং সিলিকন ও অক্সিজেন মিশ্রিত পাথর। তার উপর যথাক্রমে একটি গভীর ধাতব হাইড্রোজেন স্তর, একটি তরল হাইড্রোজেন ও তরল হিলিয়াম স্তর এবং সবশেষে বাইরে একটি গ্যাসীয় স্তরের আস্তরণ।
 
শনি গ্রহের রং হালকা হলুদ। এর কারণ শনির বায়ুমণ্ডলের উচ্চবর্তী স্তরে অবস্থিত অ্যামোনিয়া ক্রিস্টাল। শনির ধাতব হাইড্রোজেন স্তরে প্রবাহিত হয় এক ধরনের বিদ্যুৎপ্রবাহ। এই বিদ্যুৎপ্রবাহ থেকেই শনির গ্রহীয় চৌম্বক ক্ষেত্রের উদ্ভব ঘটেছে। এখনও পর্যন্ত শনির শতাধিক উপগ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে এবং তার মধ্যে তিপ্পান্নটির সরকারিভাবে নামকরণ করা হয়েছে। 
 
অবশ্য এগুলি ছাড়াও শনির শতাধিক গ্রহাণু আছে। সৌরজগতের দ্বিতীয় বৃহত্তম উপগ্রহ টাইটান শনির বৃহত্তম উপগ্রহ। এটি আকারে মঙ্গলের চেয়েও বড়ো এবং এটিই সৌরজগতের একমাত্র উপগ্রহ যার একটি সমৃদ্ধ বায়ুমণ্ডল আছে। 
 
উল্লেখ্য, শনিদেবকে নিয়ে বিভিন্ন পুরাণে বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ আছে।
গ্রিক পুরাণ: আগে ছিল আদি জনক ও জননী। তাদের সন্তানরা হচ্ছে টাইটান আর দেবতারা হলেন তাদের নাতি নাতনী। টাইটানরা বড় দেবতাকুল। ক্রোনস প্রথম প্রজন্মের সর্বকনিষ্ঠ টাইটান, পিতা ইউরেনাসকে হত্যা করে দেবরাজ্য দখল করে ফেলেন। তারপর তার পদ রক্ষার জন্য একে একে নিজের সব সন্তানকে খেয়ে ফেলে, কেবল জিউসকে ছাড়া। রোমানরা যখন গ্রিস দখল করে ক্রোনসের নাম বদল করে স্যাটার্ন রাখে। স্যাটার্ন থেকে শনি গ্রহ এবং স্যাটার ডে বা শনিবারের নামকরণ। পিতাকে ও নিজ সন্তানদের হত্যা এবং আরও অনেক রক্তপাত করার কারণে হয়তো এই দেবতার নামের সাথে খারাপ বা নেগেটিভ ধারণা চলে আসে।
 
স্কন্দ পুরাণ: শিপ্রা ও ক্ষাতা নদীর সংযোগস্থলে জন্মগ্রহণ করেই শনি ত্রিলোক আক্রমণ করেন। আতঙ্কিত ইন্দ্র ছুটলেন ব্রহ্মার কাছে। নিরুপায় ব্রহ্মা সূর্যের কাছে। এর আগেই শনি দ্বারা আক্রান্ত সূর্য ব্রহ্মাকেই শনিকে সংযত করার অনুরোধ করলেন। ব্রহ্মা গেলেন বিষ্ণুর কাছে। বিষ্ণু গেলেন শিবের কাছে। শিব শনিকে ডেকে অত্যাচার করতে বারণ করলেন। তখন শনি শিবকে তাঁর জন্য খাদ্য, পানীয় ও বাসস্থানের উপায় করতে বললেন। শিব শনিকে মেষ থেকে মীন রাশিচক্রে ভ্রমণ করার ব্যবস্থা করে দিলেন। নিয়ম মত জন্মরাশি, দ্বিতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও দ্বাদশে শনি সর্বদাই ক্রুদ্ধ হবেন। কিন্তু তৃতীয়, ষষ্ঠ বা একাদশ স্থানে এলে তিনি উদার। পঞ্চম বা নবম স্থানে এলে তিনি উদাসীন। এই শনির আরেক নাম শনৈশ্চর। সন্তুষ্ট হলে তিনি লোককে দেবেন রাজ্য, অসন্তুষ্ট হলে নেবেন লোকের প্রাণ।
 
উক্ত পুরাণের নাগর ও প্রভাস খণ্ড মতে, অযোধ্যার জ্যোতিষীগণ দশরথকে সাবধান করে বলেছিলেন, শনিগ্রহ শীঘ্রই রোহিণী ভেদ করবেন। আর তার ফলে বারো বছর ধরে রাজ্যে ভীষণ অনাবৃষ্টি হবে। এই কথা শুনে ইন্দ্রের দেয়া দিব্য রথে চড়ে দশরথ তৎক্ষণাৎ শনির পিছন ছুটলেন। সূর্য ও চন্দ্রের পথ অতিক্রম করে একেবারে নক্ষত্রমণ্ডলে গিয়ে শনির সামনে উপস্থিত হয়ে রাজা বললেন, ‘তুমি রোহিণীর পথ পরিত্যাগ কর। না করলে, আমি তোমাকে বধ করব।’ 
 
শনি দশরথের এই রকম সাহস দেখে অবাক হয়ে গেলেন। তিনি রাজার পরিচয় জানতে চাইলে দশরথ আত্মপরিচয় দিলেন। শুনে শনি বললেন, ‘আমি তোমার সাহস দেখে অত্যন্ত প্রীত হয়েছি। আমি যার দিকে তাকাই, সেই ভস্ম হয়ে যায়। তবু তুমি প্রজাহিতের জন্য নিজের প্রাণ তুচ্ছ করে আমার কাছে এসেছো, এতে আমি আরও বেশি খুশি হয়েছি। যাও, আমি কথা দিলাম, রোহিণীর পথ আমি আর কোনোদিনও ভেদ করব না।’
 
কালিকা পুরাণ: সতীর দেহত্যাগের পর, মহাদেব তীব্র রোদন করতে থাকলে, তাঁর চোখ থেকে বিপুল পরিমাণ জলরাশি নির্গত হতে থাকে। এই জলরাশি পৃথিবীতে পতিত হলে ভূমণ্ডল দগ্ধ হবে। এই কারণে দেবতাদের অনুরোধে শনি এই জল গ্রহণ করেন। কিন্তু শনি এই জল ধারণে অসমর্থ হয়ে জলাধার নামক পর্বতে নিক্ষেপ করেন। এই জল পরে বৈতরণী নামে প্রবাহিত হয়েছে। [৯-৩৭। অষ্টাদশোহধ্যায়। কালিকা পুরাণ]
 
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ: একদিন শনির ধ্যানের সময়, তাঁর স্ত্রী সুন্দর বেশভূষা নিয়ে তাঁর কাছে এসে কামতৃপ্তি প্রার্থনা করলেন। ধ্যানমগ্ন শনি সেদিকে খেয়াল না করাতে অতৃপ্তকাম পত্নী শনিকে অভিশাপ দিলেন, আমার দিকে তুমি ফিরেও চাইলে না! এরপর থেকে যার দিকে চাইবে, সে-ই ভস্ম হয়ে যাবে!
 
বিবার্তা/জিয়া
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com