হজের বিভিন্ন শব্দ ও স্থান পরিচিতি

হজের বিভিন্ন শব্দ ও স্থান পরিচিতি
প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০১৬, ১১:৫৫:৪৬
হজের বিভিন্ন শব্দ ও স্থান পরিচিতি
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+
হজ সম্পর্কে ধারণা পেতে হলে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দের সাথে পরিচয় ঘটা জরুরি। কেননা হজ বিষয়ক আলোচনায় এ শব্দগুলো বার বার সামনে আসে। হজের সাথে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ শব্দগুলোর পরিচয় পর্যায়ক্রমে নিচে তুলে ধরা হলো:
 
হজ: ‘হজ’শব্দের অর্থ হলো একত্রিত হওয়া। শরিয়াতের পরিভাষায় মহান আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী তাঁর সন্তুষ্টির জন্য যিলহজ মাসের ৯ তারিখে ইহরাম অবস্থায় যোহর থেকে আসর পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান, পরবর্তী তিনদিনের মধ্যে তাওয়াফে জিয়ারাত সম্পাদন অর্থাৎ বায়তুল্লাহ্ শরীফ জিয়ারাতের নাম হজ। তবে ওয়াজিব আদায়ও হজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এগুলো হলো: ৯ যিলহজ রাতে মুযদালিফায় অবস্থান, ৯, ১০ ও ১১ যিলহজ শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ, কুরবানী করা, মাথার চুল কামানো এবং উপরোক্ত কাজগুলো তারতীবের সাথে অর্থাত্ ক্রমানুসারে আদায় করাও হজের অংশ।
 
ইহরাম: আড়াই হাত বহরের পাঁচ ও ছয় হাত দুই খণ্ড সাদা কাপড় যার প্রথমটি (পাঁচ হাত) লুঙ্গির মতো নিচে এবং দ্বিতীয়টি (ছয় হাত) চাদরের মতো গায়ে জড়ানো থাকে তার নাম ইহরাম।
 
উমরাহ্: ইহরাম অবস্থায় বায়তুল্লাহ্ শরীফে প্রবেশ করে কাবা ঘর তাওয়াফ করা এবং সাঈ করার পর মাথার চুল ছাঁটা বা মাথা মুড়ানোর নাম উমরাহ্। উমরাহ্ যে কোন সময় করা যায়।
 
মীকাত: যে কোন স্থান থেকে ইহরাম বাঁধা যায় না। কিছু নির্ধারিত স্থান রয়েছে যেখান থেকে ইহরাম বাঁধতে হয়। ওই সকল নির্ধারিত স্থানকে মীকাত বলে। বাংলাদেশীদের জন্য মীকাত হলো ইয়ালামলাম। বিমানযোগে হজ যাত্রা করলে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানে ওঠার আগেই হজক্যাম্প থেকে ইহরাম বেঁধে নিতে হবে। সমুদ্রপথে জাহাজে বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রা করলে জিদ্দা পৌঁছেও ইহরাম বাঁধা যায়।
 
শাওত: বায়তুল্লাহ শরীফে অবন্থিত কাবাঘরকে কেন্দ্র করে একবার প্রদক্ষিণ করাকে শাওত বলে।
 
তাওয়াফ: হজ বা উমরার উদ্দেশে মক্কা মোয়াজজমার বায়তুল্লাহ শরীফে অবস্থিত কাবাঘরকে কেন্দ্র করে হাজরে আসওয়াদ থেকে শুরু করে আবার হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত সাতবার চক্কর দেয়ার নাম ‘তাওয়াফ’।
 
তাওয়াফে জিয়ারাত: তাওয়াফে জিয়ারাত হলো হজের উদ্দেশ্যে ইহরাম বেঁধে যিলহজ মাসের ৯ তারিখে আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের পর ১২ যিলহজ তারিখের মধ্যে কাবাঘর তাওয়াফ করা। এটা হজের অন্যতম রোকন।
 
বিদায়ী তাওয়াফ: হজ সম্পাদনের পর সময় থাকলে আরও কিছুদিন পবিত্র মক্কা নগরীতে অবস্থান করে বা মদীনা থেকে আবার মক্কায় ফিরে দেশে ফেরার পূর্ব মুহূর্তে অর্থাত্ বিদায় গ্রহণের পূর্বে কাবাঘর তাওয়াফ করাকে বিদায়ী তাওয়াফ বলা হয়। তবে মক্কা থেকে মদীনা হয়ে দেশে প্রত্যাবর্কনের ক্ষেত্রে মদীনা রওয়ানা হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে বিদায়ী তাওয়াফ করতে হয়।
হজের বিভিন্ন শব্দ ও স্থান পরিচিতি
তালবিয়া: তালবিয়ার উচ্চারণ হলোঃ লাববাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লাশারিকা লাকা লাব্বাইক; ইন্নাল হামদা ওয়ান নিআ’মাত লাকা ওয়াল মুলক; লা-শরীকা লাক।
 
মাতাফ: হেরেম শরীফের মধ্যে কাবাঘরের চারদিকে শ্বেতপাথরে মোড়া প্রান্তর, যেখানে হজ্ব বা উমরার তাওয়াফ করা হয় তাকে মুতাফ বা মাতাফ বলা হয়।
 
কাবাঘর: হেরেম শরীফের ভিতরে মাতাফের মাঝখানে অবস্থিত কালো গিলাফে মোড়া নয়নাভিরাম কালো ঘরটাই মুসলিম মিল্লাতের কিবলা ও স্বপ্নের বায়তুল্লাহ্ বা কাবাঘর।
 
হাজরে আসওয়াদ: কাবাঘরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণায় দেয়ালের সাথে হাজরে আসওয়াদ নামের কালো পাথরটি অবস্থিত। কাবাঘর তাওয়াফকালে হাজরে আসওয়াদে চুমু দিয়ে তাওয়াফ শুরু করতে হয় এবং এখানে এসেই সাত চক্কর শেষ করতে হয়। বর্তমানে হাজরে আসওয়াদ স্টিলের ফ্রেম দিয়ে ঘেরা রয়েছে। 
 
হাতীম: কাবাঘরের উত্তরদিকে অর্ধ চন্দাকৃতি নিচু দেওয়াল দিয়ে ঘেরা ছাদবিহীন অংশকে হাতীম বলা হয়। এ স্থানটাও একসময় কাবাঘরের অংশ ছিলো বলে জানা যায়। তাওয়াফকালে হাতীমের দেওয়াল ডান হাতে স্পর্শ করা সুন্নত।
 
মাকামে ইব্রাহিম: হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর পদচিহ্ন খচিত পাথরটি সোনালি ফ্রেমের মধ্যে স্থাপন করে তা কাবাঘরের পূর্বদিকে কাবাঘর থেকে ৫/৬ মিটার দূরে স্থাপন করা হয়েছে; এটাই মাকামে ইব্রাহিম। তাওয়াফ শেষ করে মাকামে ইব্রাহিম সামনে রেখে দুই রাকাত ওয়াজিবুত তাওয়াফ নামাজ আদায় করতে হয়।
 
ইস্তিলাম: হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করা ও সেখানে চুমু দেয়াকে ইস্তিলাম বলে। ইস্তিলামের মাধ্যমে তাওয়াফ শুরু করতে হয়।
 
রমল: কাবাঘর তাওয়াফকালে পুরুষদের জন্য প্রথম তিন চক্করে হাল্কা দৌড় দিতে হয়। একে রমল বলে; এটা সুন্নত।
 
ইজতিবা: রমলকালে ইজতিবা করতে হয়। ইজতিবা হলো ইহরামের গায়ের কাপড়টা ডান কাঁধের ওপর দিয়ে না নিয়ে বগলের নিচ দিয়ে এনে বাম কাঁধে জড়ানো; এটা সুন্নত।
 
সাঈ: সাঈ হলো, হযরত হাজেরা (আ.)-এর সুন্নত অনুযায়ী সাফা থেকে শুরু করে মারওয়া পাহাড় পর্যন্ত সাত বার হাঁটা; এটা ওয়াজিব। মাঝখানে দেওয়ালে সবুজ চিহ্নিত অংশে পুরুষদের দৌড়াতে হবে।
 
যমযম: কাবাঘর থেকে পূর্ব দিকে মাতাফের শেষে হেরেমের পূর্বাংশে ওঠার সিঁড়ির বাম পাশে সারি সারি পানির ট্যাপ লাগানো রয়েছে। এর ভেতরে রয়েছে আবে যমযম বা যমযম কূপ; তাওয়াফের পর ওয়াজিবুত তাওয়াফ নামায আদায় করে এখানে এসে পানি পান করা সুন্নত।
 
মিনা: মক্কা শহর থেকে ৭ কিলোমিটার উত্তরে মিনার অবস্থান। হজের সময় এখানে ৮ থেকে ১১ যিলহজে (৯ তারিখ দিনে আরাফাত ও রাতে মুযাদালিফায় অবস্থান করতে হয় বিধায় এ সময়টা বাদে) পর্যন্ত চারদিন তাবুর মধ্যে অবস্থান করতে হয়। এখানে অবস্থান করা হজের একটা অন্যতম সুন্নত।
 
আরাফাত: মক্কা থেকে ২১ কিলোমিটার উত্তরে আরাফাতের ময়দান অবস্থিত। মিনা থেকে এর দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার। আরাফাত হজের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ স্থান। কেননা, হজের দিন অর্থাৎ ৯ যিলহজ মিনা থেকে যোহরের ওয়াক্তের আগে এখানে পৌঁছে মাগরিব পর্যন্ত অবস্থান করতে হয়। এটা হজের অন্যতম ফরয।
 
মুযদালিফা: মক্কা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তরে মিনার পরই মুযদালিফার অবস্থান। মিনা থেকে মুযদালিফার দূরত্ব ক্ষেত্র বিশেষে ৩ থেকে ৫ কিলোমিটার। হজের রাতে আরাফাত ময়দান থেকে মাগরিব ওয়াক্তে রওয়ানা দিয়ে রাতে মুযদালিফায় এসে অবস্থান করতে হয়। রাতে এখানে অবস্থান করা হজের অন্যতম ওয়াজিব।
 
উকুফ: উকুফ শব্দের অর্থ অবস্থান। হজের আহকাম পালনের ক্ষেত্রে আরাফাত ও মুযদালিফার বিশেষ স্থানে বিশেষ সময়ে অবস্থান করার নাম উকুফ।
 
জামারাত: মক্কা থেকে ৫ কিলোমিটার উত্তরে মিনা আর মক্কার মাঝে অবস্থিত শয়তানের প্রতীক হিসেবে তিনটি স্তম্ভ যেখানে অবস্থিত তাকে জামারাত বলা হয়। যিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ এখানে শয়তানের উদ্দেশ্যে পাথর নিক্ষেপ হজের অন্যতম ওয়াজিব।
 
রমী: শয়তানের প্রতীক হিসেবে জামারাতে স্থাপিত তিনটি স্তম্ভের উদ্দেশ্যে পাথর নিক্ষেপ করাকে রমী বলে; এটা হজের ওয়াজিব।
 
আফাকী: মীকাতের বাইরে অবস্থানকারী হাজিদের আফাকী বলা হয়। যেমন বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইরাক, ইরান ইত্যাদি দেশের হাজিগণ।
 
আইয়ামে তাশরীক: ৯ থেকে ১৩ যিলহজ যে কয়দিন ফরজ নামাযান্তে তাকরিরে তাশরীক পাঠ করা হয় এই দিনগুলোকে আইয়ামে তাশরীক বলা হয়।
 
আইয়ামে নহর: ১০ থেকে ১২ যিলহজ পর্যন্ত এই তিনদিনকে আইয়ামে নহর বলা হয়। সূত্র: ওয়েবসাইট।
 
বিবার্তা/জিয়া
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com