‘দেশপ্রেমে গড়ে উঠুক আমাদের হৃদয়’

‘দেশপ্রেমে গড়ে উঠুক আমাদের হৃদয়’
প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১২:৪৬:৩৬
‘দেশপ্রেমে গড়ে উঠুক আমাদের হৃদয়’
চৌধুরী মাহমুদুন্নবী সোহেল
প্রিন্ট অ-অ+
খাওয়া, আড্ডায়, হাসি আর তামাশায় ব্যস্ত সবাই। হঠাৎ গুলির শব্দ, তাকিয়ে দেখে দাঁড়িয়ে আছে কিছু তরুণ অস্ত্র হাতে আর তারা চিৎকার করে বলে উঠল ‘ইসলামিক যোদ্ধা, ইসলামিক রাষ্ট্র কায়েম করতে এসেছি।’
 
বুঝতে বাকি নেই কেউই............!!!!!একটু পর থেমে গেল সবার হাসির শব্দ। পড়ে রইল খাবারগুলো আর লাল রক্তে ভরে উঠল আড্ডার স্থানগুলো, পড়ে রইল রক্তাক্ত ছিন্নভিন্ন দেহগুলো। যাদের জন্য অপেক্ষা করছিল তাদের আপনজন কিংবা বাসা ফিরা হত আপনজনের হাতধরে।
 
শুরু হল নতুন এক আতংক, সবাই দেখল রক্তাক্ত বাংলাদেশ স্তম্ভিত বাংলার মানুষ। তারপর ক্রমান্বয়ে আরো কয়েকটি স্থানে ওদের হিংস্র হামলা। এমনকি ঈদের দিনও ঈদের সবচেয়ে বড় জামাতে মুসুল্লিদের উপর হিংস্র থাবা।
 
একি! ওরাতো বলছে ওরা ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে এসেছে। তাহলে নিরীহ মানুষ আর নামাজরত মুসুল্লিদের মেরে এই কোন ইসলামিক রাষ্ট্রকে কায়েক করতে এসেছে এই ইসলাম নামধারী বিপদগ্রামী তরুণরা? ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে স্বাধীন চেতনার বাংলার মানুষগুলি।
 
প্রথম দিন থেকে থেমে নেই আমাদের দেশপ্রেমিক নিরাপত্তা বাহিনীর সদ্যসরা। তারা তাদের সর্বোচ্চ দিয়ে এমনকি জীবন দিতে হয়েছে অনেককে। তারপরও ঠেকিয়ে চলছে শুরু থেকে। আর অন্যদিকে বাংলাদেশের মানুষগুলি প্রতিটি পাড়া-মহল্লায়/প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এদের বিরুদ্ধে ঘৃণার প্রতিবাদ জানায়, সচেতন করে তুলে একে অপরকে এবং গড়ে তুলে দেশপ্রেমের বলয়। দেশপ্রেমিক নিরাপত্তা বাহিনীর সাহসিকতা আর দেশপ্রেমের বলয়তে খুব অল্প সময়ে রুখে দেয়া হয় বিপদগ্রামী এই তরুণদের।
 
কিন্তু এদের পরিচয়?
 
খুঁজে পাওয়া যায় ওদের পরিচয় এক এক করে আর ভ্র কুঁচকে যায় সবার। কারণ ওরা এই দেশের শিক্ষিত তরুণ, অনেকে আবার সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত পরিবারের সন্তান। তাহলে কেন তারা এই পথে? কেন তারা ইসলাম ধর্মের দোহাই দিয়ে জীবন দেয়া নেয়ার মত ভয়ংকর খেলায় মেতে উঠেছে এই সুন্দর পৃথিবী, সুন্দর পরিবার ছেড়ে? যে ধর্মে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে মানুষ হত্যা মহাপাপ।
 
শুধু তাই নয় সকল ধর্মে মানুষ হত্যা মহাপাপ। তাহলে এমন কি কারণ হতে যে ছেলে এই দেশে জন্ম নিয়ে এই দেশের আলো বাতাসে বেড়ে উঠে হঠাৎ করে ইসলামের দোহাই দিয়ে এই দেশকে অস্বীকার করে এই দেশের নিরীহ মানুষদের হত্যা করে এবং নিজ জীবনকে মৃত্যুর কূপে ঢেলে দেয়। মৃত্যুর পর তাদের লাশ নিতে অস্বীকার জানায় পরিবার ঘৃণাভরে। এতকিছু দেখার পরও কেন তারা বিপদগ্রামী হচ্ছে এই ভুল পথে!
 
হয়তো বিপদগ্রামী তরুণটি যে শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছে কিংবা যে পরিবার থেকে বেড়ে উঠেছে সেই শিক্ষার মধ্য কিংবা পরিবার উৎসাহিত করেনি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে কিংবা শুনানো হয়নি ওদের আমাদের ভাষা আন্দোলন কিংবা মুক্তিযুদ্ধের মত বীরত্বের কাহিনী বা তুলে ধরেনি আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি।
 
যে সংস্কৃতি বহন করে আমাদের পরিচয় আমাদের ঐতিহ্য আর আমি বাংলাদেশী হিসেবে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি কোন জাতি তার পরিচয় কিংবা ঐতিহ্যকে হত্যা করতে পারে না আর যদি তা হয়ে থাকে তাহলে এখন থেকে শুরু করতে হবে সবাইকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে এবং জানাতে হবে আমাদের দেশের ত্যাগ, অর্জন, বিজয়ের গল্প আর এই গল্প শুরু হবে প্রতিটি পরিবার দিয়ে আর পূর্ণতা দিবে প্রত্যকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
 
তাহলে আজ থেকে পরিবারের সকল সদ্যস্যের উপস্থিতিতে সকাল দুপুর এবং রাতের খাবার আড্ডাময় হয়ে উঠুক দেশপ্রেমের গল্প দিয়ে। পারিবারিক প্রতিটি বিনোদন ভরে উঠুক দেশীয় সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিয়ে। অবকাশ যাপন হোক পরিবারের সকলের সাথে দেশের ঐতিহাসিক এবং ইতিহাসসমৃদ্ধ স্থানসমূহে। বাসার প্রতিটি দেয়াল ভেসে উঠুক দেশীয় স্থির চিত্র দিয়ে এবং বুক সেলফটি ভরে উঠুক ইতিহাসসমৃদ্ধ বই দিয়ে আর অভ্যাস গড়ে তুলুক সকলেই বই পড়ার।
 
একই সাথে শুরু হোক প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রথম ক্লাসে এক সুরে এক হৃদয়ে গেয়ে উঠুক প্রতিদিন ‘আমার সোনার বাংলা/আমি তোমায় ভালোবাসি’ আর শেষক্ষণটি শেষ হোক দেশপ্রেমের গল্প শুনে। চর্চা থাকুক দেশীয় সংস্কৃতির প্রতি সপ্তাহে। থাকুকু বিতর্ক, কুইজ, উপস্থিত বক্তৃতা, সেমিনার এবং খেলাধুলাসহ নান ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন। সাথে শিক্ষা সফর ঐতিহাসিক স্থানসমূহগুলোতে, বছরে একবার হলেও।
 
তাহলে পরিবার আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই দুইক্ষেত্রে যদি নিশ্চিত করা যায় দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধকরণ তাহলে নিশ্চিত করা যাবে নিরাপদ বাংলাদেশ। কারণ সকল বিপদগ্রামী সকল রাস্তাবন্ধের একমাত্র সহজ সমাধান সবাইকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধকরণ।
 
জয় বাংলা বলে আগে বাড়ো.....
 
বিবার্তা/জিয়া
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com