তোমাদের খুব ভালোবাসি মুগ্ধ সোনা

তোমাদের খুব ভালোবাসি মুগ্ধ সোনা
প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৪:৫৮:২২
তোমাদের খুব ভালোবাসি মুগ্ধ সোনা
মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ
প্রিন্ট অ-অ+
সদ্য স্কুল পেরোনো যুবক (তাকে কিশোরই বলা যায়) তার বাবার শরীরে আগুন দিয়েছে এবং এতে বাবার মৃত্যু হয়েছে, এ কথাটা ভাবতেই মনটা কেমন করছে। সন্তান বাবার শরীরে আগুন দিয়েছে ভাবা যায়। আমি নই, কেউই এটা ভাবতে পারেন না। যে বাবা তাকে জন্ম দিয়েছে, কোলেপিঠে করে মানুষ করেছে সেই বাবাকে হত্যা করা! এর চেয়ে গর্হিত কাজ আর কি হতে পারে!  পারে না। কিন্তু পত্রিকা, টিভি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে যত বারই মুগ্ধর ছবিটা দেখছি ততবারই মনে হচ্ছে এই ছেলেটা কিছুতেই এমন কাজ করতে পারে না। মনে হচ্ছে কোথাও কোন ভুল হয়েছে। একটা গড়মিল আছে কোথাও। ওকে অপরাধী ভাবতে পারছি না। কিন্তু পরক্ষনেই মনে হচ্ছে  ধারনা ভুল। মুগ্ধ ওর বাবাকে হত্যা করেছে। ও অপরাধী। ওর ক্ষমা নেই। 
 
কিন্তু মুগ্ধ সোনা কেন করতে গেলে এটা? কিভাবে এতো নিচে নেমে গেলে তুমি? তোমার মতো ছেলে দেশের কোনো ভালো কাজ করবে, নতুন কিছু তৈরী করে দেখাবে, সবাই এটা চায়। সবাই অপেক্ষা করে,  কিছুই হতে না পারো একজন ভালো মানুষ  হও।  কথা ছিলো তোমাকে নিয়ে  সবাই গর্ব করবে। পরিবার, প্রতিবেশি, দেশ সবাই। কিন্তু তার বদলে তুমি ঘৃণার পাত্র হতে গেলে কেন ?  ক্রিকেটার মুস্তাফিজুর রহমান কিন্তু তোমার চেয়ে বেশি বড় নয়। দেখো এই হীরের টুকরো ছেলেকে নিয়ে আমরা কত গর্ব করি। সাকিব আল হাসানকে নিয়ে ১৬ কোটি বাঙ্গালীর সে কি গর্ব। তাসকিন, সানি আবার ক্রিকেটে ফিরে এসেছে এ নিয়ে চায়ের কাপে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। গর্বে ফুলে উঠছে বুকের পাটা। অথচ তোমার নাম শুনলেই সবাই আঁৎকে উঠছে। সত্যি বলছি, মুগ্ধ তোমাকে এখনো আমার অপরাধী মনে হচ্ছে না। হয়তো এটা আবেগ।
 
সে যা-ই-হোক, তোমার কাছে কিছু প্রশ্ন - বাবার শরীরে আগুন দেয়ার আগে তোমার কি একবারও মনে হয়নি এই লোকটার জন্য তুমি পৃথিবীতে এসেছো, মনে হয়নি পৃথিবীতে তোমার জন্য সবচেয়ে বেশি যে ভাবেন সে হচ্ছে এই লোকটি। তোমাদের বাড়িতে যখন ইলেকট্রিসিটি নেই, তুমি গরমে ঘেমে যাচ্ছো তখন এই লোকটাই তোমাকে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করছে। তুমি শীতে কষ্ট পাবে এই ভেবে নিজের বুকের মধ্যে শক্ত করে ধরে রেখেছে তোমায়। একবার ভাবলে না তোমার ঘরে ফিরতে দেরি হলে এই লোকটাই সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তা করেছে। তুমি না ফিরলে খেতে বসেনি। তোমার কষ্ট হবে সেজন্য তোমাকে কখনো কোনো কঠিন কাজের কথা বলেনি, নিজেই করেছেন। তোমার শরীর খারাপ হয় সেই ভয়ে তোমাকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেননি । এই মানুষটাই তোমাকে রোদে ঘুরতে দেয়নি তার ছেলের গায়ের রং নষ্ট হয়ে যাবে সেই ভয়ে। এই লোকটা কতদিন তোমায় গোসল করিয়েছে ,মুখে খাবার তুলে দিয়েছে, নিজ হাতে পোশাক পরিয়ে স্কুলে পাঠিয়েছে, ছেলে আমার বড় হবে এমন স্বপ্নে বিভোর থেকেছে কত দিন ! আরো কত কি--- কিছুই মনে হলো না তোমার, কিছুই না মুগ্ধ ?
 
অথচ দেখো তুমি এতোবড় একটা অন্যায় করেছে তারপর তোমার বাবা তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। বলেছেন, আমার অবুঝ ছেলে না বুঝে একটা ভুল করে ফেলেছে। আমি ওকে ক্ষমা করে দিলাম। ভেবে দেখো, তোমার জন্য ভালোবাসা বিলিয়ে দিয়ে গেলেন বাবা। আর তুমি কি-না একটা মটর বাইকের জন্য বাবাকে খুন করলে ? কার কথা শুনেছিলে তুমি ? কি ভূত চেপেছিলো তোমার কাঁধে ?
 
এতো গেলো তোমার কথা, এবার তোমার পরিবারের কথা একটু বলা দরকার। ছোটবেলা থেকে তুমি যখন যা চেয়েছো পরিবার সেই আবদার পূরণ করেছে। যা একটা সময় মহামারি ধারণ করে। আর শেষ পর্যন্ত নিজের জীবন দিয়ে তোমার বাবা এই মহামারি থেকে রক্ষা পেয়েছেন। আমরা যারা সাধারণ মানুষ তারা বুঝি সন্তান যখন যা আবদার করে তা সব সময় তা পূরণ করতে নেই। অযৌক্তিক হলে তো নই-ই। একটা সময় সব পরিবারেই এমন রীতি চালু ছিলো। সন্তানেরা অল্পতে খুশি থাকত।  দু’চার টাকা পেলেই আমরা খুশি থাকতাম। না পেলে রাগ-অভিমান ছিলো না। একটা পেয়ারা পেলেও সব ভাইবোন মিলে ভাগ করে খেতাম। কম পেতাম, কম খেতাম। কিন্তু শান্তি ছিলো, সুখ ছিলো। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এখন  তোমারা বেশি পাও, বেশি খাও। কিন্তু তোমাদের শেয়ারিং নেই। শান্তি নেই। এর জন্য দায়ি কারা? তোমরা নাকি পরিবার ? এই বয়সে বাইক কি তোমার দরকার ছিলো ? তোমার পরিবার কি বুঝেছিলেন সেটা ? মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, সন্তানের অহেতুক আবদার পূরণ করতে নেই। এক্ষেত্রে সন্তানকে বোঝাতে হবে। তার সঙ্গে তৈরী করতে হবে বন্ধুত্বের সম্পর্ক। পারিবারিক বন্ধনটা হতে হবে আরো শক্ত।  ছোটবেলা থেকে এই অভ্যাস গড়ে তুললে সম্ভবত সন্তান বিপথে যেতে পারে না। 
 
ঐশির কথা আমরা ভুলে যায়নি। মাসে যার হাত খরচ লাগত হাজার হাজার টাকা। বাবা সেটা বিনা বাক্যে দিয়ে দিতেন। শেষ পর্যন্ত তার মা-বাবাকেও জীবন দিতে হয়েছে সন্তানের হাতে।  তাই এখনই সচেতন হওয়ার সময় পরিবারকে। আমাদের সন্তান আমরা ভালোবাসব, স্নেহ করব এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অতিরিক্ত কিছু করব না। যতই অর্থকড়ি থাকুক সন্তানকে বাস্তবতা শেখাবো, জীবনবোধ শেখাবো।
 
আর মুন্ধ সোনা তোমাদের বলি, এমন করো না তোমরা। তোমরা কুসঙ্গ ছেড়ে ভালো বন্ধুর কাছে ফিরে এসো।  বন্ধু তোমার জন্য অপেক্ষায় আছে। প্লিজ নেশা ছেড়ে ফিরে এসো খেলার মাঠে। ভিনদেশি সংস্কৃতি ছেড়ে ভালো ভালো বই পড়ো। ভালো বিনোদনের সঙ্গে থাকো। সম্মান করতে শেখো, ভালোবাসতে শিখো, কিছু করার আগে ভাবতে শেখো। দেখবে, তোমাদের জন্য একটা সুন্দর জীবন অপেক্ষা করছে। 
 
সবাই তো মুস্তাফিজ হতে পারবে না, সাবিক আল হাসানও সবাই হতে পারবে না। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছো তোমরাই হতে পারবে এদের চেয়ে বড় কিছু। আর কিছু না হতে পারো একজন ভালো মানুষ তো হতে পারবে। দেশ-জাতি সর্বক্ষন সোনার মানুষ খোঁজে। আর তোমাদের মধ্যে ঘুমিয়ে রয়েছে এসব সোনার মানুষ। 
 
আমাদের বিশ্বাস তোমরা খুনি হতে পারো না। কেন খুনি হবে তোমরা, কেন নেশা করতে যাবে । তোমরা সঠিক পথে ফিরো এসো সোনারা। আমরা তোমাদের খুব ভালোবাসি। সত্যি বলছি মুগ্ধ আমরা সবাই তোমাদের ভালোবাসায় মুগ্ধ হতে প্রতিক্ষায় আছি।
 
লেখক : সাংবাদিক
 
বিবার্তা/মৌসুমী
 
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com