শেখ হাসিনা : বাংলাদেশের স্বপ্নযুদ্ধের রাষ্ট্রনায়ক

শেখ হাসিনা : বাংলাদেশের স্বপ্নযুদ্ধের রাষ্ট্রনায়ক
প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ২২:৪৮:৩৬
শেখ হাসিনা : বাংলাদেশের স্বপ্নযুদ্ধের রাষ্ট্রনায়ক
হুসাইন সাদ্দাম
প্রিন্ট অ-অ+
শেখ হাসিনাকে অনেকেই দেখেন দলীয় চোখ দিয়ে, অনুভব করেন পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্তের ছকে। রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী, পশ্চিমা মিডিয়া, বামপন্থী রাজনীতিক সবার ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক বয়ান রয়েছে; কিন্তু তার রাজনীতির 'ঐতিহাসিকতা', গণমুখী উন্নয়নের 'ভিশনমিশন’, রাষ্ট্র নিয়ে সুদূরপ্রসারী কর্মপরিকল্পনা, স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী-প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মান্ধ অপশক্তি-সাম্প্রদায়িক শত্রু-মিলিটারি গণতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে তার নিরাপস, অসমসাহসী, ইস্পাতদৃঢ় লড়াই তাকে যুগসন্ধিক্ষণের প্রত্যয়দীপ্ত কাণ্ডারীতে রুপায়িত করেছে। নিম্নবর্গের মানুষের কাছে, খেটে খাওয়া মানুষের কাছে, সহায়সম্বলহীন মানুষের কাছে তিনি তাদেরই একজন; পরম সহায়, পিতার দেখানো পথে অন্তহীন হেঁটে চলা ‘শেখের বেটি’। মধ্যবিত্তের কাছে তাদের ‘আনন্দ বেদনা মিলন বিরহ সংকটের’ প্রিয় 'আপা'।
 
সময়ের এই চেনা আয়নার বাইরেও, বেড়ে ওঠা সময়ের যে শেখ হাসিনা আছেন, আমাদের তাকেও খুঁজে নিতে হবে। ১৯৬৬তে মুজিবের 'অপ্রতিরোধ্য গণজোয়ারের মাধ্যমে মৌলিক মানবাধিকার ছিনিয়ে আনার' ৬ দফার লড়াইয়ে আইয়ুবের 'অস্ত্রের ভাষায় জবাবে'র বিপ্রতীপে বাঙ্গালির অস্তিত্বের লড়াইয়ে তিনিও শামিল হয়েছেন কলেজের ছাত্রনেতা হয়ে, সহপাঠিনীদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধ সুরে বাঁধ ভাঙার গান গাইতে গাইতে। 
 
এ শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্ছ্বল তরুণী, বাংলাদেশ-বিপ্লবের স্বপ্ন যেও বুকে বুনন করে চলেছে। রাজপথে হাজারো তরুণের মুষ্টিবদ্ধ হাতে যেও মিলিয়েছে হাত, যেও বলেছে কথা শ্লোগানে শ্লোগানে। তরুণ হেলাল হাফিজ  আজকের প্রধানমন্ত্রীকে সেদিন ডাকতেন ‘অড্রে হেপবার্ন’ বলে। ছাত্রলীগ করতেন, মিলমিশ সবচেয়ে বেশি ছিল ছাত্রআন্দোলনের বিপ্লবী দিনগুলোর আরেক স্বপ্নচারী ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী বেবী মওদুদের সাথে। দুই দলের মিছিল শেষে এক ক্যারিয়ারে টিফিন খেতেন টিএসসির ক্যাফেটেরিয়ায়। 
 
তাঁর শৈশব বাঙ্গালি মধ্যবিত্তের আর দশজনের মতো সহজ ছিল না। ছোট ভাইয়ের কাছে যাকে শুনতে হয়, "তোমার আব্বাকে আমি আব্বা বলে ডাকি", তাঁর জীবন মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারের প্রাত্যহিকতার কড়া শাসন -মিষ্টি আলাপ থেকে বহু দূরের!
 
আগস্ট-’৭৫ তাঁর জীবনে নিয়ে আসে গ্রীক ট্র্যাজেডির চেয়েও বেদনাবিধুর উপাখ্যানের। ভিনদেশে সহোদরা শেখ রেহানার সাথে তাঁর তীব্র কান্নার সুর এদেশের মানুষের চোখের জলেরও প্রতিচ্ছবি। বার্লিন-লন্ডন-নয়াদিল্লীতে নিঃসঙ্গ শেরপার মতো তিনি লড়েছেন চেনা-অচেনা শত্রুদের সাথে। প্রবাসে থাকতেই ভাঙ্গা দল আওয়ামী লীগের হাল ধরেছেন। 
 
তাঁকে লড়াই করতে হয়েছে কত ফ্রন্টে। সামরিক স্বৈরাচারের উদ্ভট উটের পিঠে চড়া বাংলাদেশকে তিনি জনগণের শক্তি দিয়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ করেছেন। জন্মশত্রু আর জনকখুনীদের চোখ রাঙ্গানি, মৃত্যুর পরোয়ানা পরোয়া না করে রাজপথ কৃষ্ণচূড়ার রঙে রাঙিয়েছেন আবার তাঁর তারুণ্যের উত্তাল দিনগুলোর বাংলাদেশের মতো।
 
জননী সাহসিকা সুফিয়া কামাল আশাবাদ রেখেছিলেন, "পরম প্রত্যাশায় আছি, শেখ হাসিনা মৃত্যুর ভয়ে পশ্চাৎপদ হননি। সাহসের সঙ্গে সংগ্রামে এগিয়ে অগ্রবর্তিনী হয়ে আমাদের শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন আর ঘাতক মূষিক গোপন থেকে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পদদলিত হওয়ার আশঙ্কায় কৃমিকীট হয়ে আত্মগোপন করেছে। শেখ হাসিনা অজেয় অমরত্ব লাভ করে সর্বদলের বিজয়িনী হয়ে বিরাজ করুন এই প্রার্থনা আজ সর্বজনার কাছে।" 
 
সময় প্রমাণ করেছে, শেখ হাসিনা সর্বজনকে নিয়ে বিজয়িনীই হয়েছেন। গণতান্ত্রিক লড়াইয়ে বিজয় অর্জনের পর সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য তিনি সংসদে-রাজপথে সৃজনশীল, লক্ষ্যাভিসারী, দূরদর্শী, দৃঢ়-দৃপ্ত ভূমিকা রেখেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে, সন্ত্রাস-অপশাসন-গণবিরোধী রাষ্ট্রীয় কর্মকৌশলের প্রতিবাদে জনমত গড়ে তুলেছেন। সাজানো নির্বাচনের পাতানো খেলা নস্যাৎ করে জনগণের ভোট আর ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অগ্রগামী হয়ে জনতার ম্যান্ডেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন। মুক্তবাজারে মুক্ত হস্তে বাংলাদেশকে দান করার জিয়া-এরশাদ-খালেদার রাষ্ট্রীয় নীতি থেকে সরে এসে সুষম অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্যমুক্তির চ্যালেঞ্জ নিয়ে তাঁর যে অভিযাত্রা, তা অনেকাংশে সফল। 
 
লুটপাটের বাংলাদেশের বিপরীতে জনগণের বাংলাদেশের অবনত পতাকাকে তিনি আবার উড়িয়েছেন। বিচারহীনতার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে তিনি ক্রমে ক্রমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অব্যাহত লড়াইকে এগিয়ে নিয়েছেন, নতুন মাত্রা দিয়েছেন, জাতিকে দায়মুক্ত করেছেন। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে, প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন শিক্ষার অধিকার। দারিদ্র্যমুক্তির চ্যালেঞ্জ, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা, জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, মাতৃস্বাস্থ্যের নিরাপত্তা, শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, বিদ্যুতের অভাবনীয় উৎপাদন বৃদ্ধি, শিল্পায়নের বহুমুখী পদক্ষেপ, বৈদেশিক মুদ্রা আয়, ফরেন কারেন্সি রিজার্ভের স্ফীতি, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মাঝেও প্রবৃদ্ধির ঊর্ধ্বগামী ধারাবাহিকতা, নারীর ক্ষমতায়ন, অসহায়দের জন্য সামাজিক সুরক্ষা; সর্বোপরি ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য আধুনিক-উন্নত-মানবিক প্রজাতন্ত্র নির্মাণে তিনি সুশাসন, গণমুখী কর্মসূচী, ভবিষ্যতের বাংলাদেশের রূপকল্প নিশ্চিত করেছেন।
 
সমুদ্রে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা আদায় পররাষ্ট্রের রণকৌশলে তাঁর সুন্দরতম বিজয়। তিনি একমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বের অধিপতিকে মুখের ওপর বলে দিয়েছিলেন, ৫০ বছরের রিজার্ভ ব্যতীত কোনো গ্যাস বাংলাদেশ বিদেশে রপ্তানী করবে না।
 
তাঁর সময়ের গঙ্গার পানিচুক্তি পথ দেখাবে অসমাপ্ত অনেক যুদ্ধে। জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর ন্যায্য ক্ষতিপূরণ আদায়ে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে চলেছেন। তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশকে, দেশের পরিসেবাকে ডিজিটাল করা, তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা তাঁর উন্নয়নভাবনার সুচিন্তিত প্রয়াস। 
 
দরিদ্র বিশ্বকে স্বপ্ন দেখানোয় তিনি এক আশাজাগানিয়া সুর। তিনি দোষারোপের রাজনীতি, খুনের সংস্কৃতি, মৌলবাদের বিপরীতে উন্নয়ন, সুশাসন, তরুণ প্রজন্মের স্বপ্নকে রাজনীতির বিষয়বস্তু করে তুলেছেন। রোহিঙ্গা সমস্যাকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরে মিয়ানমারের নিপীড়িত জাতিসত্তার আত্বনিয়ন্ত্রণাধিকারের দাবিকে বাস্তবে রূপায়নে সচেষ্ট থেকেছেন। ফিলিস্তিনের মানুষের স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সমর্থন নিশ্চিত করেছেন।
 
১৯৯৭’র পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাংলাদেশকে মানবিক-গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীল করে বিনির্মাণের প্রয়াস। এর মাধ্যমে তিনি বহুত্ববাদী বাংলাদেশের পতাকাকে ঊর্ধে তুলে ধরেছেন, পাহাড়ে সহিংসতার অবসান ঘটিয়েছেন, এক ধরনের সেনাশাসনের অবস্থার উত্তরণ ঘটিয়ে তিনি গণপ্রজাতন্ত্রকে জনগণের কণ্ঠস্বর শুনতে বাধ্য করেছেন, তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। ভিন্ন জাতিসত্তার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, স্বশাসনের অধিকার, ভূমির অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছেন। তাঁর সম্পর্কে বলা চলে, "A leader is one who knows the way, goes the way & shows the way".
 
যে বিচার না হলে বাংলাদেশ কায়েম হয় না, সে ইনসাফ কায়েমের লড়াইয়ে সাম্রাজ্যের কুশীলব, মধ্যপ্রাচ্যের কাঠমোল্লাদের অন্যায় আবদারে পরাভব মানেননি। আমাদের সময়ে শোনা সবচেয়ে সুন্দর কবিতা হলো তাঁর মুখের ‘পৃথিবীর কোনো অপশক্তিই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করতে পারবে না।’ 
 
তরুণ প্রজন্মের স্বপ্নের অক্ষরে, মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদের ধ্বনি-প্রতিধ্বনিতে, পিতার পথ চলার অসমাপ্তির বেদনার বীজ বুকে নিয়ে শেখ হাসিনা এ কবিতা লিখে চলেছেন। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ শুধু উন্নয়নের প্যারাডক্স নয়; শেখ হাসিনার বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে, আমরা ন্যায়বিচারের আকাঙ্ক্ষাকেও যুদ্ধ-অর্থনীতির বিশ্বে, অনাচার-আগ্রাসনের বিশ্বে, গণতন্ত্রের নামাবলী গায়ে দিয়ে বীভৎস হত্যাযজ্ঞের বিচারহীনতার বিশ্বে কতটা মূল্য দেই। 
 
বঙ্গবন্ধুকন্যার কাছে আমাদের, আমাদের অনাগত সন্তানদের, আমাদের জীবিত কিংবা মৃত বাবা-মায়েদের আজন্মের ঋণ। জলপাই রঙের হাত থেকে তিনি নিরাপদ করেছেন লাল-সবুজের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে। সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সফল হয়েই তাঁর পথ চলা থেমে থাকেনি; গণরায় বদলে দিয়ে নির্বাচিত সরকারও যতবার ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে, প্রশাসনিক কারসাজির মাধ্যমে, পেশিশক্তির প্রকাশের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসাকে নিষ্কণ্টক করতে চেয়েছে, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সে ষড়যন্ত্র তিনি রুখে দিয়েছেন; জনগণকে সুযোগ করে দিয়েছেন তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি বেছে নেয়ার। 
 
অনির্বাচিত সরকার থাকার সাংবিধানিক সুযোগ থাকায় উন্নত গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি থেকে বাংলাদেশের অভিযাত্রা ছিল অনেক দূরে। তৃতীয় বিশ্বের ভঙ্গুর গণতন্ত্রের দেশে ক্ষমতার পালাবদলের যে চ্যালেঞ্জ থাকে, তার টেকসই ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সমাধান রয়েছে তাঁর নির্বাচনকালীন সীমিত সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার রাষ্ট্রভাবনার মধ্যে।
 
বিশ্বরাজনীতির নানাবিধ 'গেমপ্ল্যান', ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক, অর্থনীতিগত স্বার্থে বাংলাদেশের জন্য তাঁবেদারির প্রেসক্রিপশনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তিনি গণমুখীনতায় আস্থা রেখেছেন। কথিত বটমলেস বাস্কেটকে তিনি পৌঁছে দিয়েছেন মধ্যম আয়ের 'হাইওয়েতে'। 
 
শেখ হাসিনা জানেন অধীনস্থতার উন্নয়ন দর্শনকে ছুঁড়ে ফেলে কীভাবে আত্মশক্তির ওপর ভর করে উন্নয়নের কাউন্টার থিসিস নির্মাণ করতে হয়। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঈশ্বর না থাকা দুঃখিনী জনপদ স্পর্শ করে বয়ে যাওয়া সর্বনাশা পদ্মায় শুধু সেতুই নয়, তিনি উদ্বোধন করেছেন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে স্বপ্নযাত্রার রোডম্যাপও। বাংলাদেশের মানুষের কাছে এটা ছোট একটা পদক্ষেপ; বিরাট একটা ভ্রমণের জন্য। তাঁর সময়েই জেনেছি, আমরা এমন একটা সময়ে বাস করছি, যখন বাংলাদেশ জানে কী করে বড় বড় মোড়লদের অন্যায় আবদারের অবাধ্য হতে হয় এবং চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে আত্মবিশ্বাসের সাথে এগিয়ে যাওয়া যায় কাঙ্খিত লক্ষ্যে।
 
এই কিছুদিন আগেও স্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে গেলে স্বামীর নাম বদলাতে হতো, মামাকে বাবা বানিয়ে ভারতের স্কুলে ভর্তি করাতে হতো ছেলেমেয়েদের। সীমান্তে উত্তেজনা হলে বছরের পর বছর গ্রামের বাইরের পৃথিবী দেখা হতো না। হাঁটাচলার রাস্তা নেই, বিদ্যুত নেই, স্কুল-কলেজ নেই, হাসপাতাল নেই; এদিক-ওদিক গেলেই শুধু সীমান্তরক্ষীদের তাড়া। অভাব-অনটন, কষ্ট-বেদনা নিয়ে মানুষ চলতে পারে, 'দেশহীন মানুষ' থাকার দুঃখ ভোলা যায় কী করে! পরিচয় না থাকার মানবেতর বিষণ্নতা তো ভোলার নয়। মিথ্যে পরিচয়ের আশ্রয়ে ৬৮ বছরে কোনো জাতীয় সঙ্গীত না গেয়েই, কোনো পতাকা না উড়িয়েই, দেশ না জেনেই অজস্র মানুষ সে মাটির বুকেই ঘুমিয়ে পড়েছে। 'কিছু হলেও ছিটের জমির দাম আছে, ছিটের মানুষের কোনো দাম নেই'- মানুষ আক্ষেপ করে বলত। প্রথম কোনো সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা পা রেখেছেন অভাগা সে মাটিতে। 
 
শেখ মুজিব অনেকবার কুড়িগ্রাম এসেছেন, দাসিয়ারছড়ায় আসা হয়নি কখনো; সে সুযোগ ছিল না। শেখের বেটি ঘুরে এসেছেন, কথা বলেছেন, শুনেছেন এতদিন নিজভূমে পরবাসী হয়ে থাকা বঞ্চনার শিকার মানুষদের কথা। একজন প্রান্তজন করফুল বেওয়া প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে গেয়ে উঠেছেন, ‘মাগো আমার, কোন দ্যাশে ছিলা? তুমি মা জননী, জগৎ তরণী। আলো পাইলাম। তোমায় পাইলাম।’
 
শেখ হাসিনা সেদিন প্রাক্তন ছিটমহলের মানুষদের বলেছেন, 'দুঃখের রজনী শেষে আলোর পথে যাত্রা শুরু করল ১৭ হাজার ১৬০ একরের মানুষ'। উত্তর জনপদে দুঃখগাথার ছেঁড়া দ্বীপের মতো ভেসে থাকা ছিটমহলের মানুষদের 'জীবন' ফিরিয়ে দেয়ার জন্য এদেশের মানুষ ভালোবাসা জানায়, প্রণতি জানায় তাকে।
 
দীর্ঘ সময় ধরে মৌলবাদ বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে। সাম্রাজ্যবাদের চাবি দেয়া কলের পুতুলে জঙ্গীবাদ এখন বৈশ্বিক সংকটে রূপ লাভ করেছে। শেখ হাসিনার সামনে নানামুখী চ্যালেঞ্জ ছিল; অভ্যন্তরীণভাবে জিরো টলারেন্স দেখিয়ে তিনি যেমন এসব অপশক্তির মোকাবেলা করেছেন, তেমনি বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের নেপথ্যের খেলোয়াড়দের পাতানো খেলার ফাঁদেও পা দেননি। জন কেরি যখন জঙ্গিবাদ–সংশ্লিষ্ট তথ্য দিয়ে সহায়তা করার কথা বলেন, শেখ হাসিনা তখন তাকে বলেন, "জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় তাঁর সরকারের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট করছে।" এই প্রতিউত্তরটি দেয়ার জন্য সাহস লাগে। শেখ হাসিনা সেই সাহস দেখিয়েছেন। 
 
বৈশ্বিক বিভিন্ন ফোরামে তিনি সন্ত্রাসবাদের অস্ত্র ও অর্থের যোগানদাতাদের চিহ্নিত করার আহ্ববান জানিয়েছেন, তেমনি দেশীয় পরিসরে ডাক দিয়েছেন সামাজিক প্রতিরোধের, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের। জনগণকে সাথে নিয়ে সব প্রতিকূলতাকে যিনি অতিক্রম করেছেন, এ চ্যালেঞ্জেও তাঁর বিজয় সুনিশ্চিত।
 
শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় শক্তি এদেশের জনগণ, এদেশের তরুন প্রজন্ম। বাংলাদেশের যারা আঠার, বিশ, ত্রিশ; তারা তাদের যৌবন উৎসর্গ করতে চায় মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ গড়তে শেখ হাসিনার সাহসী সংগ্রামে।
 
লেখক : আইন বিষয়ক উপ-সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ। শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
 
বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com