হজ ইসলামের অন্যতম রুকন বা স্তম্ভ। এটি মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সংহতি ও সাম্যের প্রতীক। বিশ্ব মুসলিমের ভ্রাতৃত্বের অন্যতম মাধ্যম। ইসলামের অন্যান্য বিধান থেকে হজের রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। এতে আর্থিক ও কায়িক শ্রমের সমন্বয় রয়েছে, যা অন্য কোনো ইবাদতে একসঙ্গে পাওয়া যায় না। মক্কায় কাবাকেন্দ্রিক এই হজ পালিত হচ্ছে হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর আমল থেকে। হজের মতো এত বড় নিয়মিত জনসমাগমের নজির পৃথিবীর আর কোথাও নেই। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিবছর এখানে ৩০ থেকে ৪০ লাখ মানুষের সমাগম হয়। 'লাব্বাইকের' এই মিছিলে বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণও কম নয়। সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এ বছর হজ করবেন এক লাখ এক হাজার ৭৫৮ জন। বিশ্বের বৃহত্তম এই সমাবেশে গত শুক্রবার মক্কার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। মাগরিবের নামাজের কিছু আগে হারাম শরিফের চতুর্থতলার ছাদ ভেঙে মার্বেল পাথরের মেঝেতে আছড়ে পড়ে নির্মাণকাজে ব্যবহৃত বিশালকায় একটি ক্রেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এতে ১০৭ জন নিহত এবং ২৩৮ জন মুসল্লি আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৪০ জন বাংলাদেশি রয়েছেন বলে রিয়াদে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে জানানো হয়েছে। প্রবল বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসকেই দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এ দুর্ঘটনা মুসলিম উম্মাহর পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী এক শোকাবহ পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
প্রতিবছরই হাজির সংখ্যা বাড়ছে। তাঁদের স্থান সংকুলান, আহার-বিহারের ব্যবস্থাপনা ও নির্দিষ্ট দিনে একসঙ্গে এত মানুষের হজের কার্যাবলি সম্পাদনে কর্তৃপক্ষকে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। তাই কয়েক বছর ধরেই ৮৮ দশমিক ২ একর স্থানজুড়ে অবস্থিত হারাম শরিফ কমপ্লেক্স আরো বৃদ্ধি করার কাজ চলছিল এবং তা শেষ পর্যায়ে ছিল। নির্মাণকাজের জন্যই হারাম শরিফের চারপাশে অনেক ক্রেন বসানো হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, হজের উদ্দেশ্যে যখন লাখো মুসল্লি সেখানে জড়ো হতে শুরু করেছেন, তখন নির্মাণসামগ্রী এমন অসতর্ক অবস্থায় রাখা কতটা যৌক্তিক ছিল? বিশেষত যখন সেখানে ভারি বৃষ্টি ও ঝড়ের পূর্বাভাস ছিল। এ ছাড়া মক্কায় হজের সময় দুর্ঘটনার বিষয়টি নতুন নয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে, ৪০ বছরের ইতিহাসে হজে গিয়ে দুর্ঘটনা ও রোগে ভুগে মারা গেছেন অন্তত তিন হাজার মানুষ। সর্বশেষ যোগ হলো ক্রেন আছড়ে পড়ে শতাধিক মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনা। এমন দুঃখজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি কেন রোধ করা যাচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখা দরকার।
হাদিস শরিফে আছে : 'হজের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পর যাঁর মৃত্যু হয়, আল্লাহ তায়ালা তাঁকে কিয়ামত পর্যন্ত হজের সওয়াব দান করবেন।' কোনো কোনো হাদিসে তাঁরা সরাসরি জান্নাতে যাবেন বলেও ঘোষণা করা হয়েছে। নিহতরা সবাই জান্নাতবাসী হোন- এই কামনা করছি এবং তাঁদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।