শোকের মাসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নানা মাত্রায় আমাদের চেতনাকে শাণিত করেন। কারণ বাঙালিমাত্রই জানে- খোকা, শেখ মুজিব, বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতা হচ্ছে জীবনের ধাপে ধাপে নিজেকে অতিক্রম করা একটি কালজয়ী নাম; একটি বিশেষণ থেকে একটি জাতিরাষ্ট্রের নির্মাতা।
পৃথিবীর ইতিহাসে নিজেকে নির্মাণ করার এই মহানায়ক শেখ মুজিবুর রহমান নিজের নামটি ক্ষণকাল থেকে চিরকালের করে তুলেছেন তাঁর অসামান্য দুঃসাহসী ভূমিকার বিস্ময়কর নেতৃত্বের মহিমান্বিত শক্তি দিয়ে।
ক্ষণকালের ইতিহাসে নিজেকে মহিমান্বিত করেছেন অনেকেই; কিন্তু চিরকালের করে তুলতে পেরেছেন তারাই, যারা মহাকালকে নিজেদের করতলগত করে তুলতে পেরেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই ব্যতিক্রমী ও দুঃসাহসী মহানায়ক, যিনি গোপালগঞ্জের একটি অচেনা ছোট গ্রাম থেকে উঠে এসে সেই চিরঞ্জীব মহাপুরুষ হয়ে উঠেছেন, ইতিহাস যাকে নির্মাণ করতে পারেনি; বরং তিনিই ইতিহাস নির্মাণ করে একটি জাতিরাষ্ট্রের জন্ম দিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। বলতে গেলে প্রায় একক নেতৃত্বের মহিমান্বিত গুণে সাত কোটি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে এই জাতিরাষ্ট্রের জন্মদানের কৃতিত্ব শুধুই তাঁর।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতি হারিয়েছে তাদের অস্তিত্বের শেকড়, আমাদের জাতিরাষ্ট্রের ভিতপাথর। কিন্তু এভাবে দেহের মৃত্যু হতে পারে, চেতনার মৃত্যু হয় না। জাতির জনককে হত্যা করার পরও তিনি পুনরায় যে আরও উজ্জ্বল, আরও মহিমান্বিত হয়ে সারা পৃথিবীতে এক অক্ষয় নাম হিসেবে প্রতিমুহূর্তে পৃথিবীর সংগ্রামী মানুষের প্রতীক হয়ে উঠেছেন, তা কি অর্বাচীনরা দেখেও দেখে না? যারা জানে না, বীরেরা কখনও মরে না, কাপুরুষরা বারবার মরে।
দুঃখজনক হলেও সত্য, জাতির জনকের সুযোগ্য উত্তরসূরী জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন বঙ্গবন্ধুর মতোই সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার কাজে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন, তখন অর্বাচীনরা এই জাতিরাষ্ট্রকে ধ্বংস করার জন্য, একটি ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্য উন্মত্ত হয়ে উঠেছে।
খুনিদের নির্মম বুলেটের হাত থেকে সেদিন রেহাই পায়নি বঙ্গবন্ধু পরিবারের উপস্থিত কোনো সদস্যই। পরিবারের সবচেয়ে কনিষ্ঠ, ১০ বছরের শিশু রাসেলও! সেখানে বয়ে যায় রক্তগঙ্গা। সৃষ্টি হয় গ্রীক ট্র্যাজেডির চেয়েও নির্মম দৃশ্যের।
আমরা জানি, বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ও আমাদের স্বাধীনতা এক ও অভিন্ন সূত্রে গাঁথা। বাঙালির স্বাধীনতা ছিল বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রভাবনা। বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর প্রশস্ত হৃদয়। বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর অপার ভালোবাসা। বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর অমর মহাকাব্য। জীবনভর সাধনা আর অপরিসীম ত্যাগতিতীক্ষা দিয়ে তিনি এ মহাকাব্য রচনা করেছেন।
আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ ও আমাদের স্বাধীনতার ন্যায় বঙ্গবন্ধুর কোনো ক্ষয় বা মৃত্যু নেই। বঙ্গবন্ধু মুজিব মৃত্যুঞ্জয়। জাতির পিতার অমর-অমলিন শাহাদাতবার্ষিকীতে তাঁর প্রতি জানাই প্রাণঢালা ভালোবাসা আর গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।