আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আজ ২৮ সেপ্টেম্বর সত্তরে পা দেবেন। বার বার মৃত্যুকে তুড়ি মেরে জীবনের ৬৯টি ঝড়ো বসন্ত পেরিয়ে আসতে পারা চাট্টিখানি কথা নয়।
১৯৭৫-এ ঘটনাক্রমে দেশের বাইরে থাকায় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ১৫ আগস্টের অনিবার্য মৃত্যুর থাবা থেকে প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু মৃত্যুযন্ত্রণার চেয়েও দুঃসহ যন্ত্রণা ও কষ্ট নিয়ে গত চারটি দশক তাঁকে ‘জীবনজয়ের’ যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
অমিত প্রাণশক্তি, দুর্জয় সাহস এবং অঙ্গীকারের দৃঢ়তা না থাকলে এ রকম সর্বস্ব হারিয়ে কারও পক্ষে রক্তভেজা মাতৃভূমিতে ফিরে আসা এবং পিতার অসমাপ্ত কর্তব্যভার কাঁধে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না।
মাত্র ৩৪ বছর বয়সে দলের দায়িত্বভার গ্রহণণের পরই তাঁর ৩৫ বছরের ক্লান্তিহীন পথযাত্রা। এই যাত্রাপথ কখনই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। গত ৩৫ বছরে কমপক্ষে ২০ বার তাঁকে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়েছে।
হত্যাপ্রচেষ্টা থেকে বাঁচলেও স্বৈরাচারী শাসকদের জেল-জুলুম-অত্যাচারের হাত থেকে তিনি রক্ষা পাননি। এরশাদের স্বৈরশাসনের আমল থেকে শুরু করে সর্বশেষ ১/১১ সরকারের আমলে বেশ কয়েকবার তাঁকে কারাবরণ এবং দীর্ঘ কারা নির্যাতন ভোগ করতে হয়। মোকাবিলা করতে হয় অসংখ্য মিথ্যা মামলা ও হয়রানির।
কিন্তু কোনো কিছুই তাঁকে দমাতে পারেনি। অশুভ শক্তির সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত মোকাবিলা করেই তিনি লক্ষ্যের দিকে অবিচল পদক্ষেপে এগিয়ে গেছেন। তাঁর নেতৃত্বে এরশাদ স্বৈরাচারের পতন হয়। পরবর্তীকালে বিএনপি-জামায়াত জোটের দুঃশাসন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অবিমৃশ্যকারী কাণ্ডকারখানা থেকে তিনি বাংলাদেশকে পুনরুদ্ধার করেন। গত আট বছর একটানা তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের আমলে বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশে পা রেখেছে। বিশ্বমন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধির হার ৭.২ শতাংশ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এই সব অর্জনের পেছনে রয়েছে শেখ হাসিনার দূরদর্শী প্রাজ্ঞ নেতৃত্ব।
কেবল রাজনীতিবিদ বা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবেই তিনি অনন্য নন, তাঁর রয়েছে অসাধারণ মানবিক গুণাবলি। লাখ লাখ নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের কাছে তিনি স্নেহময়ী ভগ্নী-জায়া-জননী। বিলাস-বাহুল্যবর্জিত সাধাসিধে জীবনযাত্রা এবং পোশাকেআশাকে তাঁর অতুলনীয় বাঙালিয়ানা তাঁকে মাটির মানুষের, দুঃখী মানুষের প্রিয় নেতা হিসেবে অসামান্য শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার আসনে বসিয়েছে।
বর্ণাঢ্য সংগ্রামী রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি তাঁর ধীশক্তি এবং সৃজনশীল লেখালেখি তাঁকে রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যেও অনন্য আসনে বসিয়েছে। রাজনীতিবিদ শেখ হাসিনা যেমন, তেমনি লেখক-চিন্তক শেখ হাসিনাও বাংলাদেশের ইতিহাসে নিজের জন্য শিখরস্পর্শী অক্ষয় আসন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। জাতির পিতার যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিব্যাপ্ত হয়ে থাকবেন বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের প্রতি অধ্যায়ে, প্রতি পাতায়।
সংগ্রাম, সাফল্য আর বর্ণাঢ্য জীবনের জীবন্ত কিংবদন্তি জননেত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘজীবী হোন। বাঙালি জাতিকে আরও দীর্ঘদিন উন্নত, সমৃদ্ধ জীবন গড়ার কর্মযজ্ঞে নেতৃত্ব দিন, সুস্থ থাকুন - ৭০ বছরে পদার্পণের মাহেন্দ্রক্ষণে এটাই আমাদের প্রত্যাশা, জাতির প্রত্যাশা।
জয়তু শেখ হাসিনা, শুভ জন্মদিন!