অবশেষে সন্তানের দেয়া আগুনে দগ্ধ সেই বাবা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা গেলেন।
মৃত্যু এক অনিবার্য বাস্তবতার নাম। কবিও তাই লিখেছেন, জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে। মৃত্যুকে তাই মেনে নিতেই হয়। কিন্তু এ কেমন মৃত্যু?
পাঠক জানেন, মৃত ব্যক্তির নাম এটিএম রফিকুল হুদা (৪৮)। তিনি ফরিদপুর শহরের একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি। এমন পরিবারে যা হয়, ছেলেকে তিনি ইতিপূর্বে পাঁচ লাখ টাকা দামের মোটরসাইকেল কিনে দিয়েছিলেন। সেটি কিছুদিন চালানোর বাজারে নতুন মডেল এলে পুত্র এবার সেটি কিনে দেয়ার আবদার করে। সেই অন্যায় আবদার মেনে না নেয়ায় পুত্রধন ক্ষেপে গিয়ে পিতা-মাতার গায়েই আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ছেলেটির বাবা রফিকুল হুদা গুরুতর এবং মা সিলভিয়া হুদা সামান্য দগ্ধ হন। আর দগ্ধ পিতা অবশেষে বুধবার ভোররাতে মারা যান।
এই একটি মৃত্যুর মধ্য দিয়েই আমাদের ক্ষয়িষ্ণু সমাজচিত্র ও মানবিকতাবোধের একটা সরল চিত্র ফুটে ওঠে। আমাদের মনে ভিড় করে অনেকগুলো প্রশ্ন : পিতৃহন্তা ছেলেটি কিভাবে বড় হয়ে উঠছিল, পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কী শিক্ষা পাচ্ছিল সে?
আরও প্রশ্ন জাগে, সবে কলেজে ওঠা একটি ছেলেকে পাঁচ লাখ টাকা দামের মোটরসাইকেল কিনে দেয়ার কী যুক্তি ছিল?
জানি, এসব প্রশ্নের জবাব নেই। আমরাও চাই না। কারণ, আমরা ভালোভাবেই জানি, শুধু উচ্ছৃঙ্খল কিশোরপুত্রের দেয়া আগুনে নয়, হতভাগ্য পিতাটি পুড়েছেন ভোগবাদের সর্বনাশা আগুনেও।
ভোগবাদ আজ আমাদের প্রায় পুরোপুরি গিলে ফেলেছে। তাই আজ আমাদের সবকিছু চাই, এখনই চাই এবং যে কোনো উপায়েই চাই। আইনকানুন নীতি-নৈতিকতা কিছুরই তোয়াক্কা করি না আমরা। খাওয়ার নেশায়, পাওয়ার নেশায় উন্মত্ত আমাদের গন্তব্য কোথায়, পরিণাম কী - এসব ভাবার সময়ও আমাদের নেই।
বড়লোকের বখে যাওয়া ছেলেটিরও সময় ছিল না। মোটরসাইকেল চেয়েছে, পায়নি। ব্যস, আর দেরি না করে পিতা-মাতার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। ভোগবাদের এমনই নেশা।
আমরা ভাবি, এ নেশার আগুনে আর কত সংসার জ্বলেপুড়ে ছারখার হবে?