জঙ্গি উপদ্রবের পাশাপাশি এই মুহূর্তে আরেকটি নীরব ঘটনা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। সেটি হলো বন্যা। ইতিমধ্যে উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলা বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন এলাকা, তলিয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ি, ফসলের ক্ষেত। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় এসব এলাকায় খাদ্য, পানি ও জ্বালানির সঙ্কটে পড়েছে লাখো মানুষ।
কুড়িগ্রাম বন্যা নিয়ন্ত্রণ সূত্রের হিসাব মতে, ৩১টি ইউনিয়নের ২৯০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ৩৫২ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকা এখন বন্যার পানিতে ডুবে আছে। নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাজার হাজার পরিবার। এ অবস্থায় ভাঙন প্রতিরোধ এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ানো, জরুরি ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমসহ নানামাত্রিক পদক্ষেপ নিতে হবে। বন্যার্ত মানুষ যেন কোনো অবস্থায়ই দুর্ভোগে না পড়েন সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
দুর্গত এলাকায় স্বাভাবিকভাবেই বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সঙ্কট দেখা দিয়েছে।বন্যার পানিতে ডুবে গেছে শত শত একর ফসলি জমি। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় অনেক এলাকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়ায় অনেক এলাকায় শ্রমিকদের কাজকর্ম বন্ধ। স্বাভাবিকভাবেই এসব অতিদরিদ্র শ্রেণির মানুষের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। দুর্গত কয়েকটি এলাকায় সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়েছে। তবে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, চাহিদার তুলনায় এই ত্রাণ নিতান্তই অপ্রতুল।
বন্যা আমাদের দেশে নতুন নয়। বিশেষত গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনার একটি বৃহত্তম ব-দ্বীপ অঞ্চলে বাংলাদেশের অবস্থানের কারণেই বাংলাদেশকে বছরের পর বছর বন্যায় আক্রান্ত হতে হচ্ছে। কখনও কখনও এই বন্যা সহনশীল মাত্রায় সীমাবদ্ধ থাকছে, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা ভয়াল আকার ধারণ করছে।
বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ, ভাঙন রোধে বালির বস্তা ফেলা থেকে শুরু করে নানাভাবেই বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিন্তু অভিযোগ আছে এসব কাজে অনিয়ম দুর্নীতির। ফলে প্রতি বছরই বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। নদীগর্ভে হারিয়ে যায় ফসলের মাঠ, ঘরবাড়ি, জমিজমা। সব হারিয়ে নিঃস্ব হয় অনেক মানুষ।
এ অবস্থা উত্তরণে দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ যেমন নিতে হবে তেমনি বন্যার তাৎক্ষণিক আঘাত থেকে বাঁচার জন্য বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। দুর্গত মানুষ-পশুপাখি যেন আশ্রয় পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে বন্যার্তদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসতে হবে। সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় পূর্বপ্রস্তুতি থাকলে তা অনেকটাই কমিয়ে আনা যায়। সরকারের পাশাপাশি সামাজিক সংগঠনগুলোকেও বন্যার্তদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়ানো জরুরি বলে আমরা মনে করছি।