ঈদ মানে উৎসব, ঈদ মানে খুশি। ঈদুল আযহায় খুশির সঙ্গে যোগ হয় ত্যাগ ও আত্নশুদ্ধির মহিমা।
ঈদ এলেই শহরবাসী মানুষ অল্প ক’দিনের জন্য হলেও ফিরতে চায় গ্রামে, যেখানে তার শেকড় পোঁতা আছে গাছের ছায়ায় লতায় পাতায় উদাসী বনের বায়। সেই শেকড়ের টানে মানুষ ছুটতে চায় গাঁয়ের দিকে। স্মৃতি ও বর্তমানের মেলবন্ধন ঘটিয়ে করতে চায় ঈদের উৎসব।
কিন্তু গাঁয়ের দিকে উড়াল দিতে গিয়েই বিপাকে পড়ে মানুষ। প্রতি বছর ট্রেন-বাসের টিকিটসংকট, টিকিট পেলেও পথে পথে অন্তহীন যানজট - এসব যেন প্রতিবছর ঈদের নিয়মিত বার্ষিক চিত্র।
আমরা বুঝতে পারি না, কেন এমন হয়। বর্তমান সরকার গত কয়েক বছরে সড়ক-মহাসড়কে বেশ-কিছু দর্শনীয় উন্নয়ন ঘটিয়েছে। ট্রেন যোগাযোগের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন এসেছে এবং আরো আসবে শোনা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে দুর্ভোগের অবসান না-হোক, অন্তত কমার তো কথা।
কিন্তু কেন যেন তাও হচ্ছে না। এই সম্পাদকীয় যখন লেখা হচ্ছে তখনও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। পদ্মায় পানি বেড়ে ডুবে গেছে বেশ-ক’টি ঘাট। চালু আছে একটি। তা দিয়ে ঈদের বিপুল জনস্রোত সামাল দেয়া মোটামুটি অসম্ভব।
আরো খবর এসেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে। এমনিতে ঈদের অতিরিক্তি গাড়ির চাপ, তার ওপর মেঘনা সেতুর ওপর অচল হয়ে পড়ে অতিরিক্ত মালবোঝাই একটি ট্রাক। গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো সেই ট্রাক যানজটে ‘নতুন মাত্রা’ যোগ করে।
এভাবেই মানুষের ঈদযাত্রা পরিণত হয় দুঃস্বপ্নে। অথচ এখানে সৃষ্ট সমস্যার বেশ-ক’টি ইচ্ছে করলেই এড়ানো যেত। আমাদের প্রশ্ন :
০১. যে গাড়ি মাঝপথে অচল হয়ে যায়, সেটি রাস্তায় নামলো কীভাবে? ফিটনেসবিহীন গাড়ি আর কতকাল আমাদের যাত্রাপথে এমন বাগড়া দিয়ে যাবে।
০২. অতিরিক্ত মালবোঝাই ট্রাকটি এত দূর এলো কীভাবে? অতিরিক্ত পণ্যবাহী যানবহন রাস্তা ও সেতু দু’টোর জন্যই ক্ষতিকর। অথচ তা দিব্যি চলছে এবং সেতুর মাঝখানে গিয়ে শুয়েও পড়েছে। এসব কে দেখবে?
এসব প্রশ্নের জবাব যেমন আমাদের জানা নেই, তেমনি জবাব দেযারও কেউ আছে বলে মনে হয় না। অথচ সবকিছু দেখাশোনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন সরকারি সংস্থা আছে। সর্বশেষ বেতন স্কেলে তাদের বেতন দ্বিগুণও হয়েছে। কিন্তু দায়িত্বহীনতার সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলিতেছে।
সড়ক মহাসড়ক ও রেলের উন্নয়নে সরকার দু’হাতে অর্থ বরাদ্দ করছে। অথচ এক শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারির দুর্বলতা ও দায়িত্বহীনতার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
কিন্তু এভাবে চলে না। চলতে দেয়া যায়ও না। ঈদযাত্রায় ভোগান্তির এটাই হোক শেষ বছর। কেননা, আমাদের চলমান উন্নয়ন অভিযাত্রায় এহেন ভোগান্তি একেবারেই বেমানান।