বর্ষায় সারাদেশের সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অনেক জায়গার যোগাযোগ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) জরিপে বলা হয়েছে, ১৪ দশমিক ৩২ শতাংশ সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। দেশের প্রধান সড়কের তিন হাজার ১০০ কিলোমিটার খানাখন্দে ভরা। অতি বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় সড়কের চেহারা বদলে দিয়েছে। পিচ উঠে তার ইট-সুরকিও ধসে গেছে।
অনেক জায়গায় এমন নাজুক অবস্থা হয়েছে, চাষের জমি না সড়ক বোঝার উপায় নেই। রাস্তার এমন দুরবস্থা ঈদের ছুটিতে শেকড়ের টানে গ্রামমুখী মানুষকে বিপদের মধ্যে ফেলবে।
বছরে দুই ঈদে বড় বড় শহর ছেড়ে মানুষ গ্রামে যায়। এ সময় মহাসড়কে যানবাহনের চাপ অনেক গুণ বেড়ে যায়। ছাল-চামড়া ওঠা ওই রাস্তা তাই দুর্ঘটনার ফাঁদ হয়ে উঠতে পারে। ঈদের বাকি আর মাত্র সপ্তাহ খানেক। এর মধ্যে সড়কে যানবাহনের চাপ বাড়তে শুরু করেছে। দ্রুত ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা মেরামত করতে হবে অন্যথায় স্বাভাবিকের চেয়ে দুর্ঘটনা কয়েক গুণ বেড়ে যেতে পারে।
সহজের আওতাধীন সড়ক-মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ২১ হাজার ৭০০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১৯ হাজার কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক। অতি বৃষ্টি থেকে সৃষ্ট বন্যা-পরবর্তী সওজের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের ওপর জরিপ করা হয়েছে। তাদের হিসাবে ১৪ শতাংশের বেশি সড়ক অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
সংবাদমাধ্যমের খবরে প্রকাশ হচ্ছে, গাজীপুরের টঙ্গী থেকে কালীগঞ্জ পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার সড়কের ১৫ কিলোমিটার খানাখন্দে ভরা ও ভাঙাচোরা। রাজধানী ঢাকার আশপাশসহ সারা দেশের সড়কের দুরবস্থার চিত্র প্রকাশ হচ্ছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার কাঁচপুর সেতু থেকে মেঘনা সেতু পর্যন্ত ১৭টি স্থানে কার্পেটিং উঠে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা থেকে বের হওয়ার অন্য সড়কগুলোর অনেক জায়গায় একই অবস্থা বিরাজ করছে।
সওজের দেয়া তথ্যে জানা যায়, সিরাজগঞ্জের ৪২৭ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ২০৯ কিলোমিটারের অবস্থা খুব খারাপ। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাওয়ার পুরো সড়ক খানাখন্দে ভরা। এটি বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক।
খুলনা, যশোর, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, পাবনা, ভোলা, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত। এগুলোর জাতীয় মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। ঈদযাত্রার আগেই সওজ ঝুঁকিপূর্ণ সড়কের চিত্র তুলে ধরেছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানটি জরুরি ভিত্তিতে মেরামতের জন্য ২০০ কোটি টাকা বাড়তি চেয়েছে। চলতি বছরে সড়ক মেরামতের জন্য এক হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। তড়িঘড়ি করে সড়কের দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরে মেরামতের উদ্যোগ নেয়া প্রতিষ্ঠানটির একটি ইতিবাচক দিক। আরো ভালো হবে তারা যদি সরকারের কোষাগারের টাকায় মেরামত সঠিক ও আন্তরিকভাবে করে।
ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের যাত্রা নিরাপদ করতে হবে। সে জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সড়কের ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা মেরামতের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে জাতীয় মহাসড়ক এত সহজে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা নয়। প্রতিনিয়ত সংস্কারের কাজ সেখানে চলছে। কিন্তু এসব সংস্কারের মান সব সময় থাকে দুর্বল। যতটা উন্নত কাজ হওয়ার কথা, দুর্নীতির কারণে সেটা হয়ে ওঠে না। রাস্তা যেভাবে দৃঢ় ও মসৃণ থাকার কথা সেভাবে থাকে না, তেমনি মেয়াদের আগেই সেটা ভেঙেচুরে যায়। আর বন্যা হলে তো কথাই নেই। এবার যেন অন্তত মেরামতের কাজটি সঠিকভাবে হয় সে প্রত্যাশা সবার। আর ঈদে ঘরে ফেরা মানুষগুলো স্বস্তি নিয়ে বাড়ি যাক এবং কর্মস্থলে ফিরে আসুক আমরা এটাই চাই।
বিবার্তা/ এমএম/ এমএইচ