আজকাল পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্নপত্র পাবার জন্য মুখিয়ে থাকেন ছাত্র-ছাত্রীরা৷ প্রশ্ন মিলে গেলে দেয়া হয় লাখ লাখ টাকা৷ চোখের পলকেই সেই প্রশ্ন ছড়িয়ে যায় মোবাইল থেকে মোবাইলে। ফেসবুক থেকে ফেসবুকে৷ ই-মেল থেকে ই-মেলে৷এ কোন সংস্কৃতি চালু হলো।
পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে গত ছয় বছরে রাজধানীতে দায়ের হওয়া ৭০টি মামলার একটিও এখন পর্যন্ত প্রমাণ করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ।
শাস্তি পাননি কোনো অপরাধী। মামলা থেকে অব্যাহতি ও খালাস পেয়ে গেছেন অনেকে। অনেক আসামি জামিন নিয়ে আর আদালতে হাজিরা দিতেও যাচ্ছেন না।
ইদানিং পরীক্ষা একটা হলেই শোনা যায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ। কখনো সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করে। আবার কখনো দেখা যায় তারা প্রশ্নফাঁসকারীদের গ্রেফতারও করে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো প্রশ্নফাঁসকারীর কঠোর শাস্তি হয়েছে সেরকম খবর কোথাও পাওয়া যায়নি।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে পরীক্ষায় নকল বন্ধ করেছে। এটা একটা ভাল দিক। এতে ছাত্র-ছাত্রীরা নকল করার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে লেখা পড়ায় মন দিয়েছিল। কিন্তু এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেল প্রশ্নফাঁসের ঘটনা। একের পর এক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন পেয়ে যাচ্ছেন ছাত্র-ছাত্রীরা। তাহলে নকল বন্ধ করে হলোটা কি। আগেই প্রশ্ন পেয়ে গেলে আর লেখা পড়ার দরকার হয় না। এই মানষিকতার পথে হাটতে শুরু করেছে ছাত্র-ছাত্রীরা।
এই প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে অনেক কিছু লিখছেন। কেউ বলছেন, ‘‘প্রশ্নপত্র ফাঁস এখন ভাইরাসের মতো ছড়াচ্ছে! আমরা এক আজিব দেশে বাস করছি।
কেউ লিখছেন, প্রশ্নফাঁসকারীদের ধরে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হোক। তা না হলে এ ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে পুনরায় পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তিনি বলেছেন, যদি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষারপ্রশ্ন ফাঁস হয়ে থাকে তাহলে আবার সেই পরীক্ষা নেয়া হোক।
এর আগে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন সংবাদ সম্মেলন করে মেডিকেলের এ পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানিয়েছিলেন।
এদিকে মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় যারা অংশ নিয়েছিলেন সেই ছাত্র-ছাত্রীরা লাগাতার আন্দোলন করে যাচ্ছেন। তাদেরকে প্রেসক্লাবের সামনে থেকে পুলিশ তাড়িয়ে দিয়েছে। তারা এখন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছেন।
বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকেও মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের দাবি উঠেছে। এ দাবিতে হাইকোর্টে রিট পর্যন্ত হয়েছে।
আমাদের প্রশ্ন হলো কেন এসব ঘটছে। এর কি কোনো প্রতিকার নেই?
সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে আমরা বলতে চাই, আপনারা একদিকে বলবেন পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কোনো প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটেনি। অন্যদিকে আপনারাই প্রশ্নফাঁসের দায়ে গ্রেফতার করবেন। এ ধরণের দ্বৈতনীতি পরিহার করুন। যা বলবেন একটা বলুন। দুই ধরণের কথা বললে তাতে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। মানুষের মনে প্রশ্ন যাগে। যদি প্রশ্ন ফাঁসই না হতো তাহলে গ্রেফতার হয় কি করে। আর যদি ফাঁসই হয়ে থাকে। তাহলে পরীক্ষা বাতিল না করে কেন ফলাফল ঘোষণা করা হলো। বিষয়টা এখনই সুরাহা হওয়া উচিত।