পর্যটন হোক জাতীয় আয়ের অন্যতম উৎস

পর্যটন হোক জাতীয় আয়ের অন্যতম উৎস
প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০১৫, ১৭:১০:৪৯
পর্যটন হোক জাতীয় আয়ের অন্যতম উৎস
প্রিন্ট অ-অ+
দক্ষিণ এশিয়ায় পর্যটন খাতে বাংলাদেশের আয় সবচেয়ে কম। অথচ পর্যটকদের আকর্ষণ করার মতো উপাদান বাংলাদেশে অনেক রয়েছে। এখানে আছে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন। আছে  রয়েল বেঙ্গল টাইগার,  চিত্রল হরিণের আবাসভূমি। এই সুন্দরবন দুনিয়ার যেকোনো পর্যটককে বিমোহিত করবে। 
 
বাংলাদেশে আছে বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। আছে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। যেখান থেকে একই সঙ্গে সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় দেখা যায়। এমন সৈকত পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি আছে বলে জানা নেই। আমাদের আছে মনপুরার মতো দ্বীপ। যেখানে গেলে মন আর ফিরে আসতে চায় না।  
 
নদী-আর পানি মানুষকে কাছে টানে। সেই নদীর দেশ বলা হয় বাংলাদেশকে। নদী নেই এমন এলাকা খুঁজে পাওয়া যাবে না এদেশে। রয়েছে হাজারো খাল-বিল-হাওড়। পুরো দেশটাকে যদি আমি সবুজ বলি সেটাও ভুল হবে না। 
 
সবুজের এমন সমারোহ অন্য কোনো দেশে বিরল। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়, ঝরনা ও লেকের সৌন্দর্য তুলনাহীন।  বান্দরবান, খাগড়াছড়ি আর রাঙ্গামাটি গেলে যে কারও মন ভাল হয়ে যায়। 
 
সিলেটের চা বাগান সৌন্দর্যের আরেক লীলাভূমি। চা বাগানের সৌন্দর্য না দেখলে বোঝাই যাবে না সেটা কতটা মনমুগ্ধকর। কতটা আর্ষনীয়। সেন্টমার্টিন দ্বীপ ও আশে পাশের প্রবাল দ্বীপগুলোর স্বপ্নময় পরিবেশ যেকোনো পর্যটককে মুগ্ধ করার যোগ্যতা রাখে। সব মিলিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এক অপরূপ দেশ এই বাংলাদেশ।
 
বাংলাদেশের মানুষ অতিথি পরায়ণ সেকথা সবাই স্বীকার করতে বাধ্য। এখানে কোনো পর্যটক এসে আতিথেয়তা পাননি তা বলা যাবে না।    
 
এত কিছু থাকার পরও পর্যটন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান নৈরাশ্যজনক।  নিরাপত্তা ও অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার খুবই অভাব এখানে। বিদেশি পর্যটকরা এখানে এসে যাতায়াত ব্যবস্থা ও নিরাপত্তার অভাববোধ করেন। দেশীয় পর্যটকরাও কোথাও কোথাও নিরাপদ বোধ করেন না। এই দুটি বিষয়ের প্রতি সরকারকে বেশি নজর দিতে হবে। পর্যটকদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেয়া যাবে না।  
 
পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য ২০১৩ সালে ট্যুরিস্ট পুলিশ গঠন উদ্যোগটি প্রশংসনীয় ছিল। কিন্তু এর কার্যকারিতা না থাকাটা দুঃখজনক। পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে যেহেতু ট্যুরিস্ট পুলিশ ব্যবস্থা গঠন করা হয়েছে, সেহেতু পর্যটন মৌসুমসহ সারা বছর সেখানে পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের উপস্থিতি এবং কার্যক্রম নিশ্চিত করতে হবে। 
 
বর্তমানে বিশ্বের এক বৃহত্তম শিল্প হলো পর্যটন। বিশ্ব অর্থনীতিতে এর অবদান অপরিসীম। বিশ্ব অর্থনীতির অংশ হিসেবে বাংলাদেশেও পর্যটন শিল্পের অবদান অনস্বীকার্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে ১৯৯৯ সালে পর্যটন খাত থেকে বাংলাদেশের আয় হয়েছিল ২৪৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা এবং ২০০৮ সালে এই আয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬১২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
 
অর্থাৎ আমরা সামনের দিকে যাচ্ছি। কিন্তু যতটা গতিতে যাওয়ার কথা ততটা গতিতে যাচ্ছি না। সমস্যাটা সেখানেই। 
 
আশার কথা দেশের পর্যটনশিল্পের বিকাশে ২০১৬ সালকে পর্যটন বছর হিসেবে ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার।
 
গত ২৭ অক্টোবর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বৌদ্ধ ঐতিহ্য ও পর্যটন বিষয়ক সম্মেলন উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ঘোষণা দেন। জাতিসংঘের পর্যটন সংস্থা ও  বাংলাদেশ দুদিনব্যাপী এ সম্মেলনের আয়োজন করে।
 
প্রধানমন্ত্রী এ অঞ্চলের বৌদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যভিত্তিক পর্যটন বিকাশে সকলকে একসঙ্গে কাজ করারও আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘পর্যটনশিল্পের প্রচার ও বিপণন কার্যক্রমকে আরো গতিশীল ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে আমরা ২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ বা ভিজিট বাংলাদেশ-১৬ হিসেবে উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
 
এ ছাড়া বিদেশি নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণে ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করাসহ পর্যটন এলাকায় ট্যুরিস্ট পুলিশ গঠন এবং বাংলাদেশকে পর্যটনশিল্পের দেশ হিসেবে পরিচিত করতে সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
 
আমরা প্রধানমন্ত্রীর এই আহবানকে সাধুবাদ জানাই। আমরা আশা করি প্রধানমন্ত্রীর এই আহবানে সারা দিয়ে সবাই এগিয়ে আসবেন। পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবেন। শুধু গার্মেন্ট আর রেমিটেন্সের দিকে আমরা তাকিয়ে না থাকি। আগামী দিনে পর্যটনও হোক আমাদের জাতীয় আয়ের অন্যতম উৎস।
 
 
 
 
 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com