শিশুদের সঙ্গে প্রতারণা বন্ধ করুন

শিশুদের সঙ্গে প্রতারণা বন্ধ করুন
প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০১৬, ১২:৩৩:৫৯
শিশুদের সঙ্গে প্রতারণা বন্ধ করুন
প্রিন্ট অ-অ+
গত সাত বছর ধরে বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে সরকার দিনটিকে ‘পাঠ্যপুস্তক উৎসব’ হিসেবে উদযাপন করে আসছে। এবছরও সারাদেশে বছরের প্রথম দিন বই উৎসব করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বই উৎসবের উদ্বোধন করেন একদিন আগে ৩১ ডিসেম্বর। তার অর্থ ১ জানুয়ারি প্রতিটি শিশু তাদের হাতে নতুন বই পাবে। কিন্তু কতিপয় শিক্ষকের কারণে দেশের শতভাগ শিশু বছরের প্রথম দিন নতুন বই হাতে পায়নি। কেই বই পেয়ে খুশী মনে বাড়ি গেছে। আবার কেউ বই না পেয়ে কেঁদে কেঁদে বাড়ি ফিরেছে।  
কোনো কোনো স্কুলে দেয়া হয়েছে আংশিক। কোথাও মোটেই দেয়া হয়নি। শিশুদের বলা হচ্ছে সেশন ফি ও বেতন না দিলে বই দেয়া হবে না। কিন্তু কেন? স্বাভাবিক কারণেই এ ঘটনায় যেমন শিশুরা কষ্ট পেয়েছেন। তেমনি অভিভাবকেরাও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। 
 
অনিয়মের অভিযোগ আসছে রাজধানীসহ সারাদেশ থেকে। গত ৬দিন ধরে পত্রিকায় এ সংক্রান্ত বহু সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। কোথাও বলা হচ্ছে বই সবগুলো পৌঁছেনি। কোথাও বলা হচ্ছে আগে বেতন, পরে বই। কোথাও বলা হচ্ছে যার পরীক্ষায় পাস করেছে তারা নতুন শ্রেণিতে ভর্তি না হলে বই দেয়া হবে না। 
 
শিশুদের বিনামূল্যে বই দিচ্ছে সরকার। এ খাতে সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে থাকে। কিন্তু কতিপয় শিক্ষকের কারণে সরকারের সেই ভাবমূর্তি নষ্ট করা হচ্ছে। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা খুবই জরুরি। 
 
গত কয়েকদিনের পত্রিকা ঘাটাঘাটি করে যতটুকু পাওয়া গেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, জামালপুরের ঝিনাইগাতি উপজেলায় টাকা ছাড়া মাধ্যমিক শ্রেণির বই মিলছে না। বিনামূল্যের সরকারি বই নিয়ে সংশ্লিষ্ট অফিস ও বেশ কিছু স্কুলের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে।
 
উপজেলায় গড়ে ওঠা প্রাইভেট স্কুলের সরকারি বই নিতে অফিসকে টাকা না দিয়ে বই পাওয়া অসম্ভব বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবার এমপিওভূক্ত কোনো কোনো স্কুল ও মাদরাসার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও বিনামূল্যের সরকারি বইয়ের বিনিময়ে টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে। সব মিলিয়ে ঝিনাইগাতিতে বই নিয়ে চলছে রমরমা বাণিজ্য। উপজেলায় ১৫টি প্রাইভেট স্কুল রয়েছে। সংশ্লিষ্ট অফিসকে টাকা না দিয়ে স্কুলগুলো বই পাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। স্কুলপ্রতি ৫ থেকে শুরু ১০ হাজার পর্যন্ত টাকা গ্রহণ করা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
 
বরিশালের দুর্নীতিবাজ শিক্ষকরা ‘ওপেন সিক্রেট’ স্টাইলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিনামুল্যের বইয়ের মূল্য হাতিয়ে নিচ্ছেন। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত শিক্ষকরা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 
 
শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিনামুল্যের বই বিতরণের বিপরীতে শুধু বরিশালেই কোটি টাকা অবৈধভাবে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অবৈধ পন্থায় হাতিয়ে এই কোটি টাকার ভাগের তালিকায় রয়েছেন জেলা ও বিভাগীয় শিক্ষা কর্মকর্তারা। শিক্ষা অফিসারের দপ্তর থেকে বিদ্যালয়ে বই আনার খরচ বলে বিনামূল্যে বই বিতরণী কার্যক্রমে শিশু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। অথচ উপজেলা শিক্ষা দপ্তর থেকে বহন করা হয়েছে এ খরচ। এমনটিই জানালেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার।
 
ফেনীতে সব শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে বিতরণের বই তুলে দিতে ব্যর্থতার জন্য বই না পৌঁছাকে কারণ দেখিয়েছেন জেলার শিক্ষা কর্মকর্তারা। তবে ২৪ অক্টোবরই ৯৮ শতাংশ পাঠ্যবই উপজেলায় পৌঁছে দেওয়ার দাবি করে জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড-এনসিটিবির চেয়ারম্যান মো. আবুল কাশেম মিয়া বলেছিলেন, পরের দুদিনের মধ্যেই বাকি বই পৌঁছে যাবে। তিনি ২৪ ডিসেম্বর বলেছিলেন, “মাধ্যমিকের সব বই উপজেলায় পৌঁছে গেছে। প্রাথমিক ও নিম্ন মাধ্যমিকের ৯৮ শতাংশ বই পাঠানো হয়েছে। অবশিষ্ট বইগুলো ২৫-২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে পৌঁছে যাবে।”
 
কুতুবদিয়ায় ১ জানুয়ারিতে বই উৎসবে প্রথম শ্রেণির অন্তত ৫ হাজার শিক্ষার্থীর বই মেলেনি। আরো প্রায় ৫ হাজার দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পেয়েছে মাত্র ১টি করে বই।সারা দেশের ন্যায় ব্যাপক আয়োজনে বই উৎসবে মেতে উঠলেও জীবনের শুরুতে বিদ্যালয়ে আসা প্রথম শ্রেণির শিশুদের ফিরে যেতে হয়েছে বই ঘাটতির দরুণ। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, ২০১৬ শিক্ষা বর্ষে উপজেলার ৫৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও অন্তত ৪০টির মতো কিন্ডার গার্টেন স্কুলের জন্য ১ লাখ ১৯ হাজার ৪০০ নতুন বইয়ের চাহিদা পত্র দেয়া হয়েছিল। তবে বই সরবরাহ দেয়া হয় ৫৯ হাজার ৫০০। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণির কোনো বই-ই সরবরাহ করা হয়নি প্রথম ধাপে। যে কারণে কোমলমতি প্রথম শ্রেণির শিশুরা বই হাতে পেলনা বই উৎসবে।
 
লালমনিরহাট থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, ১ জানুয়ারিতে খুদে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়ার কথা থাকলেও ৫ দিনেও নতুন বই পায়নি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার বুড়া সারডুবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই শতাধিক খুদে শিক্ষার্থী। আগামী দিনেও বই হাতে পাবে কি না তা নিয়ে হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। 
 
পাবনার চাটমোহর থেকে খবর পাওয়া গেছে, সরকার ঘোষিত বই উৎসবের প্রথম দিন গত শুক্রবার বই না পেয়ে পাবনার চাটমোহর উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শত শত শিশু শিক্ষার্থী নতুন বই না পেয়ে কান্নাকাটি করে বাড়ি ফিরেছে। কিছু শিক্ষার্থী যেমন বই পেয়ে আনন্দ-উল্লাসে ফেটে পড়ে, তেমনি শত শত শিশু শিক্ষার্থী নতুন বই না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে। চোখে পানি এসে যায় অভিভাবকদেরও। শুক্রবার বই বিতরণের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে প্রতি শ্রেণির ২-৩ জন করে শিক্ষার্থীকে নতুন বই দেয়া হয়েছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতি শ্রেণির দুই থেকে তিনজন শিক্ষার্থীকে বই দেয়া হয়েছে। এতে ছাত্র-অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ। 
 
বগুড়ার শেরপুর উপজেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে বিনামূল্যের সরকারি বই বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিদ্যালয়ের নির্ধারিত টাকা পরিশোধ করতে না পারায় এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যের সরকারি বই দেয়া হচ্ছে না। এদিকে বিনামূল্যের সরকারি বই না পেয়ে উপজেলার খামারকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
 
অভিযোগে জানা যায়, সারাদেশে সরকারিভাবে বছরের প্রথমদিন পাঠ্যপুস্তক উৎসব পালন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এই উপজেলাতেও সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একযোগে পাঠ্যপুস্তক উৎসবের আয়োজন করা হয়। কিন্তু অধিকাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে বই বিতরণে অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়। ফলে উৎসবের দিন শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়ার কথা থাকলেও তা মানা হয়নি। এমনকি বিদ্যালয় কর্তৃক নির্ধারিত সেশন ফি ও বেতনের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় এখনও অনেক শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যের সরকারি বই দেয়া হয়নি। তবে ছাত্র-ছাত্রীদের একটা অংশ বাধ্য হয়ে বিদ্যালয়ের নির্ধারিত টাকা পরিশোধ করে বই নিতে পারলেও দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীরা এখনও বই পাননি বলে অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে।
 
খামারকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন, সাদিয়া আকতার, সাজ্জাদ হোসন, সৈকত হোসেন, মেহেদী হাসান, সোলায়মান আলী জানান, বিদ্যালয়ের নির্ধারিত সেশন ফি ও বেতনের ৬০০টাকা দিতে না পারায় তারা এখনও নতুন বই পাননি। দু’একজন ছাত্র-ছাত্রী ছাড়া তাদের বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী নতুন বই না পেয়ে মনে ভীষণ কষ্ট পেয়েছেন। এছাড়া নতুন বছরের প্রথমদিনে অনেক শিক্ষার্থী বই না পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরে গেছেন বলেও তারা জানান।
 
অভিভাবক হোসেন আলী, কামাল মিয়া ও সোলায়মান আলী চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তাদের ছেলে-মেয়েরা ওই বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। জনপ্রতি ৬০০টাকা করে না দেয়ায় তাদের বই দেয়া হয়নি। এছাড়া ভর্তির নামেও অতিরিক্ত আরও ৪০০ টাকা দাবি করা হয়েছে বলে তারা জানান।
 
 
সৈয়দপুর উপজেলায় সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে সরকারি বই বিতরণ করা হয়। এ বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে পৌর এলাকার কয়া নং-১ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরতদের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে বই বিতরণ চলছে বলে শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা অভিযোগ করেন।
 
কয়া নং ১ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণী ও প্রথম শ্রেণীতে পড়ুয়া শিক্ষার্থী রাধা ও রাণীর পিতা কাঠমিস্ত্রি রাজু জানান, পরপর তিন স্কুলে গিয়েও সন্তানদের বই না মেলায় পরে বাধ্য হয়ে দুইজনের জন্য ১৪০ টাকা দেয়ার পরই বই দেয় শিক্ষকরা। আর এভাবে প্রায় আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে একই অজুহাতে টাকার বিনিময়ে বই প্রদান করে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
 
অভিযোগ পাওয়া গেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এখানে সকল শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২০ টাকা করে নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কিরণ চন্দ্র নাথকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান, চট্টগ্রাম শহর থেকে বই নিয়ে আসার জন্য যাদের পাঠানো হয়েছিল তাদের পারিশ্রমিক ও পরিবহন বাবদ ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে ২০ টাকা করে নেয়া হয়েছে।
 
উল্লেখ্য এই স্কুলে প্রায় ১ হাজার ৪০০জন ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়ন করে। সে হিসাবে স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রায় ২৯ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে।
 
পটুয়াখালীতে টাকা ছাড়া মিলছে না বই। জেলার বিভিন্ন উপজেলার একাধিক স্কুলে বই বিতরণ উৎসবে বিনামূল্যে বই না পাওয়ার অভিযোগ করেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। তাদের দাবি টাকা দিয়ে তাদের বিনামুল্যের বই সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এতে করে একদিকে সরকারের ভাবমূর্তি যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনি শিশুরা প্রভাবিত হচ্ছে এসব কর্মকাণ্ডে।
 
জেলার বাউফল উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা টাকা ছাড়া বই হাতে পায়নি। টাকা দিতে না পারায় বহু শিক্ষার্থী উৎসবে যোগ দিতে পারেনি। একাধিক সূত্র জানিয়েছে শুক্রবার ও শনিবার বাউফলের ৬১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সরকারি বই বিতরণের দিন ধার্য ছিল। সে অনুসারে শিক্ষার্থীরা স্ব-স্ব বিদ্যালয়ে বই আনতে গেলে নতুন শ্রেণিতে ভর্তি না হলে এবং বই সংগ্রহের খরচ বাবদ ২০০ টাকা না দেয়া পর্যন্ত বই দেয়া হবে না বলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে জানানো হয়। এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে জেলার গলাচিপা উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেও। 
 
অভিযোগ পাওয়া গেছে বগুড়া থেকেও। বগুড়ার শেরপুর উপজেলার সর্বত্র বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সরকারিভাবে দেয়া বই বিদ্যালয় কর্তৃক নির্ধারিত টাকা পরিশোধ করতে না পারায় শিক্ষার্থীদের দেয়া হচ্ছে না।
 
পঞ্চগড় জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন বই পেতে ভর্তি ফি দুর্ভোগে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। ভর্তি ফি দিতে না পাড়ায় এখনো কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী নতুন বই হাতে পায়নি। আগে ভর্তি ফি ও বেতনের টাকা নিয়ে বই বিতরণের বিষয়টি স্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা। এদিকে কোথাও কোথাও ভর্তি ফি ও বেতন বাবদ অতিরিক্ত টাকা জমা নেয়ার অভিযোগও উঠেছে।
 
অভিযোগ পাওয়া গেছে খুলনার নৌবাহিনী স্কুল এন্ড কলেজের বিরুদ্ধে। সেখানে বই উৎসবের দিন এক থেকে ১০ রোল নম্বরের শিশুদের হাতে বই তুলে দেয়া হলেও অন্যদের বই দেয়া হয়নি। তাদেরকে আগামী ১০ জানুয়ারির মধ্যে নতুন শ্রেণিতে ভর্তি হতে বলা হয়েছে। যারা ভর্তি হচ্ছে শুধু তারাই বই পাচ্ছে।
 
রাজধানীর দনিয়ায় বর্নমালা স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও নতুন বছরের সেশন ফি ও ভর্তি ফি আদায়ের পর বই দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অভিভাবকেরা।  
 
এ জাতীয় অভিযোগ সারা দেশ থেকে প্রতিদিনই আসছে। সব তুলে ধরা সম্ভব নয়। আবার অনেক জায়গা থেকে অভিযোগ আসবেও না। তার অর্থ যতটুকু পাওয়া যাচ্ছে অভিযোগের মাত্রা তার চেয়েও অনেক বেশি হওয়াটা বিচিত্র কিছু নয়। 
 
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. শফিকুর রহমান বলেছেন, প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণের লক্ষ্যে প্রস্তুতকৃত বইসমূহে অর্থ সহায়তা প্রদান করেছে বিশ্ব ব্যাংক। এ খাতে তাদের মোট ব্যয় হয়েছে ৩২৩ কোটি ১০ লাখ টাকা। অবশিষ্ট ৪১৬ কোটি টাকা ব্যয় করেছে বাংলাদেশ সরকার। 
 
তার এই বক্তব্য থেকেই বোঝা যায় বই এর সঙ্গে বেতনের সংযোগ নেই। তাহলে স্কুলের বেতন আর ফি’র সঙ্গে কেন এই বইয়ের তুলনা করা হচ্ছে।কেন বেতন না দিলে বা সেশন ফি না দিলে বই দেয়া হচ্ছে না।  
 
আমরা চাই শিশুরা যেন বার বার প্রতারিত না হয়। যে শিক্ষকরা কোমলমতি শিশুদের শিক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত, তারাইবা কেন জড়িত হবেন এই বই কেলেঙ্কারীতে। স্কুলের ফি না দিয়ে কেউ স্কুলে লেখাপড়া করতে পারে না, এটাই স্বাভাবিক নিয়ম।বই নিয়ে পালিয়ে যাওযারতো প্রশ্নই আসে না। একজন ছাত্র বই নেবে পড়ালেখার জন্য। যে বই দিচ্ছে সরকার বিনামূল্যে। তাহলে শিশুদের মনে কষ্ট দিয়ে সেই বইয়ের সঙ্গে কেন জড়িয়ে দেয়া হচ্ছে স্কুলের বেতন বা ফি। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল বিষয়টি তদন্ত করে দায়িদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন এটাই প্রত্যাশা করছি। 
সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

কারওয়ান বাজার (২য় তলা), ঢাকা-১২১৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১১৯২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com