একেবারেই ছোট একটি খবর - ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন তার পত্নীকে একটি গাড়ি কিনে দিয়েছেন।
কোনো ব্যক্তি, তা তিনি সাধারণ মানুষ হোন কিংবা প্রধানমন্ত্রী, তার স্ত্রীকে গাড়ি কিনে দেবেন, এটাই স্বাভাবিক।এর মধ্যে ‘খবরের’ কী আছে?
থাকার কথা নয়। কিন্তু খবরটিতে ‘খবর’ হওয়ার উপাদান ঢুকিয়ে দিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন। তিনি তার মিসেসকে গাড়ি কিনে দিয়েছেন বটে, তবে সেটি একটি পুরনো ও কম দামের গাড়ি। ভাবা যায়?
হয়তো সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশ ব্রিটেনে যায়, কিন্তু আমাদের মতো অনগ্রসর দেশে মোটেই যায় না। আমাদের তেমন অঢেল অর্থবিত্ত নেই, প্রযুক্তি নেই, কিন্তু লোকদেখানোপনাটা আছে ষোল আনা। কোটি টাকা দামের গাড়ি না হলে আমাদের চলে না। সেই গাড়ি অর্জনের জন্য আমরা যা খুশি তা-ই করতে পারি - চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজি থেকে শুরু করে হাজার কোটি টাকা ব্যাংকঋণ নিয়ে তা লোপাট করা, সবই। কিছুই আমাদের নৈতিকতায় আঘাত করে না। আমরা যেন বোধবুদ্ধিহীন নিম্নতর প্রাণী, যাদের শুধু পেলেই চলে, কীভাবে পেলো তা কোনো ব্যাপারই নয়।
ব্যাপার হতো, যদি আমরা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় সভ্য হতাম। মানুষ আর পশুর মধ্যে পার্থক্য হলো, পশু খাদ্য দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে আর মানুষ তার সামনে পাত্রভরা খাবার থাকলেও সহজে হাত বাড়ায় না। সে নানারকম বিবেচনা করে - এসব খাবার কেন, কার জন্য, এগুলো খাওয়ার উপযোগী কি না ইত্যাদি শতরকম প্রশ্ন।
এই বিবেচনাবোধই মানুষ ও পশুর মধ্যে বিভাজনরেখা। আজ ভাবি, আমরা কি সেই বিভাজনরেখাটা মেনে চলতে পারছি?
তবে আমরা না-পারলেও ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন পেরেছেন। প্রধানমন্ত্রী-পত্নীর তো সস্তা দামের পুরনো গাড়ি কেনার কথা নয়! কিন্তু মানুষসুলভ বিবেচনাবোধ থেকে স্ত্রীকে দামি গাড়ি কিনে দিতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন। অনুমান করি, একইরূপ বিবেচনাবোধ থেকেই মিসেস ক্যামেরনও বিষয়টিকে স্বাভাবিক বলে মেনে নিয়েছেন।
আজ আমরা যে রকম ভোগবাদী সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলেছি, ডেভিড ক্যামেরনের এই ছোট্ট কাজটি তার বিপরীতে একটি বড় বার্তা দিয়ে গেল। আমরা কি সেই বার্তাটি অনুভব করতে পারবো?