মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়¬-উন্মুখ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আজ থেকে আট বছর আগে প্রথম বার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমে তাঁর নির্বাচনী শ্লোগান করেন পরিবর্তনকে।পুরনো অনেক কিছুকে (অবশ্যই সবকিছুকে নয়)বদলে দেয়ার অঙ্গীকার ঘোষণা করে তিনি তাঁর দেশবাসীকে বলেন,‘চেঞ্জ,উই নিড।’ আমেরিকান জাতি ওবামার আহবানে সাড়া দেয়।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচনী অঙ্গীকার হিসাবে নেন দিনবদলের ঘোষণাকে। নানা দুঃশাসনে অতিষ্ঠ মানুষ দিনবদলের পক্ষে রায় দেন। নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে তিনি দিনবদলের চেষ্টায় ব্রতী হন এবং অনেকাংশে সফলও হন।
প্রশ্ন হলো, অনেকাংশে কেন, কেন সর্বাংশে নয়? নয় এ কারণে যে,পরিবর্তন কোনো একপাক্ষিক প্রক্রিয়া নয়। পরিবর্তন যিনি করবেন শুধু তার সততা ও দক্ষতা থাকলেই চলবে না, যিনি বা যারা বা যা-কিছু পরিবর্তিত হবে, তারও প্রস্তুতি থাকা চাই। যে রোগী অপারেশনের জন্য প্রস্তুত নয়, তাকে জোর করে অপারেশন টেবিলে শুইয়ে দিলে কাজের কাজ কতটুকু হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।
সরকার বা কর্তৃপক্ষ অবকাঠামো বদলে দিতে পারে, মানুষকে নয়। মানুষকে তার অন্তর্চেতনা দিয়ে, প্রজ্ঞা, উপলব্ধি, দূরদর্শিতা দিয়ে নিজের ভেতর থেকে বদলে যেতে হয়। এ কাজ কোনো সরকারি ফরমান জারি করে হওয়ার নয়; এটি একান্তই ব্যক্তি ও সমষ্টির কাজ।
দুঃখের বিষয় হলো, আমাদের সমাজে এই বদলে যাওয়ার বোধটিই এখন কাজ করছে না। বরং আমরা যেন এক ব্যাখ্যাহীন উন্মত্ততায় লিপ্ত হয়ে অনিশ্চিত গন্তব্যের পানে ছুটে চলছি। কার কথা বলবো, দোষই বা দেব
কাকে ?
সর্বক্ষেত্রেই কী যেন অস্থিরতা সবার মধ্যে !এক উদগ্র লালসার লোলজিহ্বা লকলক করে গিলে খেতে চাইছে আমাদের শান্তি ও স্বস্তিকে। মায়ের অপকর্ম দেখে ফেলায় অপকর্মের সঙ্গীরা মায়ের সামনেই মেরে ফেললো সন্তানকে। দুই বোনকে ধরে নিয়ে গণধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হলো না বেজন্মার দল,তারা লাঞ্ছিতা কিশোরীদের পরিবারের কাছে লাখ টাকা চাঁদা চাইলো। না পেয়ে সেই দুষ্কর্মের ভিডিও ছেড়ে দিল ইউটিউবে। কী স্পর্ধা দুরাচার দলের।
এরকম সামাজিক অনাচারের আরও দৃষ্টান্ত দেয়া যায়। আমরা ভাবি,আইন আছে। দুর্বৃত্তরা আইনের আওতায় আসবে। বিচার আছে, দুর্বৃত্তদের বিচার ও সাজা হবে। কিন্তু সমাজ কোথায়, সমাজ কী আছে? থাকলে সামাজিক প্রতিরোধ কোথায়? যে অল্পসংখ্যক বেজন্মার দল সমাজকে বিষিয়ে তুলছে, তারা তো বাইরের কেউ নয়। তারা আমাদেরই কারো না কারো স্বজন। আমাদেরই কারো কারো প্রকাশ্য-গোপন ইন্ধনেই তো ওরা দুঃসাহসী হতে পারছে।
কিন্তু দুষ্ট লোকের দুঃসাহস দেখানোর জায়গা কোনোভাবেই সভ্য সমাজ নয়। সভ্য সমাজে তাদের স্থান নেই, থাকতে পারে না - এই প্রত্যয়ে মানুষকে জেগে উঠতে হবে। সবরকম অন্যায়-অত্যাচারের বিরূদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে। সরকার, আইন ও বিচারব্যবস্থা – সবার আগে মানুষ। অন্যায়কারীদের সামাজিকভাবে একঘরে করতে পারে মানুষই। এটা্ই করতে হবে, যদি আমরা পরিবর্তন চাই, চা্ই বদলে যেতে।