গুলশান ট্র্যাজেডি কী আমাদেরকে বারবারই জন স্টেইনবেকের সেই ঐতিহাসিক উক্তি মনে করিয়ে দেয় না: ‘এখানে একটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, যা নিন্দার সব ভাষা অতিক্রম করে যায়। এখানে একটি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, যা চোখের পানি দিয়েও চিহ্নিত করা যায় না। এখানে একটি ব্যর্থতা ঘটে গেছে, যা আমাদের সাফল্যকে ম্লান করে দেয়।’
গুলশান ট্র্যাজেডি আমাদের সমাজকে, বিশেষত মায়েদেরকে এটাই ম্যাসেজ দিয়ে গেলো, শুধু মাদক নয়, খেয়াল রাখুন আপনার সন্তান যেন জঙ্গি না হয়ে যায়। কারণ জঙ্গি হলে সে মানুষ থাকে না, নরমাংসভোজী পিশাচ হয়ে যায়, রক্তলোভী জঘন্য জানোয়ার হয়ে যায়।
গুলশান ট্র্যাজেডি আমাদের সমাজকে এটাই জানিয়ে দিলো, সন্তানদের গতিবিধি বুঝতে না পারলে আমরাই এক সময় হয়ে পড়ব ঘৃণার পাত্র। হয়ে যাবো নিজের অজান্তে দেশের শত্রু। জঙ্গির বাবা-মা হিসেবে আমাদের নতুন পরিচয় হবে। সন্তানের জন্য শোক তো দূর, নিজের প্রতি তীব্র ঘৃণা নিয়ে হাহাকার করতে করতে বাকি জীবনটা কাটবে। নিজেকেই নিজে ধিক্কার দিতে থাকব কেন সন্তানহীন হলাম না! কেন জন্মের পরেই মরে গেল না এই কুসন্তান!
আমরা বিশ্বাস করি, মায়েরা একটু সচেতন হলেই বিপদগামিতা থেকে লাখো সন্তানকে রক্ষা করতে পারেন। সন্তান কার সাথে মিশছে, প্রতিমুহূর্তে লক্ষ রাখতে হবে। সন্তান চিন্তিত? চুপচাপ? আচরণে হঠাৎই পরিবর্তন? ধর্মের যেকোনো বিষয়ে অধিক মনোযোগী? কোরআন বা হাদিসের বাণী নিয়ে অনাবশ্যক মাতামাতি? বিশ্বে মুসলিমদের উপর হামলা, জুলুম, জঙ্গি হামলা বা জঙ্গি সংগঠনের নামধাম নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে? নেট ঘেঁটে খুঁজে বের করছে এ সংক্রান্ত নানা ঘটনা? ফেসবুক কর্মকাণ্ড ধর্মালোচনা আর হাদিস কোরআন বিষয়েই সীমাবদ্ধ? হঠাৎই নতুন কোনো বন্ধু তৈরি হয়েছে? ঘনঘন নতুন কোনো বন্ধু সম্পর্কে আলোচনা করছে?
মনে রাখতে হবে, মাদক যেমন বন্ধুর হাত ধরে আসে, জঙ্গিবাদের হাতছানিও বন্ধু বা কাছের লোকের কাছ থেকে আসে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, সন্তানকে সময় দিতে হবে। বোঝাতে হবে যে ধর্ম মানুষ খুন করার জন্য নয়।
আমরা বিশ্বাস করি, এ কাজটা কেবল একজন মা-ই পারে। দেশের যা পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে তাতে ঘরে ঘরে প্রতিটি মাকেই সচেতন হতে হবে। কারণ জঙ্গিদের টার্গেট আমরা এবং আমাদের ভবিষ্যতৎ প্রজন্ম। সেইসাথে এই প্রিয় দেশটা। মাতৃভূমি এবং সন্তানের জন্য আমাদেরকেই তো জেগে উঠতে হবে।