এ জাতির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পবিত্র ঈদ হলো রক্তাক্ত। দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাত কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঘটেছে এ মর্মান্তিক ঘটনা।
এ ঘটনার আরও মর্মান্তিক দিক হলো, শোলাকিয়ায় হামলার ঘটনায় নিহত ঘাতকদের একজন অন্তত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। জানা যায়, ব্যবসায়ী পিতার এই সুবোধ সন্তানটি চার মাস ধরে নিখোঁজ ছিল। অথচ এ বিষয়ে থানায় জিডি করা হয় ঈদের আগের দিন। অভিভাবকদের দায়িত্বজ্ঞানের এই নমুনা দেখে আমরা হাসবো না কাঁদব ভেবে পাই না।
এ অবস্থায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় সর্বশেষ যে সিদ্ধান্তটি নিয়েছে, তাকে স্বাগত না জানিয়ে পারছি না, যদিও মনে কিছু অস্বস্তি থেকেই যায়।
খবরে প্রকাশ, দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো শিক্ষার্থী টানা ১০ দিনের বেশি অনুপস্থিত থাকলে তার/তাদের নামের তালিকা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে।
চিরকাল মুক্তভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে, ফিরতে ও ছুটি কাটাতে অভ্যস্ত আমাদের জন্য আদেশটি অস্বস্তিকর, বলাই বাহুল্য । কিন্তু তারপরেও কিছু করার নেই। এটাই সময়ের দাবি। এ পরিস্থিতি আমরাই সৃষ্টি করেছি। নইলে জনাকীর্ণ রেস্তোরাঁ ও পবিত্র ঈদগাহে হামলার সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে কী করে স্কলাস্টিকা স্কুল ও নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নামিদামি প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের নাম আসে!
আমরা ভাবতেও পারি না, কী করে একজন অভিভাবক তার সন্তান চার মাস ধরে নিখোঁজ থাকার পরও নির্বিকার থাকেন। একশ্রেণীর অভিভাবকের এই উদাসীনতা তাদের সন্তানদের কোথায় নিয়ে গেছে, তা তো গুলশান ও শোলাকিয়ার রক্তস্রোত চোখে আঙ্গুল দিয়েই দেখিয়ে দিল।
সাম্প্রতিক সময়ে উচ্চবিত্ত পরিবারের বহু ছেলে এভাবে বাড়ি ছেড়ে জঙ্গিবাদে ঝুঁকছে বলে ইতিমধ্যে অভিভাবকদের সতর্ক করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এসব হামলার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও গণভবনে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় সন্তান বিপথগামী হলে পুলিশকে জানানোর জন্য ও সচেতন হওয়ার জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান। আর সর্বশেষ রবিবার শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এই নির্দেশ দিলেন।
আমরা মনে করি, শিক্ষামন্ত্রীর এই নির্দেশ যথার্থ। যত অস্বস্তিই হক, জঙ্গিবাদ অনুপ্রবেশের সূক্ষ্মতম ছিদ্রপথটিও বন্ধ করার জন্য যা যা করণীয়, তা তা করতেই হবে।
আমরা শিক্ষামন্ত্রীকে সর্বশেষ সিদ্ধান্তটির জন্য ধন্যবাদ জানাই আর অভিভাবক, বিশেষ করে উদাসীন ও অসচেতন অভিভাবকদের বলতে চাই, এবার একটু সচেতন হোন, নইলে জঙ্গিবাদ রাক্ষসের কবল থেকে আমরা কেউই বাঁচতে পারবো না।