আমাদের এক কবি লিখেছিলেন, জন্মেই কুঁকড়ে গেছি মাতৃজরায়ন থেকে নেমে।
মাতৃগর্ভ থেকে নেমেই কেউ কুঁকড়ে যায় না। আধুনিক মানুষের জীবনযন্ত্রণা ও হতাশাকে প্রতীকী রূপে ব্যক্ত করতেই কবি এভাবে বর্ণনা করেছিলেন। এ হলো কাব্য। বাস্তব সত্যের সঙ্গে এর মিল খুঁজতে যাওয়া ঠিক নয়। এও সত্য, তবে কল্পনার সত্য।
কিন্তু সেই কল্পনার সত্য যখন মূর্তিমান রূপ ধরে সামনে এসে দাঁড়ায় তখন বাকরুদ্ধ না-হয়ে উপায় কী! পাকিস্তান নামক দেশটির সর্বসাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে আমাদের তা-ই মনে হয়েছে। মনে হচ্ছে, এদেশটি সত্যিই মাতৃজরায়ু থেকে নেমেই কুঁকড়ে গেছে। নইলে একটা নির্বাচিত সরকার বিদ্যমান থাকতে প্রকাশ্যে কেউ-কি সামরিক বাহিনীকে ক্ষমতা দখলের আহবান জানাতে পারে? সভ্য বিশ্বে এ তো কল্পনারও অতীত।
তবুও পাকিস্তানে তা ঘটেছে। সেনাপ্রধানকে ক্ষমতা দখলের আহবান জানিয়ে পোস্টার পড়েছে পাকিস্তানে। সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরীফের ছবিসংবলিত পোস্টারটি লাগানো হয়েছে রাজধানী ইসলামাবাদ, বন্দরনগরী করাচি এবং গ্যারিসন শহর রাওয়ালপিন্ডি, লাহোরসহ দেশটির প্রায়-সব শহর এবং বিভিন্ন সেনানিবাস এলাকায়।
‘মুভ অন পাকিস্তান’ নামের একটি অখ্যাত দল এই পোস্টার লাগিয়েছে। এতে বলা হয়, আল্লাহর দোহাই, এগিয়ে আসুন।
উল্লেখ্য, মেয়াদশেষে জেনারেল রাহিল শরীফ পদ ছেড়ে দেয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতেই দলটি এ আহবান জানাচ্ছে। আগামী নভেম্বরে জেনারেল রাহিল শরিফের মেয়াদ শেষ হবে।
দলের প্রধান আলী হাশমি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, দুর্নীতিপরায়ণ সরকারের চাইতে একনায়কতন্ত্র অনেক ভালো।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের ৬৯ বছরের ইতিহাসের প্রায় অর্ধেক সময় দেশটি সামরিক জান্তার দ্বারাই শাসিত হয়েছে। কিন্তু সেসব সামরিক সরকারকেও ক্ষমতার দখল নিতে পোস্টার ছাপিয়ে আহবান জানায়নি কোনো তথাকথিত রাজনৈতিক দল। আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাকে একথাও বলেনি যে, দুর্নীতিপরায়ণ সরকারের চাইতে একনায়কতন্ত্র অনেক ভালো।
একবিংশ শতাব্দীতে এসে এমন কথা শুনলে আমাদের ভাবতে ইচ্ছে হয়, দীর্ঘ ৬৯ বছরের প্রায় অর্ধেক সময় একনায়কের ঘানি টানতে-টানতে দেশটির একশ্রেণীর মানুষ (ক্ষমা করবেন, অবশ্যই সবাই নন) বুঝি তাদের মনের চোখে ঠুলি পরে নিয়েছে। পিঠে স্বৈরাচারের বেতের ঘা না পড়লে তারা আর হাঁটতে পারছে না।
তা না-পারুক, কিন্তু তারা-যে একটি দেশের কোটি কোটি মানুষের এগিয়ে চলাকেও পেছন থেকে টেনে ধরছে, সেটাই আমাদের ভাবনার বিষয়।
পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের অনেক বিষয়ে তীব্র বিরোধ আছে, কিন্তু দেশটির সাধারণ মানুষ তো আমাদের শত্রু নয়। তাই কেউ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের হাঁক ছাড়লে দুশ্চিন্তা তো হবেই। সব সভ্য ও সচেতন মানুষেরই হবে। কারণ, তারা জানে, দুর্বল গণতন্ত্রও একনায়কতন্ত্রের চাইতে ভালো এবং কাম্য।
তাই আমরা গণতন্ত্রের জয় চাই – তা পাকিস্তানে হোক কি পানামা বা পাপুয়া নিউগিনিতে। আর চাই গণতন্ত্রবিরোধী সব কাণ্ডকীর্তির কবর রচিত হোক।