জেবেল রহমান গাণি বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (বাংলাদেশ ন্যাপ) চেয়ারম্যান ও বিশ দলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা। আলোচিত, আলোকিত তরুণ রাজনীতিকদের মধ্যে অন্যতম। দাদা জাতীয় নেতা মশিউর রহমান যাদু মিয়া ও বাবা সাবেক মন্ত্রী শফিকুল গাণি স্বপনের উত্তরসূরী হিসেবেই রাজনীতিতে তার পদচারণা।
জেবেল রহমান এটি মেনে নিয়েই বলেছেন, উত্তরাধিকারসূত্রে রাজনীতিতে আসলেও মেধা ও যোগ্যতার প্রতিফলন দেখিয়েই রাজনীতিতে থাকতে চান। তিনি মনে করেন, একমাত্র রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়াই রাজনীতির মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়। বরং জনকল্যাণই রাজনীতিবিদদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। গণমুখী হওয়া, জনগণের সংস্পর্শে থাকা রাজনীতিবিদদের মূল যোগ্যতা বলেও বিশ্বাস করেন তিনি।
জেবেল রহমানের দাবি, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের বীজ বপন করেছিলেন মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। সেটিকে তিনি আরও সামনে নিয়ে যেতে চান। নিজে তরুণ, অন্য তরুণ রাজনীতিকদের প্রতিও তার অগাধ বিশ্বাস। দল-মত নির্বিশেষে যে তরুণরা রাজনীতিতে রয়েছেন তাদের নিয়ে তিনি আশাবাদী। তরুণদের নিয়েই তিনি স্বপ্ন দেখেন। আশা করেন, তরুণরাই এগিয়ে নিয়ে যাবে বাংলাদেশকে।
রাজধানীর বারিধারা ডিওএইচএস’র বাসায় গত রবিবার বিবার্তা২৪.নেট এর ডেপুটি চিফ রিপোর্টার রাজকুমার নন্দীকে দেয়া এক একান্ত সাক্ষাতকারে বিশ দলীয় জোট গঠনের প্রেক্ষাপট, বর্তমান অবস্থা, জোটের মনোনয়ন, জোট শরিক জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি, বাংলাদেশ ন্যাপের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসহ সম-সাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন জেবেল রহমান গাণি।
বিবার্তা২৪.নেট : বাংলাদেশ ন্যাপ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিশ দলীয় জোটের শরিক একটি রাজনৈতিক দল। চেয়ারম্যান হিসেবে দলটির বর্তমান কর্মকাণ্ডকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
জেবেল রহমান গাণি : মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ন্যাপ প্রতিষ্ঠা করেন। মওলানা ভাসানী পরবর্তী মশিউর রহমান যাদু মিয়ার হাত ধরে দলটি সামনের দিকে অগ্রসর হয়। পরবর্তীতে শফিকুল গাণি স্বপনের নেতৃত্বে ন্যাপ’র কার্যক্রম শুরু হলেও অল্প সময়ের মধ্যে তার মৃত্যু আমাদের চলার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এরপর আমার উপর যখন দলের নেতৃত্ব অর্পিত হয়, তখন থেকেই আমি দেশের তরুণ সমাজকে দলে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে একটি আধুনিক রাজনৈতিক দল হিসেবে ন্যাপকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছি। আর সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
বিবার্তা২৪.নেট : মওলানা ভাসানী ন্যাপের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁকে আপনারা কতটুকু মূল্যায়ন করতে পেরেছেন? জোট রাজনীতির কারণে কি মওলানা ভাসানী ও জাতীয় নেতা মশিউর রহমান যাদু মিয়াকে সামনে নিয়ে আসতে আড়ষ্ট থাকেন?
জেবেল রহমান গাণি : একটি বিষয় আমাদের পরিষ্কার হতে হবে। মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী ও জাতীয় নেতা মশিউর রহমান যাদু মিয়া আমাদের চেতনার উৎস, তাদের দেশপ্রেম আমাদের পথ নির্দেশিকা। কিন্তু কর্মপদ্ধতি সেই জায়গায় নেই। কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করতে হয় রাজনৈতিক বাস্তবতায়। আমরা কোনো প্রভু সৃষ্টি করতে চাই না। ইতিহাসের আপন গতিতেই মওলানা ভাসানী ও যাদু মিয়ার স্থান নির্ধারিত হবে। জোর করে সেটা যেমন নির্ধারণ করা যাবে না, ঠিক তেমনই কেউ বাধা দিয়েও সেটা মুছে ফেলতে পারবে না।
মনে রাখতে হবে, বার বার ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ থাকলেও মওলানা ভাসানী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাননি, যাদু মিয়া দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে মাত্র নয় মাস ক্ষমতায় ছিলেন। শুধুমাত্র ক্ষমতা যে রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য নয়, সেটা আমাদের কাছে পরিষ্কার। মওলানা ভাসানী শেষ জীবনে ৯৬ বছর বয়সে ১৯৭৬ সালে ১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চের মাধ্যমে যে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের বীজ বপন করেছিলেন সেই অসমাপ্ত কাজটি আমরা শেষ করতে চাই। সে লক্ষ্যেই দলকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছি। আমাদের বিশ্বাস, সফল আমরা হব।
বিবার্তা২৪.নেট : ভাসানী, বঙ্গবন্ধু, জিয়া-রাজনৈতিক আদর্শ। মানুষ অন্য দু’জনকে জানতে পারলেও ভাসানীকে সেই অর্থে জানছে না, কেন? এ ব্যর্থতা কার?
জেবেল রহমান গাণি : এখানে ব্যর্থতা সকলেরই। আসলে রাজনীতিতে মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটেছে। আমরা কেউ আসলে কারো অবদানকে স্বীকার করতে চাই না। আর চাই না বলেই রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে শুধুমাত্র নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করি। আজকে যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়, সেই আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা ভাসানী। তারা ক্ষমতায় এসে সেই ভাসানীর নামই মুছে ফেলতে চাচ্ছে। প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছে একজনকেই। আপাতদৃষ্টিতে তারা সফল হলেও আমি মনে করি, এতে তাদের ব্যর্থতার পাল্লাই ভারী হচ্ছে। মনে রাখতে হবে, পিতাকে অস্বীকার করে সন্তান খুব বেশিদিন দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না। মওলানা ভাসানীকে মুছে ফেলে শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব নয়। বরং মওলানা ভাসানীকে সম্মান দিতে পারলেই শেখ মুজিবুর রহমান আরো বেশি সম্মানিত হতেন।
অন্যদিকে, মওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক ভাবাদর্শ ধারণ করে বিএনপি বার বার ক্ষমতায় আসলেও প্রকৃত অর্থে ভাসানীকে প্রতিষ্ঠিত করার কোনো কর্মসূচি তারা গ্রহণ করে নাই। রাজনৈতিক শূন্যতার মাঝে মওলানা ভাসানীকে ব্যবহার করলেও যথাযথভাবে তাঁর মূল্যায়ন করে নাই কেউ। আওয়ামী লীগ রাজনীতির ইতিহাস শুরু করে শেখ মুজিবুর রহমানকে দিয়ে আর বিএনপি জিয়াউর রহমানকে দিয়ে। এখানেই সমস্যা। এখান থেকে আমাদের সকলকেই বের হয়ে আসতে হবে। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় যার যতটুকু মর্যাদা প্রাপ্য তাকে তা দিতে হবে। তাহলেই জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে। শেরেবাংলা এ. কে ফজলুল হক, মওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, জেনারেল এম এ জি ওসমানী, মশিউর রহমান যাদু মিয়া-সকলকেই তাদের প্রাপ্য মর্যাদা প্রদান করা আজকে সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। কাউকে খাটো করার রাজনীতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
বিবার্তা২৪.নেট : অনেকেই বলে থাকেন, আপনি উত্তরসূরী রাজনীতির অন্যতম দৃষ্টান্ত। একইসঙ্গে আপনি অসম্ভব মেধার অধিকারীও। তাহলে অন্যদের মতো আপনি আলোচনায় নেই কেন?
জেবেল রহমান গাণি : কতটুকু মেধাবী সেটা আমি জানি না। তবে এটা শতভাগ সত্য যে, আমি আমার দাদা ও বাবার উত্তরসূরী হিসেবেই রাজনীতিতে এসেছি। রাজনীতি আমাকে আগ্রহী করেছে এই কারণে যে, আজকাল একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, শিক্ষিত ও মেধাবী শ্রেণি রাজনীতি বিমূখ হয়ে উঠছে। এটি ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য ভাল নয়, রাষ্ট্রের জন্যও মঙ্গলজনক নয়। আগামী দিনে তরুণ, শিক্ষিত ও যোগ্য ছেলে-মেয়েরা যাতে রাজনীতি থেকে দূরে সরে না যায় সেই চেষ্টাটাই আমি করতে চাচ্ছি। বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতির বেড়াজালে হয়তো আমি আমার কথা বলতে পারছি না- তবে আমি বিশ্বাস করি, সময় ও সুযোগে নিশ্চয় আমি আমার সবটুকু মেধা দেশ ও জাতিকে দিতে সমর্থ হবো। বর্তমানের প্রচলিত রাজনীতির পক্ষে আমি নই। আমি বিশ্বাস করি, রাজনীতিতে যে ব্যাপক শূন্যতা চলছে তাতে অপরাজনীতির অবসান হবেই। এই মুহূর্তে আমি খুব বেশি কথা বলে মুখ থুবড়ে পড়ে যাওয়ার চেয়ে বরং ধৈর্য ধরে উপযুক্ত সময়ে আমার কথাগুলো জাতির সামনে তুলে ধরতে চাই।
বিবার্তা২৪.নেট : আপনি তরুণদের নিয়ে স্বপ্ন দেখেন। আশা করেন, তরুণরাই এগিয়ে নিয়ে যাবে বাংলাদেশকে। সেক্ষেত্রে রাজনীতি বিমুখ মেধাবী তরুণদের রাজনীতিমুখী করতে আপনার চিন্তা-ভাবনা কী?
জেবেল রহমান গাণি : ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে- দার্শনিক প্লেটো বলেছেন, ‘দ্য পেনাল্টি ফর স্টেইং অ্যাওয়ে ফরম পলিটিকস ইজ বিং রুল বাই ইন ইউর ইম্পিউরিটি’ অর্থাৎ ‘আপনি যদি রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখেন, তাহলে ভবিষ্যতে আপনার চেয়ে যারা অযোগ্য, যোগ্যতা কম তাদের দ্বারাই আপনি শাসিত হবেন। এই কথাটা আজকের প্রজন্মকে বুঝতে হবে। আর কথাটি আমি আজকের তরুণ প্রজন্মকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। আমি আমার রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে বাংলাদেশের যেখানেই গেছি সেখানেই পারিবারিক কারণে কিছু আধুনিক, মেধাসম্পন্ন তরুণ সমাজের সাথে সাক্ষাত হয়েছে, তাদেরকেও আমি এই বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করেছি। আমি এই কাজটিকে রাজনীতির ব্রত হিসেবেই নিয়েছি।
বিবার্তা২৪.নেট : দাদা মশিউর রহমান যাদু মিয়া ও বাবা শফিকুল গাণি স্বপনের মতো আপনাকেও ক্যারিশমেটিক আচরণে দেখার সুযোগ আছে কি? নাকি আপনাকে প্রচলিত রাজনীতির শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে সঁপে দেয়ার পরিণতিতে দেখতে হবে?
জেবেল রহমান গাণি : আমার মনে হয়, গণমুখী হওয়াটা কিংবা জনগণের সংস্পর্শে থাকাটাই বাংলাদেশের মতো একটি দেশের রাজনীতিবিদদের মূল যোগ্যতা হওয়া উচিত। আমি কবে ক্যারিশমেটিক নেতা হতে পারব- জানি না। তবে, দাদা-বাবার মতো জনকল্যাণে রাজনীতি করার চেষ্টা করছি। বর্তমানে যেহেতু আমি বিরোধী রাজনীতি করছি, সেহেতু নিজেকে তুলে ধরার সুযোগটা কম। তবে রংপুর বিভাগে আমি সুযোগ পাচ্ছি, অন্যান্য জায়গায়ও সুযোগ নেবার চেষ্টা করছি। ক্যারিশমেটিক কি-না জানি না, তবে আমার বক্তব্যে দেশের কথা, মানুষের কথা বলার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
বিবার্তা২৪.নেট : বিশ দলীয় জোটের অন্যতম দু’টি শরিক দল হচ্ছে এলডিপি ও জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর)।দল দু’টি (এলডিপি পুরোপুরি এবং জাতীয় পার্টির কয়েকজন নেতা) বিএনপিতে বিলীন হচ্ছে বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা রয়েছে। জোটের একজন অন্যতম শীর্ষ নেতা হিসেবে আপনি ব্যাপারটিকে কিভাবে দেখছেন?
জেবেল রহমান গাণি : বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসেবে সদস্য নেয়া কিংবা তাদের দলকে শক্তিশালী করার জন্য যদি কোনো নেতা, ব্যক্তি বা দলকে একীভূত করতে চায় সেটা তাদের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত। সেখানে ২০ দলীয় জোটের একজন শরিক হিসেবে আমি ক্ষতিগ্রস্ত নয়। আমি মনে করি, বিএনপি যেমন নিজেদের শক্তিশালী করার চেষ্টা করছেন কিংবা করবেন, তেমনি একইসঙ্গে জোটকেও শক্তিশালী করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। আমার জানা মতে, জোট সম্প্রসারণের জন্য দু-একটি রাজনৈতিক দলের সাথে কথা-বার্তাও হচ্ছিল। ফলে এটিকে (বিএনপিতে একীভূত) বড় করে দেখছি না। কোনো রাজনৈতিক দল যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, তারা যদি নিজেদের দলকে বিলুপ্ত করে বিএনপিতে একীভূত হয়ে যায় এবং তাতে করে যদি বিএনপি শক্তিশালী হয় এবং তারাও যদি সেখান থেকে মনে করে যে, তারা বর্তমানে যে রাজনৈতিক দল করছেন তার চেয়ে বিএনপিতে গেলে বেশি ভাল অবস্থায় থাকবেন, তাতে করে তো কারোর আপত্তি থাকার কোনো সুযোগ নেই, থাকেও না।
বিবার্তা২৪.নেট : দল দু’টি যদি শেষ পর্যন্ত বিএনপিতে বিলীন কিংবা একীভূত হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে ২০ দলীয় জোটের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হবে কি-না?
জেবেল রহমান গাণি : ২০ দলীয় জোট গঠনের আগে আমরা বিএনপির সাথে সমমনা ৮ দলীয় জোট করে যুগপদ আন্দোলনে ছিলাম। পরবর্তীতে সেখানে এলডিপিকে পেলাম, এরপর কল্যাণ পার্টিকে পেলাম। জোট গঠনের আগে আগে আরো দুই-তিনটি দল আমাদের সাথে এসে একীভূত হলো। এরপর ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান থেকে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তুলে দেয়া হলে সংবিধানে তা পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল বিএনপির নেতৃত্বে ১৮ দলীয় জোট গঠিত হলো। তারপর কাজী জাফর আহমদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি যোগ দিলে তা ১৯ দলীয় জোট হলো। এরপর তা বিশ দলীয় জোট হলো। তাছাড়া জোটে তো সুনির্দিষ্ট কোনো সীমারেখা দেয়া হয়নি যে, জোটে ভবিষ্যতে আর কোনো দল আসতে পারবে না। এখন বিশ দলীয় জোট আছে। ভবিষ্যতে ২১ হবো, ২২ হবো কিংবা ১৮ হবো-তাতে কী আসে-যায়। এতে করে তো জোটের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কোনো কারণ আমি দেখি না। কেননা, আমরা তো আমাদের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুৎ হচ্ছি না।
বিবার্তা২৪.নেট : জোট গঠনের প্রায় সাড়ে তিন বছর অতিবাহিত হলেও জোটের কোনো শীর্ষ নেতাকে তার আসন থেকে এখন পর্যন্ত মনোনয়ন প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দেয়া হয়নি বলে জানা যায়। এটি নিয়ে জোটে অসন্তোষও রয়েছে। আসলে মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার ব্যাপারটি কতটা জরুরি?
জেবেল রহমান গাণি : মনোনয়নের বিষয়টি তখনই আসবে, যখন দেশে সত্যিকার অর্থে অর্থবহ একটি নির্বাচন হবে এবং আমরা সে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। কিন্তু তেমন নির্বাচন তো আসেনি, আর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি যে নির্বাচন হয়েছিল, ওই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা না থাকায় তাতে তৎকালীন ১৮ দলীয় জোট অংশগ্রহণ করেনি। তাছাড়া মনোনয়নের বিষয়টা পরোক্ষ। কেননা, শুধু মনোনয়ন পাওয়ার জন্যই জোট গঠিত হয়নি। জোট যখন গঠিত হলো, তখন আমাদের যে উদ্দেশ্য ছিল, তা হলো-একটি নির্বাচন ব্যবস্থা, যে ব্যবস্থার মাধ্যমে সত্যিকার অর্থে জনগণের পছন্দের একটি সরকার বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করা। সে লক্ষ্যে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান থেকে বিলুপ্তকৃত নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে আমরা আন্দোলন শুরু করি। আজ পর্যন্ত আমরা সেখানেই রয়েছি, সে লক্ষ্য থেকে সরে যায়নি।
কোনো আসনে যারা সত্যিকার অর্থে যোগ্য অর্থাৎ জোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে যে সকল দলের তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী প্রার্থী আছে, যাকে দিয়ে ওই আসনটি জোটের পক্ষে আনা যাবে, সেখানে তাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে। এটিই নিয়ম ও বাস্তবতা। ফলে জোটের অন্তর্ভুক্ত হওয়া মানেই মনোনয়ন পাওয়া নয়। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে শুধু মনোনয়ন প্রাপ্তির সাথে জোটের সম্পর্কও আমি দেখি না। মনোনয়ন শুধু তাকেই দেয়া হবে, যে জোটের পক্ষে সেই আসনটা আনতে পারবে। আর সেটাই একটি জোটেরও লক্ষ্য হওয়া উচিত। তাছাড়া হয়তো দেখা যাবে, অভ্যন্তরীণ কারণে অনেক রাজনৈতিক দল তাদের সিটিং (বর্তমান) এমপিকে (বিএনপি জোট দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করায় নবম সংসদের এমপি) মনোনয়ন না দিয়ে নতুন কাউকে মনোনয়ন দিচ্ছে। ওই আসনের বাস্তবতা, জনগণের সমর্থন কিংবা মতামতকে বিবেচনায় নিয়ে এটা করা হতে পারে। আর এটা আমরা অহরোহ দেখছি। এতে আশ্চর্য হওয়ারও কিছু নেই।
বিবার্তা২৪.নেট : একাত্তর সালে আমাদের মহান স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল জামায়াতে ইসলামী। সেজন্য দলটি অনুতপ্ত বলেও তাদের আচরণে মনে হয় না। সেক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীর বাংলাদেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার থাকে কি-না।
জেবেল রহমান গাণি : জামায়াতে ইসলামী ১৯৭১ সালে রাজনৈতিক দল হিসেবে পাকিস্তানের অখণ্ডতার পক্ষে ছিল। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে রাজনৈতিক অঙ্গণে দলটি সাংগঠনিকভাবে আবারো সক্রিয় হয় ১৯৭৭-’৭৮ সালের পর থেকে। বর্তমানে রাজনৈতিক দল হিসেবে যে জামায়াতে ইসলামী আছে, ২০০৮ সালে যাদের নিবন্ধন হয়েছিল, তাদের যে গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র আছে সেগুলোর কোনখানেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে বা বিপক্ষে তাদের অবস্থান রয়েছে, এমনটা তারা বলছে না। ১৯৪৭ সালেও জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের বিপক্ষে অর্থাৎ অখণ্ড ভারতের পক্ষে ছিল। তাই বলে কি পাকিস্তানে জামায়াতে ইসলামীকে স্বাধীনতার বিপক্ষের দল হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়েছে? তা তো না। যেকোনো গণতান্ত্রিক দেশে যেখানে বহুদলীয় গণতন্ত্রের চর্চা থাকে, সেখানে জনগণ কাকে সমর্থন দেবে সেই সুযোগটা তাদেরকেই দিতে হয়, যাতে তারাই মূল্যায়ন করবে-কে দেশের পক্ষে, আর কে দেশের বিপক্ষে। একটি রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী অন্য কোনো রাজনৈতিক দলকে স্বাধীনতার পক্ষে বা বিপক্ষে বলাটা নেহাতই শিশুসুলভ ও জ্ঞানহীন বক্তব্য।
আমি জামায়াতে ইসলামীকে বাংলাদেশের অন্য যেকোনো আরেকটি রাজনৈতিক দলের মতো দেখতে চাই। তাছাড়া ১৯৭১ সালের জামায়াতে ইসলামী আর বর্তমান জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। সেটি ছিল জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান আর এটি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আমার জন্ম স্বাধীনতার পরে। আমি জামায়াতে ইসলামীর যে সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড দেখেছি, যে সকল রাজনৈতিক আন্দোলনে তারা অংশগ্রহণ করেছে-সেখানে কোনখানেই বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে বিলুপ্ত করে বাংলাদেশকে অন্য কোনো রাষ্ট্রের সঙ্গে একীভূত হওয়ার কোনো প্রমাণ খুঁজে পায়নি। কাজেই জামায়াতে ইসলামীকে আমি একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে দেখতে চাই। তাদের রাজনীতিতে যারা যারা বিশ্বাস করে তারা জামায়াতে ইসলামী করবে। তারা যদি জনগণের কাছে গিয়ে তাদের সমর্থন আদায় করতে পারে, সেখানে আমি একজন গণতন্ত্রমনা মানুষ হয়ে সেটা কিভাবে অস্বীকার করব। তাছাড়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সংবিধান মেনে নিয়েই রাজনীতি করছে।
বিবার্তা২৪.নেট : বলা হয়ে থাকে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিশ দলীয় জোটের নিবন্ধিত অনেক দলকেই অংশগ্রহণ করানোর জন্য তাদেরকে এমপি-মন্ত্রিত্বসহ নানা ধরণের সুযোগ-সুবিধার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। যেটা পরবর্তীতে জোটের অনেক নেতাও প্রকারান্তরে স্বীকার করেছেন। ওই নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত বর্তমান সরকার দুই বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছে। তাহলে জোটের নিবন্ধিত একটি রাজনৈতিক দলের চেয়ারম্যান হিসেবে আপনি কি মনে করেন, ওই সকল সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ না করা রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।
জেবেল রহমান গাণি : একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে আমি মহান আল্লাহ-তায়ালার কাছে শুকরিয়া আদায় করছি এজন্য যে, একদলীয় যে চেতনা সেখান থেকে আমি নিজেকে ও আমার দলকে (বাংলাদেশ ন্যাপ) অনেক সুযোগ-সুবিধা ও লোভ-লালসা-সবকিছু থেকে বাঁচিয়ে এর বাইরে আছি এবং রাজনীতি করছি। জোটের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সরকারি প্রলোভনে পা দিয়ে ৫ জানুয়ারি ভোট ও ভোটারবিহীন ওই নির্বাচনে যদি আমার দল অংশগ্রহণ করতো, তাহলে আজ আমাদের দলের আর রাজনীতি করার কোনো মৌলিক ও নৈতিক অধিকার থাকত না। কারণ, সেদিন নির্বাচনের নামে আসলে এক ধরনের নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল, যে নির্বাচন দেশে-বিদেশে কোথাও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। জনগণের মতের প্রতিফলন যে নির্বাচনে ঘটেনি, সেখানে অংশগ্রহণ করলে তা হতো জনগণের সাথে প্রতারণার শামিল। সুতরাং নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সর্বোপরি মওলানা ভাসানীর আদর্শকে লালন করা একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে ওই সুযোগ-সুবিধা না নিয়ে জনগণের সামনে অন্তত নিজেদের নৈতিক অবস্থান ঠিক রাখতে পেরেছি।
বিবার্তা২৪.নেট : আপনার পিতা সাবেক মন্ত্রী শফিকুল গাণি স্বপন এক সময় বিএনপি করতেন। রংপুর বিভাগে বিএনপিকে সুসংগঠিত করতে আপনার পিতার অনেক অবদান রয়েছে বলে জানা যায়। তারপরও ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে নীলফামারী-১ (ডোমার-ডিমলা) আসন থেকে আপনার পিতাকে মনোনয়ন দেয়নি বিএনপি। তাঁর পুত্র হয়েও সেই বিএনপির সাথে জোট করলেন, কেন?
জেবেল রহমান গাণি : ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে শফিকুল গাণি স্বপন বিএনপির একজন সদস্য ছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক বা যেকোনো দৃষ্টিকোণ থেকেই হোক, বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম এবং নির্বাচনের জন্য গঠিত মনোনয়ন কমিটি তাকে মনোনয়ন দেননি। আমার দৃষ্টিকোণ থেকে এ ঘটনায় তাঁর সন্তান হিসেবে মানসিকভাবে আহত ও মনোক্ষুন্ন হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে বিএনপির এই সিদ্ধান্তটি যে সঠিক ছিল না, তা ওই নির্বাচনেই প্রমাণিত হয়েছে। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির পক্ষে গণজোয়ার থাকা সত্ত্বেও তাদের প্রার্থী সেখানে তিন নম্বর স্থান অধিকার করেন। বিএনপির ওই সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল না, আমার মনে হয়-একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা সেটা উপলব্ধি করতে পেরেছে। আর আমি জনাব শফিকুল গাণি স্বপনের পুত্র হিসেবে নয়, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান হিসেবে জোটভুক্ত হয়েছি, যে দলটি শফিকুল গাণি স্বপনই পুনরুজ্জীবিত করেন।
২০০৮ সালের নির্বাচনের পরে যে সরকার গঠিত হয় তাদের ব্যর্থতা কিংবা কর্মকাণ্ডে আমরা মনে করেছি, ওই মুহূর্তে ব্যক্তি সুযোগ-সুবিধা কিংবা আক্রোশের চেয়ে দেশের ও জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করা বেশি জরুরি। তখন বেগম খালেদা জিয়া জোটের মধ্যে আমাদেরকে আমন্ত্রণ জানালেন এবং উনার (খালেদা) সকল উপলব্ধি ও বাস্তবতা আমাদের সামনে তুলে ধরলেন, আমরাও তাঁর সাথে সম্পূর্ণভাবে একমত হই। দেশের গণতন্ত্রই যেখানে হুমকির সম্মুখীন, বিশেষ করে সংবিধান থেকে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে দিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা ছিল জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। সেজন্য নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আমরা জোটবদ্ধ হই। আর ব্যক্তিগত পছন্দ ও আক্রোশের উপরে উঠতে না পারলে সকল রাজনীতিই বৃথা, এই শিক্ষা আমি আমার পিতা ও দাদার কাছ থেকে পেয়েছি।
বিবার্তা২৪.নেট : একটি রাজনৈতিক দলের মূল উদ্দেশ্য হলো জনকল্যাণ করা। আপনার দলের প্রতিষ্ঠাতা মওলানা ভাসানীও আমৃত্যু জনকল্যাণে কাজ করে গেছেন। এখন তাঁর প্রতিষ্ঠিত দল বাংলাদেশ ন্যাপ (নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হওয়ার সময়) দেশের কল্যাণে কী করতে চায়?
জেবেল রহমান গাণি : ন্যাপের প্রতিষ্ঠাতা মওলানা ভাসানী ও ভাসানী পরবর্তী চেয়ারম্যান মশিউর রহমান যাদু মিয়া। তাদের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও পরিবেশ এবং আজকে যারা বাংলাদেশ ন্যাপে আছেন ও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এক নয়। সেজন্য তাদের সঙ্গে তুলনা করাটা বোধহয় ঠিক হবে না। তাছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তানসহ বিশ্বের বহু দেশেই জোটগতভাবে সরকার গঠন হচ্ছে। কারণ, জোটের রাজনীতি ক্রমেই বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা লাভ করছে। সে বিবেচনায় দলকে চলমান রাখতে কৌশলগত কারণে বাংলাদেশ ন্যাপও জোটবদ্ধ হয়েছে এবং আমাদের লক্ষ্যটাও খুব সহজ। সেটা হলো-বাংলাদেশ ন্যাপ জনকল্যাণে কাজ করতে চায়। তাই আমরা যদি মনে করি, জনকল্যাণে এই সকল নীতি প্রণয়ন করা প্রয়োজন, সেখানে আমরা যদি জোটগতভাবে একটি রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারি এবং সে সরকারকে যদি ওই ব্যাপারে প্রভাবিত করতে পারি, তাহলে সেই কাজগুলো করা আমাদের জন্য অনেকটা সহজ হবে। তাছাড়া জনগণের সমর্থন নিয়ে এককভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা হয়তো আমরা করতে পারি, কিন্তু সেটা দীর্ঘমেয়াদী। তবে সে চেষ্টা আমাদের অব্যাহত থাকবে।
বিবার্তা২৪.নেট : সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গিবাদের বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশে এক ধরনের অস্থিরতা চলছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
জেবেল রহমান গাণি : জঙ্গিবাদের বিষয়টিকে আজ শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বেও নতুন রাজনৈতিক সঙ্কট হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। আর ক্ষমতাসীনরা সেই সুযোগটা গ্রহণ করে রাজনৈতিক বিরোধীদের গায়ে জঙ্গিবাদের তকমা লাগিয়ে অবৈধ ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার অপচেষ্টা করছে। তবে এর পরিণতি দেশ, জাতি ও সরকার-কারো জন্যই শুভ হবে না। তাছাড়া এই ইস্যুতে অস্থিরতা অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মানচিত্রও পরিবর্তনের আশঙ্কা রয়েছে। তাই বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠীকে এই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। কেননা, বিরোধী দলকে দমন করতে গিয়ে তাদের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা খোঁজার অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে সরকার। আর এ ক্ষেত্রে তারা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও জননেতা তারেক রহমানের সংশ্লিষ্টতার হাস্যকর অভিযোগ এনে কার্যত নিজেদের ব্যর্থতাকেই আড়াল করার চেষ্টা করছে।
বিবার্তা২৪.নেট : মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করা বাংলাদেশ নানা বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে। সে অগ্রযাত্রায় একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে আগামীর বাংলাদেশকে আপনি কিভাবে দেখতে চান?
জেবেল রহমান গাণি : ভবিষ্যত বাংলাদেশকে কিভাবে দেখতে চাই, এটাতো সাক্ষাতকারে বলে শেষ করা যাবে না। তবে এককথায় বলতে চাই, একটি সোনার বাংলাদেশ দেখতে চাই। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমানে যে রাজনীতি চলছে এই রাজনীতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতেই হবে। রাজনীতিতে সম্পূর্ণ ইউটার্ন প্রয়োজন। অর্থাৎ বর্তমান সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যেভাবে ক্ষমতার বলয়কে সাজানো হয়েছে, এই ব্যবস্থায় বাংলাদেশের ভবিষ্যত খুব উজ্জ্বল নয়। এখানে আসলে গণতন্ত্রের চর্চা হয় না। এখানে সংসদীয় গণতন্ত্রের নামে পাঁচ বছর পর পর একটা দিন ভোট কেন্দ্রে যাওয়া আর একটা ভোট দেয়া ছাড়া। সেখানেই গণতন্ত্রের শুরু ও শেষ। একটি অর্থবহ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংসদীয় ব্যবস্থায় আমরা খুব বেশি অগ্রসর হতে পারিনি। এখানে এখনও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের সংবিধানে যেভাবে করে শাসন ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে, সেটাকে সংস্কার করতে হবে। সংস্কার করে এমন একটি ব্যবস্থায় আনতে হবে, যেখানে ব্যক্তি প্রাধান্য পাবে না। দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশের সংবিধানে ক্ষমতার বলয়টা হচ্ছে ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে। ক্ষমতার কোনো ভারসাম্য নেই। এখানে ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে হবে, ব্যক্তিকেন্দ্রিক ক্ষমতার বলয়কে ভেঙ্গে দিতে হবে।
বিবার্তা২৪.নেট : বিবার্তাকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
জেবেল রহমান গাণি : আপনাকে ও বিবার্তার পাঠকদেরও ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
বিবার্তা/আরকেএন/আরএন.