শামসুজ্জামান দুদু বর্তমানে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান। গত কমিটিতে ছিলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য দুদু ১৯৮৫ ও ৮৬ সালে ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ৮৮সালে দুদু-রিপন পরিষদে ব্যানারে ডাকসুর ভিপি পদে নির্বাচন করেন তিনি। সবচেয়ে কম বয়সে বিএনপির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হন। তিনি মাত্র ২৩ বছর বয়সে ৮৭ সালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক হন। জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক হন ১৯৯২ সালে। দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে তিনি এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক। শামসুজ্জামান দুদু দু’বার নির্বাচিত সংসদ সদস্যও ছিলেন। তিনি রাজনীতির পাশাপাশি একজন সাংবাদিক ও ক্রীড়া সংগঠক। দীর্ঘদিন ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি দৈনিক বাংলা পত্রিকায় সাংবাদিকতাও করেছেন। এছাড়া ঐতিহ্যবাহী সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রাচ্যবার্তারও সম্পাদক ছিলেন তিনি।
শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিবার্তার সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন, সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন বিবার্তার প্রতিবেদক জাহিদ বিপ্লব।
বিবার্তা: বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আপনার মূল্যায়ন?
দুদু: বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক চর্চার আজ খুবই অভাব। স্বাভাবিকভাবে রাজনীতির চর্চা করা যায় না। সাংগঠনিক কার্যক্রমও এক ধরনের অদ্ভুত প্রতিবন্ধকতার ভিতর দিয়ে করতে হয়। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই, আইনের শাসন নেই, মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই। এক কথায় মৌলিক অধিকারের অনুপস্থিতির কারণে জনসাধারণের ভিতরে এক ধরনের নাভিশ্বাস উঠেছে।
বিবার্তা: দেখতে দেখতে অনেক বছর পেরিয়ে এলো বিএনপি। আপনি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এই দলে। ছাত্র রাজনীতি দিয়ে শুরু, এখন মূল দলে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই দিনে বিএনপি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি?
দুদু: বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে। অর্থনৈতিক মুক্তি এবং স্বাধীনতাকে সুসংগঠিত করার লক্ষে এই বিএনপির জন্ম। বিএনপিকে বুঝতে হলে ফিরে যেতে হবে ১৯৭২-৭৫ এর শাসনামলে। স্বাধীনতার পরে সীমাহীন দুর্নীতি, প্রশাসনের অব্যবস্থাপনা এবং বিরোধীদল দমনের ভয়ংকর অবস্থার প্রেক্ষাপটে এই বিএনপি সৃষ্টি হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের সাচ্চা রাজনৈতিক দল বিএনপি। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ যদি কোনো রাজনৈতিক দল ধারণ করে তো সেই হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল।
বিবার্তা: প্রেসিডেন্ট জিয়ার সাথেও আপনার কাজ করেছেন। বর্তমানে খালেদা জিয়ার সাথেও কাজ করছেন। তাদের মিল-অমিলগুলো বলবেন?
দুদু: শহীদ জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক। দুর্নীতিবিরোধী একটি অনুকরণীয় চরিত্র। জিয়া স্বাধীনতা ঘোষণার পাশাপাশি স্বশরীরে যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন ঠিক তেমনিভাবে রাষ্ট্রপতি হিসেবেও সুনামের সাথে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। তার মৃত্যুর পরে দেশ-বিদেশে তিনি যে কত মহৎ ব্যক্তি ছিলেন, তা রাজনৈতিক ব্যক্তি এবং গুণীজনরা ব্যাখ্যা করেছেন, যা জাতির জন্য গৌরবময়।
শহীদ জিয়া যেখানে শেষ করেছেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া সেখান থেকেই শুরু করেছেন। তিনি আপসহীন নেত্রী হিসেবে স্বৈরাচারকে পরাজিত করেছেন। গণতান্ত্রিক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। দেশের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু গণতন্ত্রের সেই অধিকার দেশবাসী বেশিদিন ভোগ করতে পারেনি। বর্তমানে দেশ ফ্যাসিবাদের কবলে।
এখন লুট হওয়া গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের নেত্রী লড়াই করে চলছেন। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ায় জীবনের পুরো অংশই মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় উৎসর্গকৃত।
বিবার্তা: এক সময়ের প্রতাপশালী দল বিএনপি এখন মৃতপ্রায়- এ রকম কথা অনেকে বলেন। কথাটা সত্যি?
দুদু: বিএনপি বাংলাদেশের সবচেয়ে জনগ্রহণযোগ্য বৃহৎ রাজনৈতিক দল। সে দলকে যথাযথভাবে বিশ্লেষণ করার জন্য তথ্যমথ্য নিয়ে কথা বলা দরকার। সমালোচকরা অনেক সময় সমালোচনার খাতিরে সমালোচনা করেন। সমালোচনা করার আগে ঘটনার গভীরে যেতে চায় না। বিএনপি প্রতিষ্ঠিতই হয়েছে মানুষের অধিকার রক্ষা এবং প্রতিষ্ঠিত করার করার জন্য। যেখানে মানুষের অধিকার আজ ভুলুন্ঠিত, দেশ ফ্যাসিবাদ কবলিত, সেখানে রাজনৈতিক দলের ছোট বড় হওয়ার বিষয়টি আপেক্ষিক। বিএনপি এখনও মানুষের অধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষে কাজ করছে। বিএনপি যে প্রয়োজনে আত্মপ্রকাশ করেছিল, তা মানুষ গ্রহণ করেছে এবং সে কারণটি এখনও বিদ্যমান। ফিনিক্স পাখির মত বিএনপি আবার জেগে উঠবে।
বিবার্তা: বিএনপি কি আগামী সংসদ নির্বাচনে যাবে? কেন যাবে বা কেন যাবে না, তা ব্যাখ্যা করবেন কী?
দুদু: আমরা নির্বাচনমুখী দল। সরকার পরিবর্তনের জন্য নির্বাচন বড় হাতিয়ার। আমরা নির্বাচনের মধ্য দিয়েই ক্ষমতায় যেতে চাই। তবে সে নির্বাচনে সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার থাকতে হবে। সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। বিএনপি যত আন্দোলন ও সংগ্রাম করেছে তা হলো মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য।
বিবার্তা: বিএনপি সংসদেও নেই, রাজপথে নেই। তাহলে বিএনপি আছে কোথায় ? বিএনপির ভবিষৎ গন্তব্য কোথায় ?
দুদু: বিএনপি মানুষের হৃদয়ে আছে, গণতন্ত্রে আছে। বিএনপি স্বৈরতন্ত্রের ভিত নড়বড়ে করে দিয়েছে। সেজন্য বিএনপির নাম শুনলে বর্তমান শাসকগোষ্ঠী দিক-বিদিক জ্ঞান হারা হয়ে আবোলতাবোল বকতে থাকেন। বিএনপি সংসদ এবং রাজপথ এই দুইটি জায়গায়ই থাকতে চায়। অপেক্ষা করুন, দেখতে পারবেন।
বিবার্তা: আপনারা বিশাল একটি কেন্দ্রীয় কমিটি করেছেন। বড় কমিটিই কি বড় দলের গ্যারান্টি দেয়?
দুদু: দেশের মানুষ বাড়ছে। জনসংখ্যা এখন প্রায় ১৭ কোটি। যখন সাড়ে সাত কোটি মানুষ ছিল তখনও সংসদ ছিল তিনশ জনের। শুধু কমিটিই নয়, আগামীতে পার্লামেন্টকে ৫০০ আসনে রূপান্তরিত করার পরিকল্পনা আমাদের আছে। এটা আমাদের নেত্রী অনেক আগেই জাতিকে জানিয়েছেন। সেই বিবেচনায় কমিটি খুব একটা বড় হয়নি।
বিবার্তা/বিপ্লব/জিয়া/হুমায়ুন