জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজর (অব.) খালেদ আখতার বলেছেন, বর্তমানে দেশে বৈষম্যের রাজনীতি বিদ্যমান। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয়। তিনি বলেন, আমরা সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট হলে সরকারের ভাগ-বাটোয়ারা পেতাম। কই, আমরা তো কিছু পাচ্ছি না! বরং আমাদের সাথে বিমাতাসূলভ আচরণ করা হচ্ছে।
বুধবার জাপা চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে বিবার্তার সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন। সাক্ষাতকারটি গ্রহণ করেছেন বিবার্তার নিজস্ব প্রতিবেদক জাহিদ বিপ্লব।
বিবার্তা : দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন
মেজর (অব.) খালেদ : পরিস্থিতি আমার কাছে অত্যন্ত ঘোলাটে মনে হচ্ছে। রাজনীতিটা কেমন যেন একপেশে হয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো রাজনীতির চর্চা করতে পারছে না। অজানা এক আতংক ও বাধাই এর কারণ। দেশে যদি সুস্থ রাজনৈতিক চর্চা না থাকে সেখানে সমাজে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। যার কারণে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। সর্বক্ষেত্রে জবাবদিহিতা না থাকলে রাষ্ট্রের মাঝে বৈষম্য সৃষ্টি হয়। আমার মনে হয়, বর্তমানে দেশে বৈষম্যের রাজনীতি বিদ্যমান।
বিবার্তা : দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন বলে আপনার ধারণা?
মেজর (অব.) খালেদ : দেশের আইন-শৃঙ্খলা সন্তোষজনক নয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি সন্তোষজনক রাখার ইচ্ছা থাকা সত্বেও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে তারা নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারছে না।
বিবার্তা : আপনারা কি মধ্যবর্তী নির্বাচন দাবি করেন ?
মেজর (অব.) খালেদ : প্রশ্নই আসে না। মধ্যবর্তী নির্বাচন হওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় নাই। আমরা চাই সঠিক সময়ে নির্বাচন হোক। এর মধ্যে আমরা দলকে আরো সংগঠিত করতে চাই।
বিবার্তা : দেশের বিদ্যমান গণতন্ত্র সম্পর্কে কিছু বলুন।
মেজর (অব.) খালেদ : গণতন্ত্র! সরকারের লোকেরাই বলে, আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র। এতই বুঝা যায় বর্তমানে দেশে কতটা গণতন্ত্র বিদ্যমান। জনগণ এর মূল্যায়ন করবে।
বিবার্তা : জাতীয় পার্টিকে অনেকে সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট বিরোধীদল মনে করে। এবিষয়ে আপনার বক্তব্য কি ?
মেজর (অব.) খালেদ : কথাটি ঠিক নয়। আমরা সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট হলে সরকারের ভাগ-বাটোয়ারা পেতাম। কই, আমরা তো কিছু পাচ্ছি না! বরং আমাদের সাথে বিমাতাসূলভ আচরণ করা হচ্ছে। আমরা যদি সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট হতাম তাহলে তো আমরা স্থানীয় নির্বাচনেও ভাগ পেতাম। গত কয়েকটি স্থানীয় নির্বাচনে আমাদেরকে তো কোন ছাড় দেয় নাই। উপরন্তু আমাদের বিজয়ী প্রার্থীদের জোর করে হারানো হয়েছে। আগে নির্বাচিত মেয়র ও চেয়ারম্যান ছিলেন তাদেরকেও জয়ী হতে দেয়নি। তাহলে বলুন, আমরা কেমন আশীর্বাদপুষ্ট! আওয়ামী লীগ সভানেত্রীসহ হাজার হাজার দলীয় নেতা-কর্মীর মামলা প্রত্যাহার করলেও আমাদের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের একটি মামলাও প্রত্যাহার করা হলো না।
বিবার্তা : জাতীয় পার্টির বর্তমান সাংগঠনিক অবস্থা কেমন?
মেজর (অব.) খালেদ : বর্তমানে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা অন্য দুই দলের চেয়ে ভাল। আমাদের পার্টিতে শৃঙ্খলা বিদ্যমান। আমাদের নিজেদের মাঝে কোনো বিরোধ নেই। ১৬ মে দলের অষ্টম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবার পর কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এই কমিটি নিয়ে আমাদের মাঝে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া নেই। অনেক দলে দেখা যায় আশানুরূপ পদ না পেয়ে পদত্যাগ করছেন, সেখানে আমাদের দলের সকলেই সন্তুষ্ট। আর এটাই নেতাকর্মীদের নেতা এরশাদের প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস। এছাড়া জাতীয় পার্টিই একমাত্র দল যে, এত ষড়যন্ত্র ও অত্যাচারের পরও বাংলাদেশের এমন কোন জেলা বা উপজেলা নাই যেখানে আমাদের কমিটি নাই। হয়ত অনেক কমিটি মেয়াদউত্তীর্ণ হয়ে গেছে। আমরা আমাদের নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞ। কারণ দীর্ঘ ২৬টি বছর ক্ষমতার বাইরে থেকে এবং নিপীড়ন সহ্য করেও তারা দলের নেতা এরশাদকে আবার ক্ষমতায় আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলি, অবিচার ও অত্যাচারের যে ষ্টীমরোলার আমাদের প্রতি চালানো হয়েছিলো তা যদি অন্য কোনো দলের ওপর হতো তাহলে সেই দল এত বছর রাজনীতির ময়দানে টিকেই থাকতে পারতো না।
বিবার্তা : আপনারা হঠাৎ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন কেন ?
মেজর (অব.) খালেদ : নির্বাচন এখনও দুই বছর বাকি। এটা একটা দলের জন্য যথেষ্ট সময় নয়। তাছাড়া বাংলাদেশের অতীত ইতিহাস বলে, নির্বাচনের আগে দেশের রাজনীতির ময়দান উত্তপ্ত থাকে। সে সময়ে মাঠ গোছানো কঠিন হয়ে পড়ে। তাই আমরা এখন থেকেই প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থী ঠিক করে মাঠ গোছাতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছি। দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১ অক্টোবর সিলেট থেকে এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করবেন।
বিবার্তা : বিএনপি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন ?
মেজর (অব.) খালেদ : বিএনপি সম্পর্কে মূল্যায়ন করা আমার ঠিক হবে না। এর মূল্যায়নও জনগণ করবে।
বিবার্তা : আগামীতে বিএনপির সাথে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে কিনা?
মেজর (অব.) খালেদ : অসম্ভব! এর কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। তাছাড়া জাতীয় পার্টি আগামীতে আর কারো সাথেই জোট করবে না। কারণ এর তিক্ত অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। কেউ আমাদের বন্ধু নয়। জাতীয় পার্টি যাতে শক্তিশালী দল হিসেবে দাড়াঁতে না পারেন এ বিষয়ে বিএনপি-আওয়ামী লীগ এক।
বিবার্তা/বিপ্লব/হুমায়ুন/মৌসুমী