শিল্পী আনিসুজ্জামান, বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের ছাপচিত্র বিভাগের চেয়ারম্যান। জন্ম ১৯৭২ সালের ৩০ জুন, পাবনার বেড়া উপজেলায়। মাধ্যমিক শেষ করেছেন ১৯৮৮ সালে বেড়া উপজেলার বি বি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে থেকে।
১৩তম এশিয়ান বিয়েন্নালে গ্র্যান্ড প্রাইজ পান উডকাট মাধ্যমে, ২০০৮ এ পেয়েছেন ন্যাশনাল মেনশন অ্যাওয়ার্ড, ২০০৯ এ ভারতভবন ইন্টারন্যাশনাল প্রিন্ট বিয়েন্নালে মেনশন অ্যাওয়ার্ড পান পরপর দু’বার, জাপানে ২০১১ সালে ইন্টারন্যাশনাল প্রিন্ট প্রাইজ পেয়েছিলেন, ওই বছরই আবার পান ভারতভবন অনারেবল মেনশন অ্যাওয়ার্ড, ২০১২তে পান ট্রিয়েনাল প্রাইজ, ব্যাংকক ইন্টারন্যাশনাল প্রিন্ট ট্রিয়েনাল এন্ড ড্রইয়িং থেকে । এছাড়াও আরো অসংখ্য অ্যাওয়ার্ড দিয়ে ভরা তার ঝুলি।
ছোটবেলা থেকেই মাটির পুতুল, মাছ, ঘোড়া বানাতে ভালো লাগতো তাঁর। ছোটবেলা থেকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আঁকাআকি শেখেননি। আঁকিবুঁকির প্রতি একটা হাল্কা ভালো লাগা থেকেই তার শিল্পীসত্ত্বার বেড়ে ওঠা। মাধ্যমিক দিয়েছিলেন বিজ্ঞান বিভাগ থেকে। নিজের প্র্যাকটিক্যাল খাতায় আঁকতেন এতই সুন্দর করে যে, শিক্ষকরাও অবাক হতেন। মাধ্যমিক শেষ হওয়ার পর শিক্ষকদের অনেকেই বলেন চারুকলায় ভর্তি হতে, আর নিজের ইচ্ছা তো ছিলই। এলাকার বড় ভাই আব্দুল আহেদ চারুকলার সিরামিক ডিপার্টমেন্টে পড়তেন। তিনিই আনিসুজ্জামানকে চারুকলায় ভর্তিতে সহযোগিতা করেন। ১৯৮৮ সালে ভর্তি হন চারুকলায় প্রি-ডিগ্রিতে। সেখানে প্রথম হন তিনি। এরপর গ্র্যাজুয়েশন করেন ছাপচিত্র বিভাগ থেকে। বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সফীউদ্দীন আহমেদ খুব প্রশংসা করতেন আনিসুজ্জামানের কাজের, যা অনেকখানি ইন্সপিরেশন ছিল তার শিল্পী হয়ে ওঠার পেছনে। এরপরের কাহিনীও শোনালেন বিবার্তাকে।সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রুবাইয়াত আফরীন।
বিবার্তা: ব্যক্তি আনিসুজ্জামান কিভাবে শিল্পী আনিসুজ্জামান হয়ে উঠলো ?
আনিসুজ্জামান: আমি চারুকলায় প্রি ডিগ্রীতে ভর্তি হই ১৯৮৮ সালে। আঁকাআকি শুরুটা মূলত তখন থেকেই। বিএফ এ শেষ করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাপচিত্র বিভাগ থেকে। এরপর স্কলারশিপ নিয়ে ইন্ডিয়ায় চলে যাই, লিথোগ্রাফ নিয়ে কাজ করি রবীন্দ্রভারতী ইউনিভার্সিটিতে। সেখানে মাস্টার্স শেষ করে চলে আসি ঢাকায়। ২০০১ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাপচিত্র বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করি। এর মধ্যেই আমি ইংল্যান্ড কমনওয়েলথ আর্ট অ্যান্ড ক্র্যাফট ফাউন্ডেশনে যাই, ওখানে রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম করি। সেখানে উডকাটের ওপরেই কাজ করি। ২০০৪ সালে আবারো স্কলারশিপ নিয়ে যাই জাপানে। ২০০৮ সালে ফিরে এসে আবারও জয়েন করি অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে, ২ বছর আগে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হই এবং বর্তমানে প্রিন্টমেকিং ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।
বিবার্তা: টাইম ট্র্যাভেল করে যদি ২০ বছর বয়সী ইয়াং আনিসুজ্জামানের সাথে দেখা হয়, তাকে আপনি কি করার পরামর্শ দেবেন যা আপনি করেননি অথচ করা উচিত ছিল।
আনিসুজ্জামান: ইয়াং আনিসকে আমার পরামর্শ হবে, সময়ের কাজ সময়ে করো আর থিওরিটা আরেকটু বেশি করে পড়ো। কারণ আমি খুব ধীর গতির মানুষ ছিলাম, সময়ের কাজ সময়ে করতাম না, তবে যে কাজই করতাম অনেক মনোযোগ দিয়ে করতাম। আর একজন শিল্পীর আঁকাআকির পাশাপাশি পড়াশুনাটাও অনেক বেশি করা উচিত, যা আমি ওই সময় খুব বেশি করিনি।
বিজ্ঞান একই পথে হাঁটুক। আমাদের স্টুডেন্টরা নতুন নতুন মিডিয়ায় যাতে কাজ করতে পারে সেই চেষ্টা করছি। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলাকে সাধুবাদ জানাই সবসময়। প্রিন্টমেকিং ডিপার্টমেন্টকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ডিপার্টমেন্ট হিসেবে দাঁড় করাতে চাই।
বিবার্তা: তরুণ শিল্পীদের প্রতি, শিক্ষানবীশদের প্রতি আপানার পরামর্শ কি?
আনিসুজ্জামান: প্রচুর প্রচুর ড্রয়িং, স্কেচ তো অবশ্যই করতে হবে। পাশাপাশি শিল্পকলার ইতিহাস বা শিল্পকেন্দ্রিক পড়াশুনাও করা উচিত। কারণ একজন শিল্পীকে জ্ঞানের দিক থেকে অনেক বেশি সমৃদ্ধ হতে হয়।
বিবার্তা: কোন শিল্পীর কাজের সাথে নিজের কাজের অনেক মিল খুঁজে পান?
আনিসুজ্জামান: জাপানে পড়াশুনা করার সময় আমি যে প্রফেসরের আন্ডারে ছিলাম তার প্রফেসর ছিলেন ফুমিয়াকি ফুকিতা। ফুকিতার কাজের টোনের সাথে আমি আমার কাজের টোনের মিল খুঁজে পাই। ফুকিতা জাপানের প্রমিনেন্ট উডকাট শিল্পী এবং তামা আর্ট ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ছিলেন। মূলত তাঁর কাজের টোনাল প্যাটার্ন কিছুটা ফলো করি, কিছুটা একেবারেই নিজের মতো করে।
বিবার্তা: আপনার বর্তমান ব্যস্ততা কী নিয়ে ?
আনিসুজ্জামান: যেহেতু এখন আমি প্রিন্টমেকিং ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান হিসেবে আছি সেক্ষেত্রে আমার প্রথম প্রায়োরিটি আমার ছাত্রছাত্রী, আমার ডিপার্টমেন্ট। সেকেন্ড প্রায়োরিটি সেলফ ডেভলপমেন্ট। যদিও ব্যস্ততার কারণে ছবি আঁকা একটু কমে গেছে তারপরও এরমধ্যে কিছু গ্রুপ শোতে অ্যাটেন্ড করেছি। আসলে ছবি আঁকাটা তো নেশার মতো, এটা চলবেই।
বিবার্তা/রুবা/মৌসুমী/হুমায়ুন