এক সময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা তামান্না বর্তমানে সুইডেনে বসবাস করছেন। গতবছর তার অভিনীত সর্বশেষ ছবি, মঈন বিশ্বাস পরিচালিত ‘পাগল তোর জন্যরে’মুক্তি পায়। কিন্তু ওই সময় তিনি দেশে আসতে পারেননি।
দেশের মাটির মায়া ছেড়ে জীবনের তাগিদেই তামান্না সুইডেনে আছেন। মুঠোফোনে বৃহস্পতিবার সকালে কথা হয় বিবার্তার সঙ্গে। সেসব কথার চুম্বক অংশ লিখেছেন অভি মঈনুদ্দীন।
বিবার্তা : আপনার প্রথম সিনেমা ছিলো শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত ‘ভণ্ড’। প্রথম সিনেমাতেই দর্শকের মনে ঠাঁই করে নিয়েছিলেন। সেই ছবির পরিচালক অর্থাৎ আপনার আবিষ্কারক, চলে গেলেন কিছুদিন আগে। তার কথা মনে পড়ে?
তামান্না : অবশ্যই। খোকন ভাই সুযোগ করে না দিলে নায়িকা হিসেবে আমার পথচলাটা মসৃণ হতো না। খোকন ভাই ছিলেন আমার অভিভাবকের মতো। তিনি ছিলেন বলেই নির্দ্বিধায় কাজ করতে পেরেছি। পেয়েছি ভাবীরও সহযোগিতা। এমন মানুষ সত্যিই আর পাবো না। দোয়া করি, আল্লাহ যেন খোকন ভাইকে বেহেস্ত নসীব করেন।
বিবার্তা : দেশ ছেড়ে আপনি আছেন অনেক দূরের দেশ সুইডেনে। কেমন আছেন ওখানে?
তামান্না : সুইডেনে সবমিলিয়ে ভালো আছি। আমি সবসময়ই চেষ্টা করি ভালো থাকার। যেভাবেই থাকি তাতেই সন্তুষ্ট আমি। জীবনে আমার খুব বেশি চাওয়া-পাওয়া নেই। তাই আমার যা আছে তাতেই সন্তুষ্ট আমি। এখনো যখন ঢাকায় যাই দর্শকের ভালোবাসায় আজো যেমন মুগ্ধ, ঠিক তেমনি দর্শকের ভালোবাসা নিয়েই আগামী দিনেও এগিয়ে যেতে চাই। জানি না ভবিষ্যতে আর সিনেমাতে অভিনয় করবো কী না। কিন্তু এখনো মন টানে। মন চায়, ছুটে যাই দেশে, দাঁড়িয়ে যাই ক্যামেরার সামনে। কিন্তু বাস্তব, সে যে বড় কঠিন!
বিবার্তা : আপনার সর্বশেষ ছবি ‘পাগল তোর জন্য’র রেসপন্স কেমন?
তামান্না : সুইডেনে বসে রেসপন্সের কথা জেনেছি। ‘পাগল তোর জন্যরে’গানটির কারণে নাকি সিনেমাটি দর্শক বেশি দেখেছে। আমার যারা পরিচিত তারা আমাকে জানিয়েছে সিনেমাটি মোটামুটি ভালো চলেছে। তবে আমি এখনো দেখিনি। ডাবিংয়ের সময় যতোটুকু দেখেছি তাতে ভালো লেগেছে। নতুন হিসেবে ইরফান ভালো করেছে।
বিবার্তা : এরপর কেউ কি যোগাযোগ করেছিলো আপনার সঙ্গে?
তামান্না : না, কেউই যোগাযোগ করেনি। কারণ, আমার সঙ্গে যোগাযোগ করার মাধ্যমটাই হয়তো তাদের জানা নেই। বিবার্তার সাথে সবসময়ই আমার নিবিড় সম্পর্ক। যে কারণে বিবার্তার পক্ষ থেকে সবসময়ই আমার খোঁজখবর রাখা হয়। আমি এই পরিবারের কাছে সবসময়ই ঋণী। কারণ, আমি এই পরিবারটি সবসময় আমার পাশে থাকে।
বিবার্তা : দেশে স্থায়ী হবার কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
তামান্না : আপাতত নেই। তবে ভবিষ্যতের কথা বলা যায় না। আসলে মানুষ কি তার পরিকল্পনামতো সব করতে পারে? পারে না। যদি তা-ই হতো তাহলে তো আমি দেশেই থাকতাম। কিন্তু সেটা আর হলো না।
বিবার্তা : ব্যক্তিগত কোনো প্রশ্ন করতে পারি?
তামান্না : না। ব্যক্তিগত কোনো প্রশ্নে যেতে চাই না। আমার প্রফেশন নিয়ে প্রশ্ন করলেই ভালো হয়।
বিবার্তা : আপনি তো পেশায় একজন ডেন্টিস্ট। এদেশে একটি চেম্বার করার কথা ছিলো আপনার, সেটার খবর কী?
তামান্না : নাহ্! আপাতত সেই পরিকল্পনা একেবারেই নেই। কারণ, আমি এখন পুরোপুরি সুইডেনেই বসবাস করছি। তাই দেশে কিছু করার কোনোরকম পরিকল্পনাই নেই। যেভাবে আছি আপাতত সেভাবেই থাকি। যদি কখনো মনে হয় তখন তো দেশে কিছু করতেই পারবো। বাকীটা আল্লাহর ইচ্ছে।
বিবার্তা : বাংলাদেশের বর্তমান চলচ্চিত্র সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?
তামান্না : শুনেছি এখন ভালো ভালো ছবি হচ্ছে। তবে এটাও শুনি যে চলচ্চিত্রের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো নয়। খুব মায়া হয় আমাদের চলচ্চিত্রের জন্য। কারণ, একসময় যে কলকাতা আমাদের দেশের পরিচালকদের দিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতো সেই কলকাতা এখন কতো উন্নত হয়েছে, অথচ আমরা তাদের চেয়ে অনেক পেছনে পড়ে আছি। এটা সত্যিই দুঃখ দেয় আমায়। আমাদের এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়া উচিত।
বিবার্তা : সহকর্মীদের মিস করেন না?
তামান্না : অবশ্যই করি। সুইডেনে আসার আগে নিয়মিত সিনেমাতে অভিনয় করেছি। যাদের সঙ্গে কাজ করেছি প্রত্যেককেই খুব মিস করি। দেশে গেলেও দেখা যায়, ব্যস্ততার কারণে তাদের অনেকের সঙ্গেই আমার দেখা হয় না। খুব মনে পড়ে সাংবাদিক দুলাল খান ভাইয়ের কথা। কারণ তার সহযাগিতাতেই চলচ্চিত্রে আমার আসা। এমন আরো কয়েকজন পরিচালকও আছেন, যাদের খুব মিস করি। মিস করি বিএফডিসির প্রতিটি ধূলিকণাকে। কারণ, একসময় নিঃশ্বাস নিয়েছি, জীবনের প্রতি বিশ্বাসই তৈরী হয়েছে সেখান থেকে। সত্যি বলতে কী, পুরোনো দিনের কথা ভাবলে চোখে পানি এসে যায়। তাই পুরনো সেই দিনের কথা খুব-একটা ভাবতেও চাই না। ভাবি, জীবন যেভাবে যাচ্ছে, যাক না!
বিবার্তা : আপনার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সিনেমার কথা বলুন।
তামান্না : ‘হৃদয়ে লেখা নাম’, ‘সন্ত্রাসী বন্ধু’, ‘কঠিন শাস্তি’, ‘তুমি আমার ভালোবাসা’, ‘মুখোশধারী’, ‘আমার প্রতিজ্ঞা’ইত্যাদি প্রতিটি সিনেমাতেই আমি চেষ্টা করেছি আমার আমিকে ভালোভাবে উপস্থাপন করতে। আমি দর্শকের ভালোবাসার মাঝেই বেঁচে থাকতে চাই।
বিবার্তা : আবার কবে দেশে আসবেন?
তামান্না : জানি না এখনো। খুব ব্যস্ত সময় কাটছে এখানে। যদি ছুটি পাই, চেষ্টা করবো দেশে আসার। দেশে আসতে কার না ভালো লাগে! আমার দেশের মাটির গন্ধ আমার গায়ে লেগে আছে। এই মাটির মাঝেই যেন শান্তি খুঁজে পাই। দেশের সবাই ভালো থাকবেন। আমার জন্য দোয়া করবেন। বিবার্তা পরিবারের জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা।
বিবার্তা/অভি/মৌসুমী/হুমায়ুন