আহমেদ রশিদ লালী। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট । দীর্ঘদিন থেকে পুঁজিবাজারের সঙ্গে জড়িত এই বাজারবিশ্লেষকের সঙ্গে সম্প্রতি কথা হয় বিবার্তার নিজস্ব প্রতিবেদকের। আলাপচারিতায় উঠে আসে পুঁজিবাজারের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের নানা বিষয়। সেই আলাপের কিছু অংশ তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।
বিবার্তা : ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটকে উচ্চাভিলাসী বাজেট বলে অ্যাখায়িত করেছেন বিভিন্ন মহল। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন ?
লালী : বাজেট গতানুগতিক হয়েছে - এটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত। তবে যারা এই বাজেটকে উচ্চাভিলাসী বলে অ্যাখায়িত করেছেন তাদের সঙ্গে আমি একমত নই। এবারের বাজেটের আকার ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। মনে হয় না এটা খুব বেশি। কারণ, আমাদের দেশের জিডিপির যে আকার সেই হিসাবে বাজেট আরো বড় হতে পারত। স্বপ্ন বড় থাকা ভালো।
বিবার্তা : করমুক্ত লভ্যাংশের পরিমাণ বাড়ানোসহ ডিএসইর পক্ষ থেকে বাজারবান্ধব আরো কিছু প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছিলো। বাজেটে যার কোনো প্রতিফলন হয়নি। এ বিষয়ে আপনার কিছু বলার আছে ?
লালী : হ্যাঁ, ডিএসই থেকে করমুক্ত লভ্যাংশের পরিমাণ ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে এক লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিলো। আর একটি প্রস্তাব ছিলো, স্টক এক্সচেঞ্জেকে পাঁচ বছরের জন্য কর অব্যাহতি প্রদান। বাজেটে যার কোনোটিরই প্রতিফলন নেই।
বিবার্তা : বর্তমানে পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা নাজুক। সে কারণে বিনিয়োগকারীরা দোলাচলে রয়েছেন। এই অবস্থায় তাদের কী করা উচিত বলে মনে করেন ?
লালী : বিষয়টিকে আমি সেভাবে দেখছি না। বাজার কিছুটা মন্দা পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে এ কথা সত্যি। আর একারণেই বিনিয়োগকারীরা তাদের পুঁজির নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তায় আছেন। এটা খুবই স্বাভাবিক। বাজারে তালিকাভূক্ত অনেক ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারের দর এখন হাতের নাগলে রয়েছে। বিনিয়োগকারীরা চাইলে দেখেশুনে এসব কম্পানিতে বিনিয়োগ করতে পারেন। এতে লোকসানের ঝুঁকি কম।
বিবার্তা : পুঁজিবাজার আবারো ২০১০এর দিকে যাচ্ছে - যারা এমনটি ভাবছেন তাদের সঙ্গে কী আপনি একমত ?
লালী : যারা এমনটি ভাবছেন তাদের সঙ্গে আমি কোনোভাবেই একমত নই। পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা ২০১০ সালের মতো হবে এমন কোনো লক্ষণ নেই। ফলে যারা এমনটি ভাবছেন তারা আসলে ভুল ভাবছেন। সেই বাজারের সঙ্গে এখনকার বাজারের কোনো মিল নেই। তাই বিনিয়োগকারীদের চিন্তার কিছু আছে বলে মনে হয় না। কিছু না বুঝে দুশ্চিন্তা করার মানে নেই।
বিবার্তা : এখন তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কম্পানির শেয়ারের দর খুবই কম। সংশ্লিষ্টদের মতে এখনই বিনিয়োগের সঠিক সময়। আসলে কি তাই ?
লালী : পুঁজিবাজারে কখন বিনিয়োগ করার সঠিক সময় তা বলা মুশকিল। কারণ এমন কোন সূত্র নেই যে সেই সূত্র ধরে বলা যায় এখন বিনিয়োগের সময়। আমি মনে করি, যে কোনো সময় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা যায়। তবে কোন কম্পানিতে বিনিয়োগ করতে হবে তা নির্ভর করবে বিনিয়োগকারীর বুদ্ধি-বিবেচনার ওপর। তিনি যদি ভালো মানের কম্পানিতে বিনিয়োগ করেন তবে ভালো রেজাল্ট আসার সম্ভবনা থাকে। পক্ষান্তরে দূর্বল কম্পানিতে বিনিয়োগ করলে তার রেজাল্টও সেভাবে আসবে, এটাই স্বাভাবিক।
বিবার্তা : বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ে সব সময় একটি নেতিবাচক মন্তব্য রয়েছে। তা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক পুঁজিবাজারবান্ধব নয়। আসলে কি তাই?
লালী : আমি মনে করি শুধু বাংলাদেশ ব্যাংক নয় পুঁজিবাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানকে বাজারবান্ধব হতে হবে। সেটা না হলে পুঁজিবাজারের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব নয়।
বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন