এম এম আমিনুর রহমান বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, যিনি দলটির জন্ম প্রক্রিয়ার সাথেও জড়িত। কল্যাণ পার্টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন স্তরে দলের প্রদত্ত দায়িত্ব পালন করেছেন সফলতার সাথে। এরই এক পর্যায়ে ২০০৯ সালের ২৩ জুনের প্রথম জাতীয় কাউন্সিলে দলের যুগ্ম মহাসচিব নির্বাচিত হন তিনি। ২০১২ সালের ৪ঠা ডিসেম্বরের দ্বিতীয় কাউন্সিলে আবারো দলের যুগ্ম মহাসচিব নির্বাচিত হন। এরপর ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল তৎকালীন ১৮ দলীয় জোট গঠনের পর কল্যাণ পার্টির পক্ষ থেকে যুগ্ম মহাসচিবের পাশাপাশি দলের মুখপাত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও সফলতার সাথে পালন করেন আমিনুর রহমান। এরপর জাতীয় রাজনীতির ক্রান্তিকালে ২০১৪ সালের ২৪ মার্চ তার ওপর দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব অর্পিত হয়। অদ্যাবধি তিনি সে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।
রবিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে বিবার্তা২৪.নেট এর ডেপুটি চিফ রিপোর্টার রাজকুমার নন্দীকে দেয়া এক একান্ত সাক্ষাতকারে বিশ দলীয় জোটের বর্তমান অবস্থা, জোট শরিক জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি এবং বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসহ সম-সাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন জোটের অন্যতম নেতা এম এম আমিনুর রহমান।
বিবার্তা২৪.নেট : বিশ দলীয় জোটের অন্যতম দু’টি শরিক দল হচ্ছে এলডিপি ও জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর)।দল দু’টি বিএনপিতে বিলীন হচ্ছে বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা রয়েছে। জোটের একজন অন্যতম নেতা হিসেবে আপনি ব্যাপারটিকে কিভাবে দেখছেন?
এম এম আমিনুর রহমান : এলডিপি ও জাতীয় পার্টি (জাফর) বিশ দলীয় জোটভুক্ত দু’টি রাজনৈতিক দল। যেকোনো দলের যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার আছে। একটি রাজনৈতিক দল তার নিজস্ব গঠনতন্ত্র দ্বারা পরিচালিত হয়। সেক্ষেত্রে দলের প্রচার, প্রসার, কর্মসূচি এবং দল বিলুপ্তির মতো সিদ্ধান্ত সে দলের দলীয় সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই হয় বলে আমি মনে করি। রাজনৈতিক অঙ্গণে বিভিন্ন দল মাঝে মধ্যেই বিএনপিতে একীভূত হচ্ছে বলে শোনা যায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সংবাদের সত্যতাই দৃশ্যমান নয়।
বিবার্তা২৪.নেট : দল দু’টি যদি শেষ পর্যন্ত বিএনপিতে বিলীন কিংবা একীভূত হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে ২০ দলীয় জোটের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হবে কি-না?
এম এম আমিনুর রহমান : বিশ দলীয় জোট গঠিত হয়েছে বিএনপির নেতৃত্বে। জোটের কোনো দলকে বিএনপিতে একীভূত করার কোনো সিদ্ধান্ত জোটনেত্রী কিংবা বিএনপির পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত জোটকে অবহিত করা হয় নাই। তাই এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা সমীচীন হবে না।
বিবার্তা২৪.নেট : সাম্প্রতিককালে দুইজন বিদেশী নাগরিকের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে জঙ্গিবাদের বিষয়টি রাজনৈতিক অঙ্গণে আলোচিত হচ্ছে। আপনি কি মনে করেন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের কোনো অস্তিত্ব আছে?
এম এম আমিনুর রহমান : সাম্প্রতিক কালে দুইজন বিদেশী নাগরিকের হত্যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। তবে আমি এই হত্যাকাণ্ডকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেই মনে করি। পৃথিবীর বহু দেশে এ রকম ঘটনা অহরহই ঘটছে। তাই এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে প্রমাণ করা ঠিক হবে না। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই দুটি হত্যাকাণ্ডের তদন্তও শুরু করেছে। সরকারের উচিত হবে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া। আমি আমি করি, তদন্তের মধ্য দিয়েই এর প্রকৃত রহস্য উদঘাটিত হবে। তাই এই ঘটনাকে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার কোনো সুযোগ নেই। যদিও অতীতে অনেক ঘটনায় রাজনৈতিক রং দেয়ায় প্রকৃত সত্য জনগণের সামনে উন্মোচিত হয়নি।
বিবার্তা২৪.নেট : বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান একজন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এই দলটি ২০ দলীয় জোটের অন্তর্ভুক্ত।আবার সেই জোটে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী জামায়াতে ইসলামীও রয়েছে। তাহলে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীর সঙ্গে একই জোটে থেকে কল্যাণ পার্টির পক্ষে তার আদর্শ বাস্তবায়ন করা সম্ভব কি-না?
এম এম আমিনুর রহমান : ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন বাজি রেখে যারা রণাঙ্গণে যুদ্ধ করেছেন সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম তাদের অন্যতম। যুদ্ধে সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বীরপ্রতীক খেতাব পেয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ২০ দলীয় জোটভুক্ত দলগুলোর একটি। দলটি তার নিজস্ব গঠনতন্ত্র দ্বারা পরিচালিত হয়। তাছাড়া কল্যাণ পার্টিরও নিজস্ব চিন্তা-চেতনা, আদর্শ ও পরিকল্পনা রয়েছে, যা ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে দেশবাসীকে অবহিত করার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও ২০ দলীয় জোটের শরিক দল। তবে ২০ দলীয় জোট কোনো একটি শরিক দলের আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য গঠিত হয়নি। সংবিধানে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল এবং সকলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে জোট গঠিত হয়। তাই বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির আদর্শ বাস্তবায়নে জামায়াতে ইসলামী কোনো প্রতিবন্ধকতা নয়।
বিবার্তা২৪.নেট : একাত্তর সালে আমাদের মহান স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল জামায়াতে ইসলামী। সেজন্য দলটি অনুতপ্ত বলেও তাদের আচরণে মনে হয় না। সেক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীর বাংলাদেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার থাকে কি-না?
এম এম আমিনুর রহমান : জামায়াত ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষে ছিল। তবে একটি কথা আপনাকে মানতেই হবে, কেউ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়।তাদের সেই সময়ের শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত তারই একটি অংশ। স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর আজ তাদের নেতৃত্বে অনেক পরিবর্তন এসেছে। একাত্তরের তুলনায় বর্তমানে তাদের যেমন জনসমর্থন বেড়েছে, তেমনি সাংগঠনিকভাবেও তারা শক্তিশালী হয়েছে। বিশেষ করে স্বাধীনতা পরবর্তী যাদের জন্ম তারা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক। তাদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা বিরোধী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো অভিযোগ নেই।তাছাড়া স্বাধীন বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে তার মত প্রকাশ এবং স্বাধীনভাবে কাজ করার সাংবিধানিক অধিকারও রয়েছে। তাই বিশ, ত্রিশ কিংবা চল্লিশ বছরের কোনো নাগরিকের প্রাপ্ত অধিকার আপনি জোর করে হরণ করতে পারেন না।যদি হরণ করেন, তাহলে আপনি সংবিধান পরিপন্থী অবস্থান গ্রহণ করলেন।
বিবার্তা২৪.নেট : জনকল্যাণ করাই একটি রাজনৈতিক দলের মূল উদ্দেশ্য।‘পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি’ স্লোগান নিয়ে ২০০৭ সালের ৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি আত্মপ্রকাশ করে। জনকল্যাণে আপনার দলের ভূমিকা কী?
এম এম আমিনুর রহমান : রাজনীতি একটি মহৎ কর্মপ্রয়াস। দেশ ও দেশের মানুষের জন্য নিবেদিতভাবে কাজ করার লক্ষ্যে ‘পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি’ স্লোগানকে সামনে রেখে মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের ( বীরপ্রতীক) নেতৃত্বে ২০০৭ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি। আত্মপ্রকাশের পর থেকে অদ্যাবধি দলটি তার সাধ্যমতো মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করছে। রাজনীতিতে কালো টাকা, দুর্নীতি, পেশিশক্তির কারণে মানুষ আজ অসহায়। খুন-গুম-রাহাজানি এখন নিত্যদিনের সঙ্গী। স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরেও নানা কারণে মানুষের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়িত হয়নি। তার একটি প্রধান কারণ, রাজনৈতিক বিভাজন। বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি এই বিভাজনের রাজনীতির পরিবর্তন চায়। তাই দলটি দেশের স্বার্থে সৎ-যোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন বাস্তবায়ন এবং জাতীয় ঐক্য নির্মাণ চায়। সে লক্ষ্যে পার্টির চেয়ারম্যানসহ অন্য নেতারা টেলিভিশন টকশো এবং সংবাদপত্রে দলীয় ব্যানারে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
বিবার্তা২৪.নেট : ২০১৪ সালের ২৪ মার্চ আপনাকে কল্যাণ পার্টির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব করা হয়। এখন পর্যন্ত আপনি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। নিকট ভবিষ্যতে দলটির নেতা-কর্মীরা আপনাকে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব হিসেবে দেখতে পাবেন কি-না?
এম এম আমিনুর রহমান : দেখুন, যেকোনো রাজনৈতিক দলে মহাসচিব পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, মহাসচিবের মাধ্যমে দলের সকল প্রকার সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে কেউ নিজ থেকে চাইলেই দায়িত্বপ্রাপ্ত হতে পারেন না। কল্যাণ পার্টির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে আমি আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের চেষ্টা করে যাচ্ছি। পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব নিয়োগের বিষয়টি সম্পূর্ণই দলের ওপর নির্ভর করে। তাই এক্ষেত্রে দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
বিবার্তা২৪.নেট : বিবার্তাকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
এম এম আমিনুর রহমান : আপনাকে ও বিবার্তার পাঠকদেরও ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
বিবার্তা/আরকেএন/আরএন.