বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আলহাজ মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বলেছেন, যুদ্ধপরাধীদের বিচার আন্তর্জাতিক মানের হয়েছে। ভবিষ্যতেও এ ধরণের বিচার হবে।
তিনি বলেন, এটি যে শুধু মহাজোট সরকার বলছে তা নয়। বিশ্বের অনেক দেশ আমাদের এই বিচার পদ্ধতির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তাদের কাছে আমরা এখন রোল মডেল।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করার মাধ্যমে বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর তল্লাবাগ এলাকার নিজ বাসভবনে বিবার্তাকে একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মানুষ সন্তুষ্ট। আর তাই দেশের মানুষ বিএনপি- জামায়াতকে চায় না।
তিনি বলেন, উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করতে জামায়াত-বিএনপির নেতৃত্বে জ্বালাও-পোড়াও হরতাল অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর প্রতি জনগণের আস্থা ছিলো বলে কোনো ষড়ষন্ত্রই কাজে আসেনি। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগসহ সবক্ষেত্রে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, দারিদ্র সীমার নীচে থাকা মানুষ একধাপ উপরে উঠে এসেছে। মাথাপিছু আয় অনেক বেড়েছে। উত্তরাঞ্চলে সেই মঙ্গা এখন আর নেই। তারা উৎপাদনে নজির সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশে চাল আমদানি করতে হচ্ছে না।
ইসলামী ঐক্যজোট নেতা বলেন, বিশ্বের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অবস্থা খুবই ভাল। দেশ এখন স্থিতিশীল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাপী যে অর্জন বয়ে আনছেন তা আমাদের গৌরবের বিষয়। সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রী আইসিটি ও চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তা বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশের বিশাল অর্জন।
দেশের ছাত্র রাজনীতি কেমন হওয়া উচিত এমন প্রশ্নের জবাবে ঐক্যজোট নেতা বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়া উচিত। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্রদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলী গড়ে উঠতো। তাহলে মেধাবী ছাত্ররা নির্বাচিত হত এবং নির্বাচিত ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করতো। এতে ছাত্রদের সুবিধা-অসুবিধা বৃদ্ধি পেতো।
তিনি বলেন, ছাত্র রাজনীতি একটি ঐতিহাসিক বিষয়। বর্তমান সরকারের মন্ত্রিপরিষদের অনেক সদস্যই ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ও সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্রদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এখন যারা ছাত্র রাজনীতি করে তাদের বেশীরভাগই অছাত্র। কেউ বাবা, দাদা, নানা পর্যন্ত হয়েও ছাত্র রাজনীতি ধরে রাখে নিজেদের স্বার্থের জন্য। এখন আর ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না। ছাত্র সংগঠনগুলো রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তিক করে যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে তখন সেই সরকারের সমর্থিত ছাত্র সংগঠনগুলো চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পরে।
তিনি আরো বলেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত। একের পর এক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম এগিয়ে চলছে, প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে সর্বোচ্চ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন, ঠিক সেই সময় ষড়যন্ত্রকারীরা বিদেশি হত্যা করে দেশে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। তবে বিদেশি হত্যার রহস্য অনতিবিলম্বে তদন্তের মাধ্যমে বের করে দোষীদের কঠোর শাস্তি প্রদান করতে হবে। তা হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে খুনিরা সাহস পাবে না।
ঐক্যজোটের এই নেতা বলেন, অপরাধী যে দলেরই হোক তার বিচার হতে হবে। আপনারা লক্ষ্য করছেন শিশু সৌরভের পায়ে যে সংসদ সদস্য গুলি ছুড়েছেন, তিনি ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন। কোন অপরাধীকেই প্রধানমন্ত্রী ক্ষমা করেননি, আশাকরি আগামীতেও করবেন না।
এসময় তিনি আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর ঘটনার কথা তুলে ধরে বলেন, ইসলাম ও পবিত্র হজ সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করতে গিয়ে এ সরকারের মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী ছাড় পাননি। সেও গ্রেফতার হয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, মন্ত্রীত্ব ও সংসদ সদস্য পদও তাকে হারাতে হয়েছে। অপরাধীদের কোনো ছাড় দিবেন না প্রধানমন্ত্রী।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রসঙ্গে মিছবাহুর রহমান বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার এতদিন পরও কেউ যদি এখনও অপরাধী সনাক্ত হয়, তার বিচার হয়। তবে আমরা পারবো না কেন? আমরা জাতিকে যুদ্ধাপরাধী মুক্ত একটি দেশ উপহার দিতে চাই। আর সে লক্ষ্য নিয়েই মুক্তিযুদ্ধের ৪৫ বছর পরও বর্তমান মহাজোট সরকারের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম এগিয়ে চলছে।
ত্যাগীরা বঞ্চিত হচ্ছে, সুবিধাভোগী ও কালো টাকার মালিকরা মনোনয়ন পাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সব সময় কালো টাকার মালিকদের প্রভাব বেশি। তবে আওয়ামী লীগে ত্যাগী নেতারা যাতে মূল্যায়িত হয়। সে দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।
আওয়ামী লীগে বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের যোগদান প্রসঙ্গে জোটের এই নেতা বলেন, কেউ যদি নীতি আদর্শ ত্যাগ করে বিএনপি-জামায়াত থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেন তাতে দোষের কিছু নেই। তবে আওয়ামী লীগে ঢুকে বিএনপি- জামায়াত- যাতে কোনো ক্ষতি করতে না পারে সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ধর্মীয় শিক্ষা উন্নয়নে কি ধরনের ভূমিকা পালন করছে সরকার? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ধর্মীয় শিক্ষা উন্নয়নে বর্তমান মহাজোট সরকার খুবই আন্তরিক। এ বিষয়ে সরকার ইতোমধ্যে একটি মহাপরিকল্পনাও গ্রহণ করেছে।
শুধু তাই নয়, সরকার ইসলামীক ফাউন্ডেশনকে শক্তিশালী করে ইসলামী শিক্ষা বিস্তারে ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। সারাদেশের ৬৮ হাজার মসজিদের সম্মানিত ইমামগণ সরকারি সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন। সাড়ে ১৫’শ কোটি টাকার প্রকল্প মসজিদ ভিত্তিক গণশিক্ষা কার্যক্রম চলছে।
বর্তমানে এ প্রকল্প দেশের ৬৮ হাজার মসজিদে চালু আছে। ধর্ম প্রচারে ইসলামীক ফাউন্ডেশনের প্রকাশনা একটি অন্যতম প্রকাশনী। প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মসজিদ, সরকারি ব্যবস্থাপনায় নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন। ওই মসজিদে পুরুষ ও মহিলাদের আলাদা নামাজের ব্যবস্থা থাকবে। থাকবে একটি অত্যাধুনিক মিলনায়তন। ইসলামী পাঠাগার ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা। ইতোমধ্যে ১১৫টি উপজেলায় জমি পাওয়া গেছে। অচিরেই মসিজদের নির্মাণকাজ শুরু হবে। এছাড়াও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায় ৩ মাস ধরে ইমাম প্রশিক্ষণ সারা বছর চলতে থাকে। ওই প্রশিক্ষণে শুধু নামাজ নয়, প্রাথমিক চিকিৎসা, কৃষি ব্যবস্থাপনা, হাঁস-মুরগী খামার পরিচালনাসহ কর্মসংস্থান বিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। যাতে একজন ইমাম সমাজের সবক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করতে পারেন এবং নিজ এলাকায় বেকার যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারেন।
মহাজোট সরকার আলেমদের যথাযথ মর্যাদা দিয়েছে উল্লেখ করে মিছবাহুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪টি মসজিদ পরিচালিত হচ্ছে। সরকার খতিবদের সচিবের সম্মান-সুবিধা দিয়েছে। পেশ ইমামদের বেতন-ভাতা দিয়েছে উপ-সচিবের সমান। শুধু তাই নয় এখন পর্যন্ত কোন সরকারই ইমামদের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করেনি। আমরা এ বিষয়টি নিয়েও কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি আমরা (মহাজোট সরকার) অতিদ্রুত ইমামদের জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারবো।
বিবার্তা/বশির/মহসিন